বাঙালি সমাজের উচ্চবর্গের হিন্দুদের বিষয়ানুষঙ্গী পুথির পাঠোদ্ধার করে ক্রমশ তাঁদের আস্থা অর্জন করেছেন।
Published : 31 Dec 2024, 09:05 PM
আমাদের সমাজে বৈষয়িকতা বলতে সচরাচর দৈনন্দিন যাপিত জীবনের সম্পদ বিষয়ক বৈষয়িকতাকেই বোঝানো হয়ে থাকে। কথায় কথায় বলতে শোনা যায়, ‘অমুকের বিষয়বুদ্ধি ভালো, সে অনেক সম্পত্তি করেছে!’ এর অর্থ বিষয়বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ সম্পদশালী হতে পারেন। কারণ, তিনি জানেন সম্পদকে কিভাবে পরিচর্যা করলে তা বেড়ে চলে! অর্থাৎ এক কথায় তাঁর সৃজনশীল সক্রিয়তার মূল ভিত্তি হলো, জীবনের বাস্তব চাহিদা মেটানো ও নিজের অস্তিত্বরক্ষা। সেজন্যই নিজের ও পরিবারের ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কেউ সঞ্চয়, সম্পত্তি ক্রয়, বা বিনিয়োগে মনোযোগী হন বলে এটাই হয় তাঁর দৃশ্যমান জীবনচর্চা। সকলেই এই বৈষয়িক মানুষটিকে সহজে চিনে নিতে পারেন।
পক্ষান্তরে লেখকীয় বৈষয়িকতা নিয়ে আলোচনা আমাদের সাধারণ সমাজে তো বটেই, এমনকি সাহিত্য-সমাজেও বিরল। এর একটা বড় কারণ, লেখার মাধ্যমে লেখকেরা যে অর্থোপার্জন করতে পারেন তার বৈষয়িক মূল্যের নিদারুণ অপ্রতুলতা! বাংলাদেশে ব্যতিক্রমী দুই একজন লেখক ছাড়া অধিকাংশ লেখকের উপার্জন তাঁদের আর্থিক জীবনযাত্রায় উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে না। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই বর্তমান রচনার লক্ষ্য, লেখকীয় বৈষয়িকতা, যা আপাত অর্থে বিমূর্ত এক বিষয়। লেখকীয় বৈষয়িকতার বিমূর্ততা মূলত এর সরাসরি আর্থিক উপযোগিতা না থাকা এবং চিন্তাশীলতার ভিন্নমুখী ধরনে নিহিত।
লেখকীয় বৈষয়িকতার ক্ষেত্রে অবশ্য জীবিকা ও লেখকতার সমন্বিত ভূমিকা রয়েছে। সহজলভ্য দৃষ্টান্তের সূত্রে বৈষয়িক মানুষের করণীয় বোঝা কঠিন নয়। কারণ, চারপাশে সাধারণভাবে বৈষয়িকভাবে সফল অনেক মানুষের দেখা পাওয়া যায়। কিন্তু লেখকীয় বৈষয়িকতার দৃষ্টান্ত বেশি পাওয়া যায় না। লেখকীয় বৈষয়িকতা বিমূর্ততার ব্যাপার বলে হয়তো এর দিকে সাধারণের মনোযোগ পড়ে না। এমনকি সফল লেখকের বৈষয়িকতাকেও চটজলদি অনুভব করা যায় না তাঁর বিষয়ের গভীরে না গেলে। জীবন যাপনের সাধারণ বৈষয়িকতার বিষয়গুলোর সঙ্গে লেখকীয় বৈষয়িকতা যে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে তার হদিস সাধারণ পাঠক করেনও না হয়তো। সাধারণ জীবন যাপনের অনুকূল কাজ করা, যথা–পড়া, ভ্রমণ, অনুসন্ধান ইত্যাদিকে সমন্বিত করার বাস্তবতাকে মোটা দাগে লেখকীয় বৈষয়িকতা বলে হয়তো চেনানো যাবে। একজন বৈষয়িক মানুষ তাঁর সৃজনশীলতার অনুশীলন করেন যেমন ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা পেতে তথা উত্তরাধিকারের জন্য উৎকণ্ঠা থেকে মুক্তির জন্য তেমনিভাবে আর দশজন সাধারণ মানুষের মতোই একজন লেখককেও যাপিত জীবনের সকল করণীয়ের ও উৎকণ্ঠার মধ্যে থেকেই তাঁর লেখকতাকে চালিয়ে নিতে হয়। সোজা কথা, আমাদের সমাজ কম আলোচিত বিষয় বলে লেখার প্রতি লেখকের অঙ্গীকারের দৃঢ়তাটুকু অর্থাৎ লেখকীয় বৈষয়িকতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি সরল জীবনদৃষ্টিতে প্রায় ধরাই পড়ে না!
