কবিতায় তিনি আধুনিকতার চর্চা করেছেন বাংলার লোকায়ত জীবন বোধের সঙ্গে পাশ্চাত্য বুর্জোয়া জীবনদৃষ্টি অনুসারী আধুনিকতার সমন্বয়ে।
Published : 08 Oct 2023, 01:58 PM
সময়টা সত্তরের দশকের প্রথম দিকেও হতে পারে, কারণ মূলত সেই সময়ই আমি ছিলাম বেতারশ্রোতা। তখনো দু এক কলম লেখার চেষ্টা দূরে থাকুক নিজে লেখক হতে চাওয়ার কথা ভাবতেও শুরু করিনি। আসাদ চৌধুরীকে আমি চিনতে শুরু করি সেই সময়ে, বেতার মারফত, একজন মন্দ্রস্বর-মিষ্টভাষী সাহিত্যিক হিসাবে। তখন বাংলাদেশ বেতারে তিনি একটা সাহিত্য আসর পরিচালনা করতেন। সাধারণ সাহিত্য আসর নয় সেটা; দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে পাঠানো অখ্যাত লেখকদের লেখা পাঠ ও তা নিয়ে আলোচনা করা হতো সে আসরে। পঠিত লেখাগুলো নিয়ে তাঁর অনুকম্পায়ী ও মমতাময় আলোচনার জন্য তখনই তিনি আমার প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর কণ্ঠের যুগপৎ মন্দ্রতা ও মিষ্টতা আমাকে একটু বেশিই আকৃষ্ট করেছিল। তখনো তাঁর ছবি দেখিনি। প্রথম তাঁকে দেখি ও স্বকণ্ঠে তাঁর নিজের রচিত কবিতা আবৃত্তি শুনি, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ উপস্থাপিত ১৯৭৯ সালে প্রচারিত বাংলাদেশ টেলিভিশনের ঈদের আনন্দমেলা অনুষ্ঠানে। সেদিন তাঁর 'সত্য ফেরার' কবিতাটির আবৃত্তি শুনে খুব আনন্দ পেয়েছিলাম! পরে প্রত্যক্ষ পরিচয় হলে তাঁর প্রসন্ন ও নিরহঙ্কার ব্যক্তিত্বও আমাকে আকৃষ্ট করেছিল। তাঁর সেই কবিতাটি ভালো লাগা আমাকে আরো একটু বেশি আগ্রহী করে তুলেছিল আধুনিক বাংলা কবিতার দিকে। কবিতাকে গ্রহণ করতে আধুনিকতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির একদেশদর্শিতা সে সময়ের অন্যান্য লেখকদের মধ্যে দেখতাম; কিন্তু আসাদ চৌধুরী নিজে আধুনিকতামুখি হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে ব্যক্তি হিসেবে দেখতে পেতাম অন্যদের তুলনায় উদার মনোভঙ্গির। কবিতা রচনায়ও তিনি ছিলেন উদার আধুনিক। তরুণতরদেরও গ্রহণ করতেন আন্তরিক ভাবে। তরুণদের কৃতিকে গ্রহণে সমাদরে ছিলেন মুক্তমনা।
শেখ তোফাজ্জল হোসেনের পরিচালনায় অনুশীলন সংঘের সাহিত্য সভায় নিয়মিত অংশগ্রহণসূত্রে সাহিত্য সমাজে আমার বিচরণ শুরু হয় সত্তরের দশকের একেবারে শেষ প্রান্তে। আশির দশকের গোড়ার দিকে মাঝে মাঝে বাংলা একাডমিতে তাঁর অফিস কক্ষে যেতাম। কাজের ফাঁকে ফাঁকে কথা বলতেন আমাদের সঙ্গে। আসাদ চৌধুরী ছিলেন সাংস্কৃতিক-সংযোগ সূত্রে বৈচিত্র্যদ্রাবী একজন ব্যক্তি। তাঁর সঙ্গ থেকে আমি অসংখ্য খুঁটিনাটি বিষয় জেনেছি যা তরুণ বয়সেই ভালো ভাবে না জানলে সে ঊনতা জীবনব্যাপী সংকটের কারণ হয়ে পড়ে।
