কিন্তু আত্মার মাঝে বসবাসকারী কি এক অজানা সম্মোহন মানুষকে ভোগাচ্ছে সেই সৃষ্টির শুরু থেকে। কতভাবেই সে চেষ্টা করে সমাজের চোখে কাঙ্ক্ষিত হতে, সাফল্যের চূড়ায় আরোহণ করে সাময়িক কিছুক্ষণের জন্য হলেও আনন্দ অন্বেষণ করতে।
Published : 11 Oct 2023, 08:16 PM
মনে করুন আপনার বেশ পরিচিত, প্রিয় একজনের কথা বলছি (প্রিয়জন কিনা এ বিষয়ে অবশ্য কিছুটা সন্দিহান) – দিনরাত যিনি মুখ গুঁজে অফিসে প্রয়োজনীয় কাজ বিনা বাক্যব্যয়ে সম্পন্ন করছেন, বছরের পর বছর নিম্ন বেতনভুক্ত কেরানী হিসেবে কর্তব্য পালন করে নিভৃতেই অবসর গ্রহণ করবেন এবং সামাজিক, লৌকিক স্বার্থের জন্য প্রয়োজনীয় না হওয়ার দরুণ জীবনাবসানের কিছুদিন পরেই বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাবেন। যার একঘেয়ে জীবন উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং বাস্তববাদী জগতের প্রতিযোগিতাপূর্ণ কোলাহলের অন্তরালেই থাকে। এমন ছাপোষা কেরানীদের জীবনযাপন এবং সামাজিক বাস্তবতা যেসকল সাহিত্যকর্মকে প্রবলভাবে অনুপ্রাণিত করেছে এরকম কিছু সাহিত্যকর্ম নিয়েই এই আলোচনাটি এগিয়ে যাবে। এই সূত্রে আমরা বিশ্বসাহিত্যের প্রধান তিনটি রচনাকে তলব করবো।
রাশিয়ান সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল ফিওদর দস্তইয়েফ্স্কির দ্বিতীয় উপন্যাস The Double-এ আমরা দেখি একজন সরকারি নবম স্কেলের কর্মকর্তা গোয়ালাদকিনকে। অতিশয় নির্ভেজাল খাঁটি মানুষটি সমাজের চোখে অচ্ছুৎ। সে পারেনা সকলের মনোরঞ্জন করে সমাজের উচ্চপদস্থ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গকে তোয়াজ করে চলতে, অর্থাৎ তেলা মাথায় আরো তেল দিয়ে নিজের শুষ্ক চুলেও খানিকটা তৈলরস সঞ্চার করে নিতে। একাকী, নিভৃতচারী জীবনে তার নিত্যসঙ্গী নানা প্রকার মানসিক টানাপোড়েন। যা দূর করতে মানসিক চিকিৎসক তাকে পরামর্শ দেন যেকোন প্রকার স্থূল আনন্দের মাধ্যমে হলেও নিজের মানসিক স্বাস্থ্যকে সবল রাখতে। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা খাদের আরো কিনারায় এনে তাকে দাঁড় করায়, এর ফলে সে নিজেকে সমাজের উচ্চস্তরে একজন অপাংক্তেয় “উদাহরণ” হিসাবে আবিষ্কার করে। অসম্ভব এই মানসিক চাপ তার মনের অতল অন্ধকার থেকে বয়ে নিয়ে আসে হাজার বছর ধরে মনুষ্যত্বের ভার বহন করে চলা প্রবল ভীতি এবং সংশয়ের বাস্তবতাকে। সে চাক্ষুষ করে তার অনুরূপ কিন্তু উন্নততর একজন “গোয়ালাদকিন”কে। যে তাঁর সাথে একই পৃথিবীর আলো হাওয়ায় জীবনযাপন করে, কিন্তু উন্নতর সত্তাটি প্রকৃত গোয়ালাদকিনের অস্তিত্বকেই হুমকির মুখে ফেলে দেয়।