২.
আমেরিকার বিভিন্ন সাময়িকী, যথা 'পোয়েট্রি', 'পোয়েটস অ্যান্ড রাইটার্স, 'রাইটার্স ডাইজেস্ট', 'দি রাইটার', 'নিউইয়র্ক রিভিউ অব বুকস', 'নিউইয়র্ক টাইমস রিভিউ অব বুকস', 'টাইমস লিটারারি সাপ্লিমেন্ট', 'দি লন্ডন রিভিউ অব বুকস', 'দি আমেরিকান পোয়ট্রি রিভিউ', ‘হারপার্স ম্যাগাজিন’, 'দি বাফলার' কিংবা নিয়মিত গ্রাহক হিসাবে আরো কিছু জার্নালের পাতা নিয়মিত উল্টেপাল্টে দেখতে দেখতে এবং কবি সাহিত্যিকদের কারো কারো সঙ্গে আলাপে অনুভব করেছি 'লেখকীয় বৈষয়িকতা'র ব্যাপারে সচেতনতা আছে পাশ্চাত্য সমাজে। হয়তো সোচ্চার উল্লিখিত হয় না, কিন্তু কার্যত এমনটাই অনুভব করা যায়। এই ধরনের বৈষয়িকতা আমাদের সমাজেও রয়েছে! তবে আমাদের বৈষয়িকতায় ফাঁকি দিয়ে কিছু পাবার প্রবণতা যতটা দেখা যায় প্রকৃত অর্থে লেখকীয় বৈষয়িকতার চর্চা করতে গিয়ে তেমনটা করলে চলে না! মনে হয়েছে এদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের আরো অনেক বেশি সচেতন অনুশীলন করতে হবে।
লেখকের নিজের জীবন যাপন, উপভোগ, অন্যের সঙ্গে ভাববিনিময়, নিজের অবহিতি বাড়ানো ও অন্যের অবহিতিতে পৌঁছানো–লেখকীয় বৈষয়িকতায় এই সবকিছুই অন্তর্ভুক্ত! আমাদের দেশে 'স্থাবর-অস্থাবর বিষয়-সম্পত্তি তথা অর্থবিত্ত' ছাড়া অন্যবিধ বৈষয়িকতা যাঁদের মধ্যে একটু আধটু দেখা যায় তাঁরা খুবই ব্যতিক্রম বলে চিহ্নিত হয়ে থাকেন। কেবল তাই নয়, এই ব্যতিক্রমকে রুচিহীন ভাবাও আমাদের সমাজে দস্তুর!
