হোর্হে লুইস বোর্হেসের গল্প: বালিপুস্তক

আলম খোরশেদআলম খোরশেদ
Published : 7 Nov 2021, 09:29 AM
Updated : 7 Nov 2021, 09:29 AM


আর্হেন্তিনার কবি ও কথাসাহিত্যিক হোর্হে লুইস বোর্হেসের জন্ম ১৮৯৯ সালে বুয়েনোস আইরেসে। বনেদি পরিবারে জন্ম নেয়া এই লেখক সারা পৃথিবীর পাঠকদের কাছে তার অতুলনীয় গল্পগুলোর জন্য পরিচিত। কথাসাহিত্যে মৌলিকতা ও সুক্ষ্ণ শিল্পকুশলতা–এই দুই অনন্য অর্জন তাকে লেখকদের লেখক হওয়ার কিংবদন্তিতে পরিণত করেছে। Book of sand গল্পটি লেখা হয়েছিল যখন তিনি পুরোপুরি দৃষ্টিশক্তিহীন। ১৯৮৬ সালে তিনি জেনেভায় মৃত্যুবরণ করেন। বি.স.
…………………….
মূল:হোর্হে লুইস বোর্হেস
ইংরেজি তর্জমা: নরমান থমাস ডি-জিওভান্নি
অনুবাদ: আলম খোরশেদ

…………………….

তোমার বালির দড়ি … জর্জ হার্বার্ট

অসীমসংখ্যক বিন্দুর সমাহারে তৈরি হয় একটি রেখা, অসীমসংখ্যক রেখার সমাহারে একটি তল; অসীমসংখ্যক তলের সমাহারে জন্ম নেয় একটি ঘনক; অসীমসংখ্যক ঘনকের ফলাফল একটি অতিঘনক… না এটা- এই জ্যামিতিক পদ্ধতি- প্রশ্নাতীতভাবেই আমার গল্প শুরুর শ্রেষ্ঠ উপায় হতে পারে না। আজকাল প্রতিটি বানিয়ে-তোলা গল্পের ক্ষেত্রেই স্বীকৃত প্রথা হচ্ছে তাকে সত্য বলে দাবি করা। আমারটি, যদিও, আদতেই সত্য।

বুয়েনোস আইরেসের বেলগ্রানো সড়কের একটি অ্যাপার্টমেন্ট বাড়ির চারতলায় আমি একলাই থাকি। কয়েকমাস পূর্বে সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলে আমার দরজায় একটা টোকা শুনতে পাই। দরজা খুলে দেখি একজন অচেনা ব্যক্তি দাঁড়ানো সেখানে। একজন দীর্ঘদেহী, বৈশিষ্ট্যহীন চেহারার মানুষ– অথবা হয়তো আমার ক্ষীণদৃষ্টির কারণেই তাঁকে এমনটি মনে হয়েছিল। ছাইরঙা পোশাকে, হাতে একখানা ছাইরঙা স্যুটকেস, তাঁর চোখেমুখে একটা গোবেচারা ভাব, অমি তক্ষুনি বুঝতে পারি, তিনি একজন বিদেশি। তাঁকে প্রথমে বুড়ো বলে মনে হয়েছিল, যদিও পরে বুঝতে পারি যে, আমি তাঁর পাতলা সোনালি চুলের দ্বারা প্রতারিত হয়েছিলাম, যা আসলে একপ্রকার স্ক্যান্ডিনাভিয়ান ধরনে প্রায় সাদাই ছিল। আমাদের আলাপচারিতা থেকে, যা প্রায় ঘণ্টাখানেকও স্থায়ী হয়নি, আমি জানতে পারি যে, তিনি আসলে অর্কনি থেকে এসেছেন।


আমি তাঁকে একটা চেয়ারের দিকে ইঙ্গিত করে ভেতরে আমন্ত্রণ করি। কথা শুরুর আগে তিনি খানিকক্ষণ চুপ করে থাকেন। এক ধরনের বিষাদ বিচ্ছুরিত হচ্ছিল তাঁর অবয়ব থেকে- এখন আমার শরীর থেকেও যেমনটি হচ্ছে।