নিজের লেখালিখি নিয়ে সব সময়ই ছিলেন বিনীত। তাঁর প্রাথমিক খ্যাতি কবি হিসেবেই। বিচিত্র সংরূপের লেখক হলেও কবি পরিচিতি দিয়েই তাঁর লেখকসত্তা চিহ্নিত। কিন্তু আমার একটু বাড়তি আগ্রহ ছিল তাঁর শিশুসাহিত্য নিয়েও। কিছু ছড়া, লোককথা-রূপকথা ছাড়াও প্রাথমিক ভাবে তাঁর করা স্যাঁ একজুপেরির বিখ্যাত বইয়ের অনুবাদ 'ছোট্ট রাজপুত্র' (১৯৮২) পড়েছিলাম। শেষের দিকে শিশুসাহিত্যে বেশি মনোযোগী হয়েছিলেন। রূপকথা-লোককথা তো লিখেছেনই প্রাঞ্জল ভাষায় লিখেছেন বাংলাদেশের ইতিহাস, বিশিষ্ট মনীষীদের জীবনীও।
নানামুখি টান থাকলেও কবিতা লেখার ধারাবাহিকতায় তাঁর ছেদ পড়েনি প্রায় কখনোই। এ থেকে বোঝা যায় কবিতায় একটা মগ্নচৈতন্য তাঁর সব সময়ই ছিল। ছিন্ন ছিন্ন ভাবে নিয়মিতই কবিতা পড়েছি। কিন্তু তাঁর কবিসত্তাকে অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণের জন্য যতটা মনোসংযোগ করে পড়া দরকার তা করা হয়ে ওঠেনি। কবিতার বইয়ের একটা তালিকা করার চেষ্টা করছিলাম। তখনই লক্ষ্য করেছি নিয়মিতই নতুন কবিতার সংকলন বের হয়েছে। দু একটা বইয়ের নাম বাদও পড়তে পারে। মোটামুটি বইগুলোর নাম এখানে প্রকাশসালসহ তুলে দিলাম: তবক দেওয়া পান (১৯৭৫); বিত্ত নাই বেসাত নাই (১৯৭৬); প্রশ্ন নেই উত্তরে পাহাড় (১৯৭৬); জলের মধ্যে লেখাজোখা (১৯৮২); যে পারে পারুক (১৯৮৩); মধ্য মাঠ থেকে (১৯৮৪); মেঘের জুলুম পাখির জুলুম (১৯৮৫); আমার কবিতা (১৯৮৫); ভালোবাসার কবিতা (১৯৮৫); প্রেমের কবিতা (১৯৮৫); দুঃখীরা গল্প করে (১৯৮৭); নদীও বিবস্ত্র হয় (১৯৯২); টান ভালোবাসার কবিতা (১৯৯৭); বাতাস যেমন পরিচিত (১৯৯৮); বৃন্তির সংবাদে আমি কেউ নই (১৯৯৮); কবিতা-সমগ্র (২০০২); কিছু ফুল আমি নিভিয়ে দিয়েছি (২০০৩); ঘরে ফেরা সোজা নয় (২০০৬); বজ্রকণ্ঠ থেমে গেলে (২০১০); যেতে যেতে মধ্যযুগ ঘুরে দাঁড়িয়েছে (২০১২); এই ফুলটির অন্তত দশ-দশটি প্রেমপত্র পাওয়ার কথা (২০১৪); তৃণে-ছাওয়া আদিম ঠিকানা (২০১৭); সবুজ গম্বুজের নীচে (২০১৯)।
কবিতায় তিনি আধুনিকতার চর্চা করেছেন বাংলার লোকায়ত জীবন বোধের সঙ্গে পাশ্চাত্য বুর্জোয়া জীবনদৃষ্টি অনুসারী আধুনিকতার সমন্বয়ে। ষাটের দশকের জাতীয়তাবাদী রাজনীতির প্রভাবও প্রবল ছিল তাঁর কবিতায়। সরল ভাষাভঙ্গি দিয়েই তিনি আধুনিকতাকে স্পর্শ করেছেন। কথনে তিনি পরিমিত। চিত্রকল্প সৃষ্টিতেও তাঁর ব্যক্তিত্ব ও বাকভঙ্গির বৈঠকী মেজাজ পাওয়া যায়। তাঁর চিত্রকল্প চিত্রময়তার চেয়ে ভাবময়তাকেই বেশি ধারণ করে। তাঁর সচেতন জীবনকালের রাজনৈতিক সামাজিক ঘটনাবলির প্রত্যক্ষ প্রভাব যেমন তাঁর কবিতায় আছে তেমনি আছে অন্তর্জীবনের বৈপরীত্যের কথাও। জীবনের শেষপর্বে ধর্মজীবনের অনুভবকেও ধারণ করেছেন। বইয়ের নামকরণেও এসবের পরিচয় রয়েছে।