সঙ্গত কারণেই লেখকের জীবনবোধে অর্থের চেয়ে বেশি মূল্য পায় সৃজনশীলতা ও এর অবস্তুগত স্বীকৃতি। লেখক যখন তাঁর কল্পিত সৃজনজগতের ভিত গড়তে থাকেন, তখন তাঁর বৈষয়িকতার অভিমুখ হয় ভিন্ন। অথচ আমাদের দেশের প্রবীণ লেখকেরা তাঁদের রচনায় নিজেদের যাপিত জীবন বাস্তবতার সাপেক্ষে তাঁদের লেখকীয় প্রয়াসের অনুকূলতা-প্রতিকূলতা সম্পর্কে কথা প্রায় বলেনই না। অথবা বলা যায় বলতে অস্বস্তি বোধ করেন। এই অস্বস্তি থেকেও রুচিশীল লেখক তাঁর লেখকীয় বৈষয়িকতার অনুশীলন-অনুষঙ্গকে অন্তরালে রাখতে চান।
লেখকীয় বৈষয়িকতার অনুশীলনের মাত্রা এখনো এতটাই সংকীর্ণ যে রবীন্দ্রনাথের লেখকীয় বা শিল্পীয় বৈষয়িকতার নমুনাকেও এখনো খানিকটা তির্যক চোখে দেখা হয় আমাদের সমাজে! প্রসঙ্গত মনে পড়ছে বাংলাদেশের এক বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক, নাট্যকার ও কথাসাহিত্যিক তাঁর আত্মজীবনীমূলক রচনায় নিজের সাধারণ বৈষয়িক জীবনের সাপেক্ষে যখন তাঁর লেখকীয় বৈষয়িকতার কথা বর্ণনা করেন তখন একজন মননশীল পাঠকের কাছেও তার যাথার্থ্য অনুভূত হয় না! পাঠকের মনে হয় এসব অপ্রয়োজনীয় প্রসঙ্গে কেন বিস্তার করা হচ্ছে!
যাঁরা প্রকৃতই নিজের লেখার ভিত্তিতেই সাহিত্য সমাজে গৃহীত হতে চান তাঁদের বড় একটা অংশ মনে করেন অন্যদেরই দায়িত্ব তাঁদের গুণ ও যোগ্যতাকে খুঁজে বের করা। সে কারণে দু একজন যে ব্যতিক্রম হিসেবে নিজেদের কাজের যাত্রাপরিচিতি তুলে ধরেন তা অনুসরণ করলে তাঁদের লেখকীয় কর্মজীবনকে বুঝতে আমাদের সহযোগিতা হয়! এ ব্যাপার আমরা দৃষ্টান্ত হিসেবে আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদকে স্মরণ করতে পারি! তিনি সম্পদশালী কেউ ছিলেন না। স্বল্প বেতনের কর্মচারী হয়েও কষ্টার্জিত অর্থব্যয় করে তিনি পুথি সংগ্রহ করেছেন। বহু শ্রমে করেছেন পাঠোদ্ধার! সাধারণ দৃষ্টিতে পুথি সংগ্রহে তাঁর অর্থব্যয় নিতান্ত অবৈষয়িকতা। কিন্তু সাহিত্যিকতায় তা ছিল উচ্চতর বৈষয়িকতা। ঐ সময় তা সংগ্রহ করা না হলে ও ক্রমশ পাঠোদ্ধার করা না হলে বাঙালি মুসলমান সমাজের অনেক হীনম্মন্যতা দূর হওয়ার ঐতিহাসিক উপকরণ পাওয়া যেত না। আমরা তাঁর সরল অর্থের অবৈষয়িকতার আলোচনা করি বটে কিন্তু তাঁর কৃত উচ্চতর সাহিত্যিক বৈষয়িকতার সাপেক্ষে তাঁর কৃতিত্বের পর্যালোচনা তেমন করি না! বাঙালি সমাজের উচ্চবর্গের হিন্দুদের বিষয়ানুষঙ্গী পুথির পাঠোদ্ধার করে ক্রমশ তাঁদের আস্থা অর্জন করেছেন। বাঙালির জাতীয় সাংস্কৃতিক বিকাশে হিন্দু ও মুসলিম উভয় সমাজের ভূমিকাকে প্রামাণ্য উপকরণের নিরিখে উপস্থাপনের জন্য তিনি যে লেখকীয় বৈষয়িকতা অবলম্বন করেছিলেন তার গভীরতর পর্যালোচনা ভবিষ্যতেও আমাদের উজ্জীবিত করবে!
৩.