গোয়ালাদকিন সদাশয়, ভীতু, দুর্বল, ভাল মানুষ। পৃথিবীর সমস্ত মানুষের কাছেই সে নিতান্তই নিরীহ, শুধু তাঁর একমাত্র চাকর যার ভরণপোষণ তার উপর – সেই পেত্রুস্কা তাঁর কিছুটা বলিষ্ঠ স্বরূপ দেখার “সৌভাগ্য” অর্জন করেছে(!)। সমাজের সাপেক্ষে নিতান্তই ছাপোষা কেরানী সে, দরিদ্র চাকর পেত্রুস্কা বেচারার উপরেই সমস্ত দিনের সঞ্চিত রাগ, অপ্রাপ্তির বিষবাষ্প উজাড় করে দিয়ে স্বস্তি লাভ করে। যদিও নিজেকে এই ক্ষুদ্রতা সে বুঝতে দেয় না। তথাকথিত সামাজিকতা ও লৌকিকতা রক্ষার অভাব পূরণ করে নেয় বইয়ে মুখ গুঁজেবাস্তবের ক্ষুদ্রতাকে কেতাবি দুনিয়ার অলীক কল্পনা দিয়ে আড়াল করে রাখার মাধ্যমে। সত্যবাদী গোয়ালাদকিন সমাজের আর দশটা মানুষের মত মুখোশধারী ভেক ধরতে না পারাকে নিজের একটা চূড়ান্ত ভালোমানুষি বলে আখ্যায়িত করে – প্রকৃতপক্ষে যা তাঁর ভীরুতা এবং দুর্বল মনেরই বহিঃপ্রকাশ। সচেতনভাবে এসব দুর্বলতাগুলো নানা কৃত্রিম সান্ত্বনার মাধ্যমে অবদমিত হয়ে থাকলেও অবচেতনে সেগুলো যে কতটা বিবমিষা জাগিয়ে তুলেছিল তার নিজের প্রতি, সেটি নিজের অনুরূপ এবং উন্নতর দ্বিতীয় অস্তিত্ব “গোয়ালাদকিন”-এর আবির্ভাবের মাধ্যমে পাঠকের নিকট পরিষ্কার হয়ে ওঠে। মানসিক প্রবল ঝড়ের সম্মুখীন হয়েই এই নতুন গোয়ালাদকিনের দেখা পায় উপন্যাসের নায়ক।
প্রথমদিকে কিছুটা ভীতি সঞ্চারিত হলেও পরবর্তীতে নিজের একান্ত দুঃখ বা হৃদয়ের গভীরতম গোপনীয় বিষয়গুলো নতুন এই মানুষটির সাথে ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে বেশ একটি বন্ধুসুলভ সৌহার্দ্য গড়ে ওঠে তার সাথে। কিন্তু ক্রমেই তার এই মোহভঙ্গ হতে শুরু করে। কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে এই নতুন সংস্করণ তাকে পশ্চাতে রেখে নিজেকে অগ্রবর্তী করে রাখে। কর্মক্ষেত্রে এমনিতেই যাকে প্রচণ্ড প্রতিকূল পরিবেশের সম্মুখীন হতে হয় অপরিণত এবং অনুপযোগী মানসিকতার জন্য, নতুন গোয়ালাদকিনের এই প্রতিটি পদক্ষেপেই তাঁকে টপকে নিজেই সাফল্যের মুকুট ছিনিয়ে নেওয়া এবং তাকে উপহাসের পাত্র করে তোলা যেন বিভীষিকা হয়ে হাজির হয় তার জীবনে। দ্বিতীয় গোয়ালাদকিন প্রচণ্ড ধূর্ত, চতুর। নানা ফন্দি ফিকির অবলম্বন করে ঠিকই সমাজের চোখে নিজের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য সে ছিনিয়ে নেয়, যেখানে আমাদের সৎ, নিরীহ গোয়ালাদকিন প্রতি পদক্ষেপে পরাজয়ের শোচনীয় গহ্বরে তলিয়ে যেতে থাকে। পরিস্থিতির এই আবহ প্রকৃতপক্ষে গোয়ালাদকিনের নিজের প্রতি অবচেতন উপহাসেরই প্রতীকী রূপ। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে এই অন্যায্য পরাজয় তাঁকে রসাতলের দিকে ধাবিত করে। পরিশেষে নিঃসঙ্গ, অসহায় এবং সর্বতোভাবে পরাজিত গোয়ালাদকিনের অন্তিম পরিণতি ঘটে মানসিক হাসপাতালে ঠাঁই পাওয়ার মাধ্যমে যেখানে তাঁর দ্বিতীয় উন্নততর সত্তা ঠিকই জগতের রূপ রস গন্ধভরা উৎকর্ষের একটা আস্ত “জীবন” কাটানোর স্বর্ণালী সুযোগ পায়।
সমস্ত উপন্যাসটিই প্রচণ্ড বিষন্ন, করুণ, কিছুটা জাদুবাস্তবতার মিশেলে চমকপ্রদ।