ছোটদের জন্যই বরং প্রবীণ বয়সে বেশি লিখেছেন তিনি। এরও একটা তালিকা করার চেষ্টা করেছি: রাজার নতুন জামা (রূপান্তর, ১৯৭৯); রাজা বাদশার গল্প (১৯৮০); গ্রাম বাংলার গল্প (১৯৮০); ছোট্ট রাজপুত্র (অনুবাদ : ১৯৮২); গর্ব আমার অনেক কিছুর (১৯৯৬); ভিন দেশের মজার লোককাহিনী (১৯৯৯); তিন রসরাজের আড্ডা (১৯৯৯); কেশবতী রাজকন্যা (২০০০); গ্রাম বাংলা আরো গল্প (২০০০); তোমাদের প্রিয় চার শিল্পী (জীবনী, ২০০০); জন হেনরি (আমেরিকার লোককাহিনী, ২০০১); মিকালেঞ্জেনো (জীবনী, ২০০১); ছোটদের মজার গল্প (২০০১); সোনার খড়ম (২০০৬); মুচি-ভূতের গল্প (২০০৬): কথার মধ্যে কথা (২০১৩); তোমাদের প্রিয় চার শিল্পী (২০১৩); কৌতুকরাজ তেনালিরামের গল্প (২০১৪), রাজকন্যা ও একটি মটরশুঁটি (২০১৬); এ শুধু গল্প নয় (২০১৭); সাহসী এক রাজকন্যার গল্প (২০১৭); তোমাদের জন্য আমার প্রিয় পাঁচটি গল্প (২০১৭); কেশবতী রাজকন্যা (২০২০)। ছোটদের জন্য ভালোবেসে প্রচুর গল্পের বই লিখেছেন। তাই ছোটদের বইয়ের তালিকা সম্পন্ন করতে আরো নিবিড় গবেষণা প্রয়োজন। এটুকু বলা যায় যে, তাঁর কথা বলার সারল্য ও বৈঠকী মেজাজ ছোটদের কাছে সহজ করে তুলেছে।
কিছু প্রবন্ধ-গবেষণাধর্মী লেখাও লিখেছেন তিনি। সাহিত্য জীবনের প্রথম দিকের লেখা হলেও কোন অলকার ফুল (১৯৮২) নামের প্রবন্ধ-সংকলনটি ভালো কিছু প্রবন্ধেরই সংকলন। এ ছাড়া তাঁর গদ্য লেখার মধ্যে রয়েছে সংগ্রামী নায়ক বঙ্গবন্ধু (১৯৮৩); রজনীকান্ত সেন (১৯৮৯); প্রবন্ধ-সংকলন স্মৃতিসত্তায় যুগলবন্দী (২০০১), ভ্রমণস্মৃতিমূলক রচনা সংকলন সিংহাসন জেগে ওঠে (২০০৪)।
সাহিত্য জীবনের প্রথম দিকে কয়েকটি গল্পও লিখেছিলেন। বিনয়বশত মাধ্যমটি ঠিক তাঁর নয় উল্লেখ করে দীর্ঘকাল গল্পের কোনো সংকলন করেননি। এর মধ্যে 'মধ্যবিত্ত' নামের গল্পটি বেশ কয়েকটি সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। একটিই মাত্র গল্প-সংকলন তাঁর, মধ্যবিত্ত ও অন্যান্য গল্প (২০০৬)। কিশোরপাঠ্য ইতিহাসধর্মী একটি বই আছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ (১৯৮৩) নামে।
উর্দু কবিতার একটি অনুবাদ সংকলনও বেরিয়েছিল, বাড়ির কাছে আরশিনগর : বাংলাদেশের উর্দু কবিতা (২০০০) নামে। অনুবাদ সংকলন আছে প্যালেস্টাইন ও প্রতিবেশী দেশের প্রতিবাদী কবিতা (২০০৫) নামে একটি। রয়েছে সম্পাদিত বইও। যেমন যাদের রক্তে মুক্ত এদেশ (১৯৯১ যুগ্মভাবে); ছয়টি রূপকথা (১৯৭৯)।
২.