"আমি বাইবেল বিক্রি করি," তিনি বলেন।

আমি অনেকটা জ্ঞান দেবার ভঙ্গিতে উত্তর দিই, "এই বাড়িতে একাধিক ইংরেজি বাইবেল আছে, জন উইক্লিফের প্রথমটাসহ।
আমার কাছে সিপ্রিয়ানো দে বালেরারটা আছে, লুথারেরটাও– সাহিত্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে যেটি আসলে নিকৃষ্টতম– এবং ভালগেটের একটা ল্যাটিন কপিও। আপনি দেখতেই পাচ্ছেন, আমার যা প্রয়োজন, সেটা ঠিক বাইবেল নয়।"

কয়েক মুহূর্ত নীরব থেকে তিনি বললেন, "আমি শুধু বাইবেলই বিক্রি করি না। আপনাকে একটা পবিত্র গ্রন্থ দেখাতে পারি যেটা আমি বিকানিরের শহরতলিতে পেয়েছি। এটা আপনাকে আকর্ষণ করতে পারে।"

তিনি স্যুটকেস খুলে বইটা বার করে টেবিলের ওপর রাখেন। সেটি একটি কাপড়ে মোড়া অক্টাভো সাইজের বই। কোনো সন্দেহ নেই সেটি বহু হাতফেরতা হয়ে এসেছে। সেটাকে পরীক্ষানিরীক্ষা করতে গিয়ে আমি তার অস্বাভাবিক ওজন দেখে বিস্মিত হই। বইটার পুস্তানিতে লেখা 'হলি রিট', এবং তার নিচে 'বোম্বে'।

"সম্ভবত উনিশ শতকের", আমি মন্তব্য করি।

"আমি জানি না," তিনি বলেন। "আমি কখনও বার করতে পারিনি।"

আমি এলোপাথাড়ি একটা পৃষ্ঠা থেকে বইটা খুলি। এর লিপি আমার কাছে পরিচিত মনে হয় না। বইয়ের যে-পাতাগুলো টুটাফাটা ও ছাপা ঝাপসা, সেগুলো বাইবেলের ধরনেই দুই কলামে বিন্যস্ত ছিল। লেখাগুলো খুবই ঠাসবুনটের এবং অনেকটা গির্জায় উচ্চারিত প্রশ্নোত্তর শ্লোকের মতো সাজানো ছিল। পৃষ্ঠাগুলোর ওপরের কোনায় আরবি সংখ্যা উৎকীর্ণ ছিল। আমি বাঁদিকের একটা পৃষ্ঠার কোনায় নম্বর লেখা দেখতে পাই (ধরা যাক) ৪০,৫১৪ এবং তার মুখোমুখি ডান-পৃষ্ঠার অপর কোনায় ৯৯৯। আমি পৃষ্ঠা ওল্টাই এবং তাতে আট সংখ্যার আরেকটা নম্বর লক্ষ করি। তাতে একটা ছোট্ট সচিত্রকরণ ছবিও ছিল, অভিধানগুলোতে যেরকম থাকে– অনেকটা স্কুলছাত্রের আনাড়ি হাতে কালি ও কলমে আঁকা একটি নোঙরের ছবির মতো।

ঠিক সেই মুহূর্তেই আগন্তুক বলে উঠলেন, "ছবিটাকে ভালো করে দেখে রাখুন। এটিকে আর দেখতে পাবেন না আপনি।"
আমি যে-পাতায় ছিলাম সেটা ভালোমতো খেয়াল করে বইটা বন্ধ করি। আবার তৎক্ষণাৎ খুলি। এবং পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা বৃথাই সেই নোঙরের ছবিটা খুঁজে ফিরি। 'এটাকে ভারতীয় কোনো ভাষায় লেখা একটি ধর্মগ্রন্থ বলে বোধ হচ্ছে। নয় কি?" আমি হতাশা লুকানোর জন্য বলি।