জগতেরঅনিবার্য নিয়ম যা চিরকাল ধরে সভ্যতাজুড়ে বহমান আছে--“সমগ্র সৃষ্টি এবং বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড এক অনির্বচনীয় পরিণতিতে আবদ্ধ এবং শত কষ্ট ভোগ, প্রার্থনা বা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টাও অমোঘ সেই পরিণতিকে পরিবর্তিত করতে পারবে না – “সততা” কখনোই কাউকে কোন সুফল পেতে সাহায্য করে না বরং যোগ্যতা, সুযোগ এবং ভাগ্যই একজন মানুষকে তথাকথিত “সাফল্য “ অর্জন করতে সাহায্য করে” – সেটিই এই সাহিত্যকর্মে নিপুণভাবে প্রকাশিত হয়েছে। অস্তিত্বের সংঘাত বড়ই কৌশলী জিনিস। মানুষ সারাজীবনেও নিজের প্রকৃত স্বরূপ চিনে উঠতে পারে না। প্রত্যেকটি পরিস্থিতিতে মানুষ ভিন্নআচরণ করে এবং চিন্তা করে। মজার বিষয় হলো একেক পরিস্থিতিতে একেকরকম চিন্তা তো সে করেই, উপরন্তু একটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতেই সে যা চিন্তা করে সেই অনুযায়ী আচরণই করবে –সেটিও নিশ্চিত বলা যায় না। জীবনজুড়ে মানুষটিকে নিজে বা তাঁর সংস্পর্শে আসা সকল মানুষ যেভাবে চিনে এসেছে – জীবনের সায়াহ্নে এসে এমনকি শেষ মুহূর্তেও সেই ধারণা আমূল পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। গোয়ালাদকিন সমস্ত জীবনজুড়ে ভেবে এসেছে সে নিরীহ, খাঁটি , সৎ মানুষ এবং শত ব্যর্থতা সত্ত্বেও এটাই তাঁর চালিকাশক্তি হিসাবে কাজ করেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষেতার নিজের প্রতি বিবমিষার প্রকৃত স্বরূপ প্রকাশিত হয়েছে মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ হিসেবে একজন উন্নততর দ্বিতীয় গোয়ালাদকিনের আবির্ভাবের মাধ্যমে। যে প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের চতুর বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে সাফল্যের পথে অবশ্যম্ভাবী পদচারণ করেছে। বর্তমান সমাজেও বিষয়টি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। মানুষ পারিবারিক বা সামাজিক চাহিদা যথাযথভাবে পূরণের লক্ষ্যে নিজের বাস্তব সত্তাকেই হারিয়ে ফেলতে বসেছে। প্রকৃত সত্তার প্রাঞ্জলতাকে আড়াল করে এই কুৎসিত পৃথিবীর দুরূহ কলুষতাকেই সত্তার প্রকট বৈশিষ্ট্য রূপে প্রতিষ্ঠিত করে নিচ্ছে। এখানে একটি বিষয় নিয়েআলোকপাত করা প্রয়োজন– উপন্যাসে গোয়ালাদকিন স্ত্রী হিসাবে কেমন নারীকে গ্রহণ করতে ইচ্ছুক সেই বিষয়েও একটি ধারণা দেওয়া হয়। অবশ্য পাঠকমাত্রই আন্দাজ করতে পারেন তাঁর চাহিদা সম্বন্ধে – একজন আজ্ঞাবহ স্ত্রী চায় সে। এমন একজন নারী যিনি প্রতি পদক্ষেপেই স্বামীর কাছে নত হয়ে থাকবেন। উক্ত ধারণার মাধ্যমে গোয়ালাদকিনের মনস্তত্ত্বকে পাঠক আরো নিবিড়ভাবে অনুধাবন করেন। যদিও উপন্যাসে সফল এবং ব্যর্থ উভয় গোয়ালাদকিনের শারীরিক বৈশিষ্ট্যকে সদৃশ রূপেই কল্পনা করা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে বিষয়টি ভিন্নই হয়। একজন সহজ, সরল,খাঁটি -- ফলশ্রুতিতে “ব্যর্থ” মানুষের সাথে চতুর, ধূর্ত, সুযোগসন্ধানী “ সফল” ব্যক্তির শারীরিক বৈশিষ্ট্যেকিছু ভিন্নতা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হয় যা সমাজের উঁচু তলার ব্যক্তিবর্গের সাথেনিচু তলায় বসবাসরত মানুষের বাহ্যিক পার্থক্য থেকেই অনুমান করা যায়।