আমেরিকার মূলধারায় পরিচিত ও প্রায় অপরিচিত কিন্তু দীর্ঘকাল ধরে সক্রিয় কয়েকজন লেখকের সঙ্গে সামান্য কথাবার্তায় অনুভব করেছি, লেখককে এক ধরনের নিরাসক্ত যেমন হতে হয় তার বিপরীতে আবার হতে হয় লেখকীয় বৈষয়িকতা-সম্পন্নও! বৈষয়িক নিস্পৃহতা যেমন লেখককে চিন্তাশীলতার অবকাশ যোগায় তেমনি লেখকীয় বৈষয়িকতা নিজের সৃষ্টিশীলতাকে দেয় মানুষের কাছে পৌঁছার দিকনির্দেশনা! শেষ পর্যন্ত লেখক তো তখনই অস্তিত্বশীল যখন তিনি পাঠকের কাছে পৌঁছবেন! এ নিয়ে তর্কের বিস্তার নিশ্চয়ই করতে হবে। আপাতত সংক্ষেপে সারা যাক।
একজন লেখক পাঠকের কাছে তাঁর সৃষ্টিকর্মকে পৌঁছতে চান বলেই পাঠকের উদ্দেশ্যে তাঁকে বারবার আহ্বান জানাতে হয় নানান প্রক্রিয়ায়–বিশেষত সাম্প্রতিক কালে সামাজিক যোগাযোগর মাধ্যমে। আমাদের পুস্তক প্রকাশকেরা তো এখনো কিভাবে লক্ষ্য পাঠকের কাছে বই পৌঁছাতে হবে তা নিয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে ভাবেনই না! লক্ষ্য পাঠকেরা তো আমাদের সমাজেই আছেন, তাঁদেরও যেমন আছে সৃষ্টিকর্ম সম্পর্কে জানার আকুতি তেমনি লেখকেরও রয়েছে পাঠকের কাছে পৌঁছবার জন্য ব্যাকুলতা। দুর্ভাগ্যবশত, এই দুইয়ের যোগাযোগ ঘটাবার সুযোগ আমাদের সমাজে খুব সীমিত; তবে ভবিষ্যতে তা বাড়ার বিস্তর সম্ভাবনা রয়েছে। সে সীমানা কিছুটা হলেও বাড়িয়ে দিয়েছে ফেসবুক, ইউটিউব বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম! একজন লেখক যে চেনাজানা মানুষের নিষ্ক্রিয়তাকে নাড়িয়ে দিতে মাঝে মাঝে নিজের বইয়ের পরিচিতি দেন তাকেও তো লেখকীয় বৈষয়িকতারই অংশ বলা যায়! লেখকীয় এই বৈষয়িকতার আমি তাই সমর্থক!
৪.
সংসারী বৈষয়িকতা এবং লেখকীয় বৈষয়িকতা দুটি ভিন্ন পরিসরে কার্যকর হলেও উভয়েরই মূল ভিত্তি হলো চাহিদা ও অস্তিত্ব রক্ষা। তবে তাদের লক্ষ্য, প্রক্রিয়া এবং মানসিকতার মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে। সংসারী মানুষকে বাস্তববাদী হতেই হয়। তাঁদের ভাবনার ভিত্তি সাধারণত বাস্তবিক অর্জন এবং তাৎক্ষণিক প্রয়োজনের সমাধানে কিছুটা সীমাবদ্ধও থাকে। আর লেখকীয় বৈষয়িকতা মূলত লেখকের মানসিক চাহিদা পূরণের সঙ্গে যুক্ত। তিনি চিন্তাশীল এবং সৃজনশীল জীবনের বাড়তি মূল্য দেন। বাংলাদেশের ঐতিহ্যিক পটভূমিতে লেখক তাঁর সৃষ্টিকে আর্থিক মূল্যে পরিমাপ করতে দ্বিধাগ্রস্ত হন; লেখালেখির মূল্যকে হয়তো সেজন্যেই কেবল অর্থমূল্যে সীমাবদ্ধ হতে দিতে চান না! সংসারী মানুষের বৈষয়িকতা যেখানে বাহ্যিক সুখের ওপর নির্ভরশীল, লেখক সেখানে আত্মতৃপ্তি খোঁজেন তাঁর সৃষ্টিশীল কাজের মধ্যে। সেজন্যই অনেক লেখক সংসারের প্রয়োজনের অনুকূলে আর্থিক সফলতা অর্জন করতে না পারলেও হয়তো তাঁদের লেখকীয় বৈষয়িকতা সৃষ্টিশীল প্রক্রিয়ায় অবিচল থাকে।