আসাদ চৌধুরী সত্তর ও আশির দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে সাহিত্য ও সংস্কৃতিধর্মী একটা ধারাবাহিক অনুষ্ঠন করতেন 'প্রচ্ছদ' নামে। সে অনুষ্ঠানে কিছু দিন নিয়মিত একটা পর্ব রাখতেন স্বরচিত ছড়া পাঠের। ১৯৮৩ সালে তাঁর আমন্ত্রণে আমি প্রথমবারের মতো স্বরচিত ছড়া পাঠ করেছিলাম বাংলাদেশ টেলিভিশনে। সে সময় এ রকম সুযোগ আমাকে সাহিত্যচর্চায় আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল। তরুণতররা তাঁর কাছ থেকে এ রকম প্রশ্রয় পেত সব সময়! এ ধরনের বাৎসল্য সব সময় ছিল তাঁর!
মনে পড়ছে বাংলা একাডেমিতে দেখা হলে একদিন আমাকে বললেন, 'তোমার সম্পাদিত বাংলা ভাষার সেরা রূপকথা বইটি পড়ে ভালো লাগল।' বাংলা লোককথা-রূপকথা নিয়ে তাঁর লগ্নতার কথা সবাই অনুভব করবেন ছোটদের জন্য লেখা তাঁর বইয়ের তালিকা দেখলে। আমি অবশ্য তাঁকে বইটি উপহারও দিইনি বা জানাইওনি যে এমন একটা কাজ আমি করেছি। আমার জন্য আনন্দের যে, সেই সূত্রেই কোনোভাবে তাঁর হাতে পড়েছিল আমার সম্পাদিত সংকলনটি। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রকাশনার স্বাভাবিক বিপণন ও পঠন প্রক্রিয়ার অংশ হলেও সংকলনের বিশিষ্টতাকে অগ্রজদের মধ্যে একমাত্র তিনিই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে শনাক্ত করেছিলেন। বিশেষ করে তিনি প্রশংসা করেছিলেন আমার লেখা ভূমিকার ও সে অনুসারে গল্প-বিন্যাসের। বলেছিলেন, 'রূপকথা নিয়ে তুমি যে এতটা তলিয়ে ভেবেছ কখনো আলাপে বুঝতে পারিনি।' আমার করা বাংলা রূপকথার মধ্যেকার সংরূপবৈচিত্র্যের বিন্যাস যে তিনি লক্ষ্য করেছিলেন সেটা ছিল আমার অকিঞ্চিৎকর কাজের সার্থকতার পরিচয়।
আশির দশকে বাংলাদেশের উর্দু সাহিত্য সম্পর্কে আসাদ ভাই-ই আমাকে সচেতন করেন। কেবল নিভৃত চর্চাই নয়, সাহিত্য-সংস্কৃতির অঙ্গনে তাঁর ব্যাপ্ত বিচরণশীলতা আমাকে তাঁর উর্দুসাহিত্য প্রীতির অঙ্গনে নিয়ে গেছে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে উর্দু কবিতা পাঠের আসর 'মুশায়রা'-র আয়োজনে তাঁর সঙ্গে আমিও ছিলাম কিঞ্চিৎ সহযোগী। সেই সূত্রেই উর্দু কবিতার বিশিষ্টতা ও সৌন্দর্যে আমি সামান্য অবগাহন করতে শিখেছিলাম। সে অনুরাগ আমাকে এতটাই সাহসী করে তুলেছিল যে, প্রকাশক এ কে এম লিয়াকতের প্রস্তাবে আমি বেনামে 'শের-শায়েরী' নামে উর্দু কবিতার একটি সংকলনও সম্পাদনা করে ফেলেছিলাম!