ধারণা করা হয় দস্তইয়েফস্কি রচিত The double উপন্যাসিকাটি অতি বিখ্যাত যে সাহিত্যকর্মকে অনুপ্রাণিত করেছে, সেটি হলো ফ্রানজ কাফকা রচিত The Metamorphosis। উভয় সাহিত্যকর্মের প্রথম বাক্যটি শুরু হয় সেই চিরাচরিত নিদ্রা থেকে জাগরণে এক অপরিচিত বাস্তবতার পথে যাত্রা করার মাধ্যমে। গ্রেগর সামসা যেদিন ঘুম থেকে উঠে নিজেকে বিছানায় দানবীয় একটি পতঙ্গ রূপে আবিষ্কার করে, তখন এই পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে তার বেশ বেগ পেতে হয়। মধ্যবিত্ত পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হিসাবে প্রতিদিনের যথাযথ কর্তব্য পালনের সামান্যতম বিচ্যুতি ঘটার আশঙ্কাই তাঁর মনকে সর্বোচ্চ অধিকার করে রাখে। পরিবারের প্রতিটি মানুষ চেয়ে আছে তাঁরই মুখ পানে, নিজের সকল আশা আকাঙ্ক্ষা,শখ বিসর্জন দিয়ে সে সামাজিক এবং পারিবারিক কর্তব্য পালনের মহান ব্রত সাধন করছে.. নিজের শারীরিক বা মানসিক অস্বস্তি কি তার কর্তব্যে অবহেলার চরম অনুতাপকে আড়াল করতে পারে? কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো দিনের পর দিন তাঁর এই অপরিবর্তিনীয় শোচনীয় অবস্থা তাঁর এতদিনের সাধের পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যের যাদের একটু সুখ অনুভবের প্রচেষ্টায় সে দিনরাত নিজের যৌবনকে ক্ষয় করেছে, তাদের শান্তি বা আয়েসের প্রধান অন্তরায় হয়ে উঠতে থাকলো। কর্তৃত্বপরায়ণ পিতার(উল্লেখ্য, পিতার প্রতি কাফকার নেতিবাচক মনোভাব সম্বন্ধে পাঠকমাত্রই অবগত) বিদ্বেষমূলক আচরণ, পিতার প্রবল ব্যক্তিত্বের আভায় কুঁকড়ে থাকা মায়ের খড়কুটো ন্যায় আচরণ, আদরের বোনের অংশত ভালোবাসা মিশ্রিতরূঢ় আচরণ গ্রেগরকে চূড়ান্ত ব্যথিত করে। প্রথমদিকে তার প্রতি কিছুটা করুণা সংবলিত ইতিবাচক মনোভাব বিরাজমান থাকলেও ক্রমেই যখন তার জন্য পরিবারের প্রত্যেককে মানসিক, আর্থিক এবং সামাজিক হেনস্থার শিকার হতে হলো, তখন পরিবারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সদস্যের প্রতি সকলের ঘৃণা, ভয় এবং বিদ্বেষের অনুভূতি দিনদিন পুঞ্জীভূত হতে লাগলো। পরিস্থিতি এমন হয়ে উঠলো যে নিজের অতি আপনজনরাই গ্রেগরের অন্তর্ধান কামনা করতে লাগলো আর একজন জীবিত প্রাণীর স্থায়ী অন্তর্ধানের একটি মাত্র পথই খোলা থাকে, তা হল মৃত্যু। সে যখন উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় যে তাঁর সার্বিক উপস্থিতিই পরিবারের সদস্যদের কাছে চরম পীড়াদায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে --সে নিজের অস্তিত্বকে বিলীন হয়ে যেতে দেয় খাদ্য গ্রহণ হতে বিরত থাকার মাধ্যমে। খাদ্য হিসাবে সে যে খুব সুষম কিছু গ্রহণ করতো এমন অবশ্য নয়। এতকাল অর্থ উপার্জন সুনিশ্চিতের মাধ্যমে পরিবারের সকলের স্বাচ্ছন্দ্য বিধানের দায়িত্ব ছিল যার কাঁধে, পোকায় পরিণত হওয়ার পর তার ভাগ্যেই জুটত সকলের উচ্ছিষ্ট খাবার। মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যরা তার জৈবিক অস্তিত্বের বিভীষিকা থেকে মুক্ত হওয়াকে উদযাপন করে বেড়াতে যাওয়ার মাধ্যমে – তাঁদের অপর পরিণত সন্তান গ্রেটার উপযুক্ত স্বামী আনয়নের স্বপ্নে বিভোর হয়ে। হয়তো তাঁদের বিভীষিকাসম পুত্রসন্তানটির শূন্যস্থানগ্রেটার স্বামী কিছুটা পূরণ করতে পারবে। কারণ পুত্রের প্রতি পিতা মাতার স্নেহ, বোনের আদর কিংবা স্ত্রীর ভালোবাসা এতই ভঙ্গুর যে স্বার্থ বিনাশের সমূহ সম্ভাবনা দেখা দিলে তা সাজানো তাসের ঘরের মতই ভেঙে পড়ে।