'না," তিনি জবাব। তারপর যেনবা কোনো গোপন কথা বলছেন এমনভাবে গলা নিচু করেন। "আমি বইটা সমতলের এক শহর থেকে একমুঠো টাকা আর একটা বাইবেলের বিনিময়ে সংগ্রহ করি। এর মালিক পড়তে জানত না। আমার সন্দেহ সে এই মহাগ্রন্থটিকে অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন কিছু একটা ভেবেছিল। সে ছিল নিচু জাতের মানুষ, যার ছায়া অন্য কোনো নিচু জাতের সদস্য ছাড়া আর কেউ মাড়ালে দূষিত হয়ে যেত। সে বলেছিল, এই বইয়ের নাম বালিপুস্তক কেননা বালির মতোই এর কোনো আদি কিংবা অন্ত নেই।

আগন্তুক আমাকে প্রথম পৃষ্ঠাটি বার করতে বলেন।

আমি বাম হাত বইয়ের মলাটের ওপর রেখে, প্রথম শূন্য পৃষ্ঠায় বুড়ো আঙুল রেখে বইটা খুলি। কিন্তু বৃথা চেষ্টা। যতবারই চেষ্টা করি ততবারই মলাট ও শূন্য পৃষ্ঠাটির মাঝে আরও কতগুলো পৃষ্ঠা দেখা দেয়। যেনবা সেগুলো বইয়ের ভেতর থেকেই জন্ম নিচ্ছে।

"এবার শেষ পৃষ্ঠাটি খুলুন।"

এবারও ব্যর্থ হই আমি। যেন বা আমার নয় অন্য কারও কণ্ঠে আমি কোনোমতে তোতলাতে তোতলাতে বলি, "এটা হতে পারে না।"
তখনও নিম্নকণ্ঠ, আগন্তুক বলেন, "এটা হতে পারে না, কিন্তু এটা তা-ই।" এই বইয়ের পৃষ্ঠাসংখ্যা অসীমের চেয়ে বেশিও নয়, কমও নয়। কোনোটাই এর প্রথম পৃষ্ঠাও নয়, শেষ পৃষ্ঠাও নয়। আমি জানি না পৃষ্ঠাগুলোর নম্বর কেন এরকম এলোমেলো। হয়তো বা এরই ইঙ্গিত দিতে যে, অসীম সংখ্যামালায় যেকোনো সংখ্যাই আসলে সম্ভব।"

তারপর, যেনবা তিনি সরবে চিন্তা করছেন এইভাবে বলেন, "স্থান যদি অসীম হয়ে থাকে তাহলে স্থানের যেকোনো বিন্দুতে আমরা অবস্থান করতে পারি। আবার কালও যদি অসীম হয়ে থাকে, তাহলে কালেরও যেকোনো বিন্দুতে হতে পারে আমাদের অবস্থান।"

তাঁর এইসব জল্পনাকল্পনা আমাকে বিরক্ত করে। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করি, "আপনি নিঃসন্দেহে একজন ধার্মিক মানুষ, না?"

"হ্যাঁ, আমি একজন প্রেস্বিটারিয়ান। আমার বিবেক পরিষ্কার। আমি নিশ্চিত, যখন স্থানীয়দের হাতে তাদের শয়তানি গ্রন্থের বিনিময়ে তুলে দিয়েছিলাম ঈশ্বরের শব্দরাজি, তখন তাদের মোটেও ঠকাইনি আমি ।"