লেখকের বৈষয়িকতার তাৎপর্য আরেকটু বেশি বলে এর লক্ষ্য কেবল নিজের অস্তিত্ব রক্ষা নয়, বরং সমাজের পরিপ্রেক্ষিত, চাহিদা ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিতর্কের মাধ্যমে অতিক্রমণের প্রক্রিয়ায় গভীরভাবে সংলগ্ন। সংসারী মানুষের বৈষয়িকতা যেখানে জীবিকা ও নিরাপত্তার দিকে ঝুঁকে থাকে, লেখকীয় বৈষয়িকতা সেখানে থাকে সৃজনশীলতা ও চিন্তার বিকাশ প্রক্রিয়ায় লক্ষ্যমুখি।
লেখকীয় বৈষয়িকতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, তাঁর চিন্তার অপরিশীলিত রূপকেই গ্রন্থাকারে প্রকাশ না করে ফেলা, লক্ষ্য পাঠকের শ্রেণি ও সংস্কৃতিকে মনে রেখে নিজের বক্তব্যকে রচনায় উপস্থাপনের কৌশল ঠিক করা। রচনার গ্রন্থরূপকে পাঠকের কাছে কেবল আকর্ষণীয় করলেই হবে না, পাঠকের মনের দুয়ারে কড়া নাড়ার শোভন ও সংস্কৃত উপায়গুলো বিবেচনায় রাখাকেও মূল্য দিতে হবে! আমাদের লেখক সমাজের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানুষই তাঁদের সৃজনমননের যোগ্য মাত্রায় মূল্য অর্জন করতে পারেন না লেখকীয় বৈষয়িকতা বোধকে বিবেচনায় না রাখায়!
৫.
সংসারী মানুষের কাছে বৈষয়িক সাফল্য মানে মূলত অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা; পক্ষান্তরে লেখকের কাছে এই সফলতা তাঁর চিন্তার সামাজিক সমাদর কিংবা পাঠকের মনে সংবেদী হওয়া। সংসারী মানুষের কাছে সাধারণ বাস্তব জীবনের প্রয়োজন মেটাতে সরাসরি এগিয়ে চলেন, আর লেখকের বিচরণ চলে মানসিক জগতে, তাঁর অভিমুখ নিজের সৃজনশীল সত্তাকে পরিপূর্ণ করার দিকে। এই দুইয়ের সারকথা এই যে, সংসারী মানুষের বৈষয়িকতা অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে, আর লেখকীয় বৈষয়িকতার সংগ্রাম সৃজনশীল ভাবনাকে টিকিয়ে রাখার ও এগিয়ে চলার তাড়নায়। উভয়ের অবস্থান সমান্তরাল হওয়া সত্ত্বেও আসলে একমুখি। অর্থাৎ তাঁরা যেন একই সত্তার দুই মেরুতে থেকে জীবনকে পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যান। সেজন্যেই আমার মনে হয় সাধারণ বৈষয়িকতার বিপ্রতীপে থাকা লেখকীয় বৈষয়িকতার চর্চাকেও আলোকিত করার বড় তাৎপর্য রয়েছে। লেখকীয় বৈষয়িকতা বিষয়ে প্রচলিত মূল্যবোধের দ্বিধাকে তাই অতিক্রম করার চেষ্টা আমাদের জীবনবোধকে ক্রমাগত সৃষ্টিশীলতা ও মননশীলতায়ই উত্তীর্ণ করে চলবে।