কাফকার Metamorphosis তাঁর জীবিতকালে প্রকাশিত একমাত্র উপন্যাস। সাহিত্যকর্মটি সম্বন্ধে অসংখ্য মতবাদ এবং ব্যাখ্যা রয়েছে। কারও কাছে এটি শুধুই একজনের স্বপ্নচালিত কিছু এলোমেলো ভাবনার দুঃস্বাপ্নিক প্রকাশ মাত্র। নারীবাদী ভাবধারা সংবলিত একটি ধারণাও প্রচলিত আছে যে এখানে গ্রেটাই হলো প্রকৃত অধিবক্তা – তার জীবনকাহিনীই গ্রেগরের দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রকাশ পেয়েছে। কেউ আবার মার্কসবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রেগরের রূপান্তরকে ব্যাখ্যা করেন। যদি একান্ত নিজস্ব মতামত প্রদান করি তাহলে বলব যে এ হলো সমাজের কিছুটা নিম্নস্তরে বিদ্যমান নিরীহ, গোবেচারা, শান্তসমাহিত, সাধারণ মানুষের গল্প। একজন মানুষ সমগ্র জীবনজুড়েই পরিবারের সকলের আর্থিক এবং সার্বিক স্বাচ্ছন্দ্য আনয়নের প্রচেষ্টায় অবিচল থাকে। কিন্তু দিনশেষে তাঁর নিঃসঙ্গ জীবনের সবটুকু উপযোগিতা নিহিত থাকে অপরের স্বার্থ রক্ষার মধ্যেই। যখন নিজের সেই উপযোগিতাটুকু সকলের সামনে সে আর যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে পারে না, তখনই তাঁর তুচ্ছ জীবনের অন্তঃসারশূন্য নিরাকার আদলটি স্বচ্ছভাবে প্রকাশ্য হয়ে ওঠে। ভালোবাসা, স্নেহ কিংবা সমস্ত ইতিবাচক সুন্দর অনুভূতি—যেগুলো মানবসভ্যতার প্রধান ভিত্তি “পরিবার” গড়ে তোলার প্রধান চালিকাশক্তি, সেগুলোই স্বার্থরক্ষার কঠিন বাস্তবের কাছে কতটা ভঙ্গুর, তাই এই সাহিত্যকর্মে নিষ্ঠুরভাবে প্রকাশ পেয়েছে। উপন্যাসে কাফকার নিস্পৃহ অথচ মর্মস্পর্শী বর্ণনাভঙ্গি চমকপ্রদ। কাফকা তাঁর মেটামরফসিস লেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন দস্তেভস্কির the double থেকে , ঠিক তেমনি দস্তেভস্কিও তাঁর উপন্যাসটি লেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন যে সাহিত্যকর্ম থেকে, সেটি সম্বন্ধে পাঠককে অবহিত করতে চাই।
শীতের দেশে মানুষকে উষ্ণতা প্রদানের প্রধানতম পোশাক হলো ওভারকোট। একটি ওভারকোট বিভিন্ন রকম কাঁচামাল দিয়ে গঠিত হতে পারে, গুণমানভেদে ওভারকোট তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থও ভিন্ন হতে পারে। গুণমানভেদে ভিন্ন ওভারকোট সমাজের ভিন্ন আর্থসামাজিক স্তরে বসবাসরত মানুষের জীবনযাত্রার ভিন্নতাকে যে কিভাবে চোখে আঙ্গুল দিয়ে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে, সেই বিষয়টি সাহিত্যকর্মে তুলে এনেছিলেন আধুনিক রাশিয়ান সাহিত্যের পথিকৃৎ নিকোলাই গোগোল। দস্তইয়েফ্স্কি নিজেই বলেছিলেন যে আধুনিক রাশিয়ান সাহিত্যের সমস্তটাই এসেছে নিকোলাই গোগোলের Overcoat-এর পকেট থেকে। Overcoat গল্পটি প্রধানত আকাকি আকিওভিচকে নিয়ে যিনি তৎকালীন জারতন্ত্র অধ্যুষিত রাশিয়ার আপামর জনসাধারণের প্রতিনিধি। নিঃসঙ্গ, একঘেয়ে, কাজপাগল এবং নিরীহ মানুষটি ছাপোষা