আমি তাঁকে নিশ্চিত করি যে, তাঁর নিজেকে ভর্ৎসনা করার কিছু নেই এবং জানতে চাই তিনি পৃথিবীর এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন কি না। তিনি জবাবে বলেন, তিনি কয়েকদিনের মধ্যে তাঁর দেশে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। আর তখনই জানতে পারি যে, তিনি একজন স্কট, অর্কনি দ্বীপের বাসিন্দা। আমি তাঁকে জানাই, স্কটল্যান্ডের প্রতি আমার এক বিশেষ ব্যক্তিগত প্রীতি রয়েছে, স্টিভেনসন ও হিউমের প্রতি ভালোবাসার সুবাদে।

"মানে আপনি স্টিভেনসন ও রবি বার্ন্স এর কথা বলছেন।" তিনি শুধরে দেন। কথা বলতে বলতেই আমি সেই অসীম গ্রন্থখানা নেড়েচেড়ে দেখছিলাম।

ভান করা উদাসীনতায় আমি জিজ্ঞেস করি, "আপনি কি এই দুর্লভ বস্তুটি ব্রিটিশ ম্যুজিয়ামকে দিতে চান?"

"না, আমি এটা আপনাকেই দিতে চাইছি," তিনি বলেন এবং বইটার জন্য একটা চড়া দাম হাঁকেন।

আমি সবটুকু সত্যতার সঙ্গেই তাঁকে উত্তরে জানাই যে, এটা আমার সাধ্যের অতীত, এবং সেটা নিয়েই ভাবতে থাকি। তারপর দুয়েক মিনিটের মধ্যেই একটা পরিকল্পনা পেশ করি।
"একটা বদলা প্রস্তাব করি," আমি বলি। "আপনি এই বইটা পেয়েছেন একমুঠো টাকা ও এককপি বাইবেলের বিনিময়ে। আমি প্রস্তাব করেছি, আমার পেনসনের চেকের সমপরিমাণ টাকা, যেটা আমি সদ্যই সংগ্রহ করেছি, এবং একটি বিশেষ ব্ল্যাক-লেটার উইক্লিফের বাইবেল আপনাকে দেব। পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে এটা পেয়েছি আমি।"

"ব্ল্যাক-লেটার উইক্লিফ!" তিনি বিড়বিড় করেন।

আমি শোবার ঘর থেকে টাকা ও বইটি এনে দিই তাঁকে। তিনি একজন সত্যিকার গ্রন্থপ্রেমিকের আগ্রহ নিয়ে বইয়ের মলাট ও পৃষ্ঠাগুলো নেড়েচেড়ে দেখেন।

"ঠিক আছে, তা-ই সই।" তিনি বলেন।

তিনি কোনো দরকষাকষি করলেন না দেখে আমি একটু অবাকই হলাম। পরে আমার উপলব্ধি হয়েছিল, তিনি আসলে বইটা বিক্রি করবেন বলেই আমার ঘরে ঢুকেছিলেন। টাকাগুলো না গুনেই তিনি সরিয়ে রাখেন।

আমরা ভারত, অর্কনি দ্বীপ এবং নরওয়ের সেই রাজাদের কথা বলি যারা তাঁদেরকে শাসন করেছিলেন। তিনি যখন বিদায় নেন তখন রাত হয়ে গেছে। আমি এরপর আর তাঁকে দেখিনি কখনো, তাঁর নামটাও জানা হয়নি আমার।

আমি বালিপুস্তকখানি শেল্ফে উইক্লিফের শূন্যস্থানে রাখার কথা ভেবেছিলাম, তবে শেষ পর্যন্ত সহস্র এক আরব্য রজনী গ্রন্থমালার একটি ভাঙা সেটের পেছনে লুকিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিই। আমি বিছানায় যাই কিন্তু ঘুমাতে পারি না। ভোর তিনটা কি চারটার দিকে বাতি জ্বালিয়ে দিই। সেই অসম্ভব পুস্তকখানি নামিয়ে এনে তাঁর পাতা ওল্টাতে থাকি। কোনো এক পৃষ্ঠায় আমি একটি মুখোশের ছবি খোদিত দেখতে পাই। সেই পৃষ্ঠার ওপরের কোনায় একটি সংখ্যা লেখা ছিল, যার কথা আমার এখন আর মনে নেই, তবে সেটি নয়ের গুণীতকে উন্নীত ছিল।