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একদিন বাংলা একাডেমির বইমেলার মাঠে সহাস্য আসাদ চৌধুরীর সঙ্গে দেখা! একটু রহস্য করে বললেন, 'আমার একটা নতুন কবিতার বই বেরিয়েছে। বইটার নাম এই ফুলটির অন্তত দশ-দশটি প্রেমপত্র পাওয়ার কথা! বইটা দেখো কিন্তু!' আমি ভেবেছিলাম, বই নিয়ে চ্যানেল আইয়ের অনুষ্ঠানে যেন বইটার কথা প্রচার করি সেজন্য জানিয়ে রাখলেন। তাই প্রকাশনা সংস্থার নাম জানতে চাইলাম। প্রকাশনা সংস্থাটিও তখন ছিল নতুন। আমার অপরিচিত। পরে উল্টে পাল্টে দেখতে গিয়ে দেখলাম, বইটা একত্রে বকুলকে আর আমাকে উৎসর্গ করেছেন তিনি!
বহু সংগঠনের কর্মীদের কাছে তিনি ছিলেন প্রীতিময় সহযোগী। এক সময় সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্তীয় সাহিত্য-সম্মেলনে তিনি ছিলেন সবচেয়ে সহজলভ্য সাহিত্যিক। সারা বাংলাদেশের সাহিত্য প্রয়াসীদের এভাবেও তিনি হয়ে উঠেছিলেন ব্যক্তিগত সুহৃদ। ফলে যাপিত সময়ের একটা বড় সময় আপাতদৃষ্টে ব্যয় হয়েছে লঘু কাজে। তার পরও তাঁর লেখার পরিমাণ দেখলে অনুভব করা যায় সাহিত্যে তাঁর লিপ্ততা কতটা প্রবল ছিল। দেশজুড়ে ছুটে বেড়ানো কেবল তাঁর সময়ই হরণ করেনি তাঁর হৃদয়কে করেছে ঐশ্বর্যশালীও। তাঁর কবিতা বা বিচিত্র ধরনের গদ্যে পাওয়া যাবে সে পরিচয়। একটা সময়ের সাহিত্য সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি অনুভবে তাঁর আপাত অকিঞ্চিৎকর লেখাগুলো কাজে আসবে।
তাঁর রচনা সংখ্যায় যেমন বিপুল, সংরূপেও তেমনই বিচিত্র। এমন সহজ ও সাধারণ একটা ভঙ্গি ছিল তাঁর যাপিত জীবন ভঙ্গিতে যে দেখে কখনো মনে হতো না টিকে থাকার জন্য তিনি কোনো সংগ্রাম করছেন। তাঁর সামগ্রিক সৃষ্টিকর্মেও সে সহজতার পরিচয় আছে। ২০২২ সালের নভেম্বরে তাঁর সঙ্গে শেষবারের মতো দেখা হয়েছিল নিউ ইয়র্কেই। জরাক্রান্ত শরীরেও তাঁর মুখের প্রসন্নতা হারিয়ে যায়নি। এবারের মুক্তধারা বইমেলায় তাঁকে পুরস্কৃত করা হলো। স্ত্রী ও কন্যা তাঁর হয়ে পুরস্কার গ্রহণ করেছিলেন। অসুস্থতাহেতু আসতে পারেননি বলে আমার সঙ্গে পরে আর দেখা হলো না!
আসাদ চৌধুরীর সঙ্গে আমার দীর্ঘ দিনের স্মৃতি। কত আড্ডা, কত প্রসঙ্গের কত আলোচনা! মিষ্টভাষী এই মানুষটির মন্দ্রকণ্ঠের স্মৃতি সহজে ভোলার নয়! তাঁর কথা বলতে গিয়ে কথার পিঠে পিঠে কেবল আরো কথা বেরিয়ে আসছে লাটাইয়ে পেঁচিয়ে থাকা সূতোর মতো। আমাদের স্মৃতিতে ও সংবেদে তিনি সবসময় থাকবেন বলে তাঁর কথা মনে পড়তে থাকবে সর্বদা এমনি ভাবেই!