বলতে যা বোঝায়, ঠিক তেমন। সমাজের তথাকথিত উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ কোলাহলের ভিড়ে আদিম যুগ হতে পথের ধারে দন্ডায়মান মহীরুহের মতই যে অবশ্যম্ভাবী অস্তিত্ব নিয়ে বিদ্যমান। অবসর সময়েও অফিসের যাবতীয় প্রয়োজনীয় দস্তাবেজ হুবহু নকল করার মাধ্যমেই যে প্রশান্তি অনুভব করে। ক্ষুদ্র বেতনধারী মানুষটির জীবন নিস্তরঙ্গ পুকুরের স্বচ্ছ জলের মত, আবর্জনা সম্বলিত ঢেউ যেখানে ন্যূনতম আন্দোলন সৃষ্টি করতে পারে না। তার শান্ত একঘেয়ে জীবনে খানিকটা উত্তেজনার সঞ্চার করে একটিঅভিজাত এবং আরামদায়ক ওভারকোট তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষী বাসনা।
পুরনো, শতচ্ছিন্ন, জরাজীর্ণ ওভারকোটটি বদলে একটি নতুন, অভিজাত, দামী ওভারকোট সে তৈরি করবে – এই স্বপ্ন তাঁকে বেশ কিছুদিন অধীর করে রাখে। এতদিন তার জীবন ছিল লক্ষ্যহীন। কালের অমোঘ নিয়মেই জীবনের প্রতিটি অনুক্ষণ ক্ষয় হয়ে মহাকালের বুকে বিলীন হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু নতুন ওভারকোটটি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় এবং একইসাথে ওভারকোটটির সৌন্দর্য এবং উপযোগিতা বৃদ্ধি করাকে উপলক্ষ্য করে তার একেকটি দিন প্রবল উত্তেজনায় অতিবাহিত হতে শুরু করলো। অবশেষে শত অপেক্ষার প্রহরের পর কাঙ্ক্ষিত ওভারকোটটি তাঁর হস্তগত হয়। এতকাল যার একাকী জীবন অন্তরালেই সমাপিত হচ্ছিল, এই অভাবনীয় সাফল্য(!) অর্জন করায় তাঁর বন্ধুমহলে বেশ খানিকটা সমাদর সে পায়। কিন্তু বিধি তো সর্বদা দুর্ভাগা মানুষের জন্য বামেই অবস্থান করে – আকাকির সাধের ওভারকোটটি প্রাপ্তির অব্যবহিত দুই রজনী পরেই তস্করের লাঞ্ছনায় অন্তর্হিত হলো। সেটি পুনরায় প্রাপ্তির আশায় সমাজের উচ্চস্তরের নানা মহলে ধর্ণা দেওয়ার পরেওসুবিচার পাওয়ার সামান্যতম সম্ভবনাও তার দৃষ্টিগোচর হয় না। অবশেষে সমাজের অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত এবং প্রভাবশালী একজন ব্যক্তির দ্বারস্থ হয়ে শেষ খড়কুটোটি আঁকড়ে ধরার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয় তার। প্রচেষ্টাটি আক্ষরিক অর্থেই প্রাণান্তকর ছিল, কেননা এরপরেই আকাকির করুণ মৃত্যু ঘটে। মৃত্যুর পর অবশ্য “প্রেতাত্মা” হিসাবে সে পারিপার্শ্বিক পরিমণ্ডলে একটি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে, ফলশ্রতিতে ওভারকোট সে ঠিকই ফেরত পায় সেই প্রভাবশালী লোকটির কাছে থেকে, যাঁর দাম্ভিক এবং ফাঁপা অহংবোধের কারণেই মানসিক চাপের সম্মুখীন হয়ে তার মৃত্যু ঘটেছে। গল্পটি গোগোলের বিদ্রূপাত্মক অথচ হৃদয়গ্রাহী লেখনীতে আপন মহিমায় ভাস্বর।