আমি আমার এই ঐশ্বর্যকে কাউকেই দেখাই না। এর মালিকানার সৌভাগ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল এটি চুরি যাবার ভয়, তার ওপর সেটি আদতেই একটি অসীম গ্রন্থ কি না, সেই সন্দেহ। এই দুই যুগল দুর্ভাবনার ফলে আমার মনুষ্যভীতি তীব্রতর হয়ে ওঠে। আমার অল্প কিছু বন্ধুই অবশিষ্ট ছিল; আমি তাদের সঙ্গেও দেখাসাক্ষাৎ বন্ধ করে দিই। একটি বইয়ের হাতে বন্দি আমি ঘরের বাইরেই যাই না আর। এর শিথিল শিরদাঁড়া আর মলাটখানি অণুবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা পরীক্ষা করে কোনো প্রকার ছলচাতুরির সম্ভাবনা উড়িয়ে দিই আমি। ক্ষুদ্রাকৃতি সচিত্রকরণ ছবিগুলোও যাচাই করে দেখেছি তারা প্রতি দুই সহস্র পৃষ্ঠা পরপর আবির্ভূত হয়। আমি একটা নোটবইয়ে সেগুলোকে বর্ণানুক্রমিকভাবে তালিকাবদ্ধ করতে থাকি, যেটি পূর্ণ হয়ে উঠতে বেশি সময় লাগে না। কোনো একটি ছবিকেই কখনো পৃনরাবৃত্ত হতে দেখা যায় না। রাতের বেলায়, আমার অনিদ্রারোগের দ্বারা বরাদ্দকৃত সংক্ষিপ্ত নিদ্রাবিরতিতে আমি বইটিকে স্বপ্ন দেখি।

গ্রীষ্ম আসে ও যায় এবং আমি অনুভব করি, বইটি এক দানবীয় বস্তু। এই আমি, যে এই বইটিকে নিজের চোখে দেখছে, নিজের হাতে স্পর্শ করছে, সে-ই বা কম দানবীয় কীসে; আমার মধ্যে এমন এক ভাবনা চারিয়ে দিয়ে এটি কী এমন উপকার করল? আমার উপলব্ধি হয়, বইটি এক দুঃস্বপ্নের মতো, খুব অশ্লীল একটি বস্তু যা খোদ বাস্তবতাকেই আঘাত ও কলুষিত করেছে।

আমি আগুনের কথা ভাবি, কিন্তু আমার ভয় হয়, একটি অসীম গ্রন্থকে প্রজ্জ্বলনের কর্মটিও অসীমত্ব লাভ করে গোটা গ্রহকেই ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন করে দিতে পারে। কোথায় যেন আমি পড়েছিলাম, একটি গাছের পাতাকে লুকানোর শ্রেষ্ঠ জায়গা হলো অরণ্য। অবসর গ্রহণের আগে আমি মেহিকো সড়কে অবস্থিত আর্হেন্তিনার জাতীয় গ্রন্থাগারে কাজ করতাম, যাদের সংগ্রহে ছিল নয়শত সহস্র বই। আমি জানতাম প্রবেশপথের ডানদিক দিয়ে একটি ঘোরানো সিঁড়ি ভূগর্ভে নেমে গেছে যেখানে বই, পত্রিকা ও মানচিত্রসমূহ রাখা হতো। একদিন আমি সেখানে যাই, কর্তব্যরত কর্মচারীর নজর এড়িয়ে নিচে নেমে গিয়ে, দরজা থেকে কত দূরে কিংবা উচ্চতায় সেদিকে লক্ষ না করেই, বালিপুস্তকখানিকে ছুঁড়ে ফেলে হারিয়ে যেতে দিই সেই ভূগর্ভস্থ স্যাঁতস্যাঁতে শেল্ফগুলোর কোনো একটির মাঝখানে।