নিৎসে-এর দর্শনানুযায়ী “ ঈশ্বর মৃত, তাই জীবন এবং জাগতিক সকল অর্থই মানুষকে অন্য কোথাও থেকে খুঁজে নিতে হবে”। শপেনহাওয়ার এবং কিয়েকগার্ড-এর মতবাদ অনুযায়ী “মানবজাতি যে ক্লেশ ভোগ করে, তা সহজাত প্রবৃত্তির ন্যায়, এ থেকে তার কোন নিস্তার নেই।”। যদিও ধারণা করা হয় যে মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব এবং এই ধারণা পোষনের মাধ্যমে নিজের তুচ্ছতাকে অন্তরালে রেখে সে বিকট পরিতুষ্টি লাভ করে, কিন্তু বাস্তবিক অর্থে মানুষ অন্য যেকোন প্রাণীর মতই। মানবসমাজ অনেকটাই পশুদের সামাজিক ব্যবস্থার মত, যেখানে সর্বদা নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে হয় টিকে থাকার জন্য। পুরুষ এবং নারী উভয়েরই নির্দিষ্ট কিছু সমাজ নির্ধারিত উপযোগিতা আছে, সেগুলো সর্বদা তাদেরকে পূরণ করে যেতে হয় শুধুমাত্রই টিকে থাকার জন্য। এই উপযোগিতাওবিভিন্ন আর্থসামাজিক অবস্থার ভেদে ভিন্ন হয়। আবহমানকাল ধরেই মানুষ উন্নততর জীবনযাত্রার পেছনে ছুটে চলেছে। কিন্তু জীবন যে আসলে কতটা অর্থহীন এবং অন্তঃসারশূন্য, সেটা যদি প্রতি মুহূর্তে মানুষ অনুভব করতে পারতো, তাহলে এই সকল মহোৎসবের ফাঁপা সুর ক্রমেই বেসুরো হয়ে পড়ত। কত কষ্ট সে করেসামাজিক বা পারিবারিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য, কিন্তু দিনশেষে মানুষের মত একা আর কেউ নেই। কালের অমোঘ নিয়তি এই যে যতোই প্রচেষ্টা, আয়াস সাধিত হোক না কেন, ভাগ্যের সুঠাম বাঁধুনি যদি তার প্রতি সদয় না হয়, সে সাফল্য লাভ করতে পারবে না। সেই ভাগ্যও তৈরি হয় নানা পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি দ্বারা। “ অর্থ”—বিনিময়পদ্ধতির যে মহার্ঘ্য মানুষকে জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল বস্তুগত চাহিদার জোগান দেয় (কখনো সখনো অবস্তুগত চাহিদারও কেননা অর্থ ছাড়া বর্তমানে অবস্তুগত চাহিদার সরবরাহও কঠিন), সেই অর্থ বণ্টন প্রক্রিয়াই মানুষের সম্পূর্ণ জীবনধারাকে কতটা জটিলভাবে নিয়ন্ত্রন করে, এমনকি মানুষের মধ্যকার সম্পর্ককেও কত নিষ্ঠুরভাবে আক্রমণ করতে পারে, সে বিষয়গুলোই দস্তইয়েফ্স্কি, কাফকা বা গোগোলের এই সাহিত্যকর্মগুলোতে খুব নির্মম ভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
শিল্পবিপ্লবের পর পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় বিদ্যমান সবচেয়ে পরিহাসের বিষয় হলো, মানুষের এখন কোন ভিন্ন সত্তা নেই। প্রতিটি মানুষই কিন্তু অভিনব, মুখাবয়ব থেকে শুরু করে মানসিকতা এবং আচার আচরণ সবকিছুই ভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে ভিন্ন। কিন্তু পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় সমস্ত মানুষ এখন একটি অভিন্ন সত্তা। সবার জীবনের লক্ষ্য, সুখ দুঃখের প্রতিটি অনুভূতি কিংবা জীবনের পথে প্রতিটি পদক্ষেপ – কোনোকিছুই আর তাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেই। সবই নির্ধারিত হয়ে থাকে সমাজ এবং মানুষেরই তৈরি কিছু অলিখিত নিয়মকানুন দ্বারা। তথাকথিত সাফল্য কিংবা ব্যর্থতার সমীকরণটিও এখন সমাজনির্ধারিত, নিজের হৃদয়কে পঙ্কিল করে হলেও সেই সাফল্যের পথ থেকে বিচ্যুত হতে কেউ সাহস করে না। এরই মাঝে কিছু মানুষ থাকে, যাঁরা নিজেদের হৃদয়তন্ত্রীতে বেজে ওঠা সুরকে অনুভব করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী জীবনকে যাপন করতে চায়। কিন্তু অদৃশ্য শৃঙ্খলের বশবর্তী হয়ে তারা ব্যর্থ হয় এবং নিজেদের সমাজবিচ্ছিন্ন ভাবতে শুরু করে। উচ্চবিত্ত আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে অবস্থানরত হলে হয়তো কিছুটা সম্ভব হয় তাদের পক্ষে হৃদয়ের ধ্বনিকে উপেক্ষা না করে তাকে অভিবাদন জানানো, কিন্তু সমাজের নিচু স্তরে বসবাসরত মানুষের জন্য সেটি একপ্রকার অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তারা সারাজীবন হৃদয়ের ধ্বনিকে উপেক্ষা করে ক্রমে একজন তুচ্ছ “ছাপোষা কেরানী”তে পরিণত হয়, যার হিন্ময় হৃদয়ের আলোকরশ্মি পৃথিবীকে তো আলোকিত করতে পারেই নন, বরং সমাজের তীক্ষ্ণ, কর্কশ কিরণের সামনে সমাপতিত হয়ে নিজের মাধুর্যকেই হারিয়ে ফেলে। ফলশ্রুতিতে তাদের নিজেদের জীবনই আলোর অভাবে তিমিরাচ্ছন্ন রসাতলে পতিত হয়। এইসকল মানুষের জীবনই প্রতিফলিত হয়েছে উক্ত সাহিত্যকর্মগুলোয়, আরো প্রকাশিত হয়েছে উচ্চবিত্ত প্রভাবশালী লোকেদের ফাঁপা দাম্ভিকতা, ধূর্ত অহংবোধ, অন্তঃসারশূন্য চাটুকারিতা এবং মুখোশধারী আন্তরিকতার ভেক।
আইন সকলের জন্য সমান – প্রত্যেক দেশের সংবিধানে এই বিবৃতি উল্লেখিত থাকলেও প্রায় সকল ক্ষেত্রেই এর বিপরীত বিধানই পরিলক্ষিত হয়। কলুষিত এই বাস্তবতা মানুষকে তার মনুষত্ব্যকেই অস্বীকৃতি জানাতে বাধ্য করে। কখনো নিজেকে পোকার সাথে একাত্ম করে কিংবা কখনো নিজের অনুরূপ সত্তার আবির্ভাব ঘটিয়ে নিজের প্রতি চরম ঘৃনার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় সে, কখনো একটি ওভারকোটের অধিকার হারানোর ফলে জীবনের প্রয়োজনীয়তাই হারিয়ে ফেলতে বসে। মানুষের চেতনাই তার সবচেয়ে বড় শত্রু। চেতনাহীন হয়ে পশুর মত গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে গিয়ে একটা গোটা জীবন কিন্তু পার্থিব ভোগবিলাসে কিংবা ক্ষুদ্র আনন্দে উজাড় হয়েই কাটিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু আত্মার মাঝে বসবাসকারী কি এক অজানা সম্মোহন মানুষকে ভোগাচ্ছে সেই সৃষ্টির শুরু থেকে। কতভাবেইসে চেষ্টা করে সমাজের চোখে কাঙ্ক্ষিত হতে, সাফল্যের চূড়ায় আরোহণ করে সাময়িক কিছুক্ষণের জন্য হলেও আনন্দ অন্বেষণ করতে। কিন্তু অক্ষম মানুষ গোটা জীবন যেন প্রবল আক্ষেপে অমানুষিকবঞ্চনায়ই অতিবাহিত করে। ভালোবাসা, অর্থ, সাফল্য, খ্যাতি, আনন্দ – সবকিছুই অসঙ্গায়িত, আপেক্ষিক।
পরিশেষে বলব, সমস্ত জীবজগতের একটি অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অস্তিত্বের অধিকারী হয়ে মানবজন্ম লাভ করা প্রবল হতাশারই যেন। কিন্তু জীবনকে অর্থহীন ভেবে নিয়েই যদি আপন করে নেওয়া যায়, তাহলে সেটিই শান্তিলাভের প্রকৃত চাবিকাঠি। মহাকালের অনন্ত বিস্তারে একজন মানুষের জীবনকাল কতটা ক্ষুদ্র, সেটি মাথায় রেখে জীবনের সকল ক্ষুদ্রতাকে ফুৎকারে উড়িয়ে বৃহত্তর উৎকর্ষ সাধনে যদি মানুষ নিমজ্জিত থাকে, তাহলেই এই অসার জীবনের উদ্ভাসিত সত্তা মহাকালের বুকে নিজেকে মেলে ধরে মানবজাতির ভবিষ্যত উৎকর্ষের পথে দিশারী হয়ে সঙ্গ দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে।