শৈশব-কৈশোরের পরিত্রাণহীন মানসিক অসুস্থতা, তাঁর জন্মের পূর্বেই এক অগ্রজার মৃত্যু, দু’দুটো ব্যর্থ বিবাহের স্মৃতি, পিতার আকস্মিক প্রয়াণ ইত্যাদি তাঁর মনোজগতে অমোচনীয় প্রভাব ফেলে, যা তিনি আজীবন বয়ে গেছেন তাঁর অবচেতনায়।
Published : 15 Oct 2023, 02:50 PM
গতকাল ১৫ অক্টোবর আশি বছর বয়সে প্রয়াত হলেন ২০২০ সালের সাহিত্যের নোবেলবিজয়ী, মার্কিন কবি লুইজ গ্ল্যুক (২২ এপ্রিল ১৯৪৩ – ১৪ অক্টোবর ২০২৩) যিনি ২০০৩-৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজকবি পদেও অধিষ্ঠিত ছিলেন। আত্মমগ্ন, নিভৃতচারী এই কবি মূলত ব্যক্তির আত্মানুসন্ধান, পারিবারিক স্মৃতি-সংরাগ এবং অস্তিত্বের জটিল, সূক্ষ্ম প্রশ্নগুলো নিয়েই ভাবিত ছিলেন। শৈশব-কৈশোরের পরিত্রাণহীন মানসিক অসুস্থতা, তাঁর জন্মের পূর্বেই এক অগ্রজার মৃত্যু, দু’দুটো ব্যর্থ বিবাহের স্মৃতি, পিতার আকস্মিক প্রয়াণ ইত্যাদি তাঁর মনোজগতে অমোচনীয় প্রভাব ফেলে, যা তিনি আজীবন বয়ে গেছেন তাঁর অবচেতনায়। এইসব ব্যক্তিগত অনিবার্য অনুষঙ্গের বাইরে তিনি প্রকৃতির রহস্য, পুরাণের ভাবসম্পদ আর মানবসম্পর্কের দুর্জ্ঞেয়, জটিল মনস্তত্ত্ব বিষয়েও আগ্রহী ছিলেন। তাঁর নিরাভরণ এবং প্রায় সাংকেতিক কাব্যভাষায় এই মরমি, দার্শনিক প্রতীতি ও জিজ্ঞাসাসমূহের প্রভূত প্রতিফলন লক্ষ করা যায়; কোনো কোনো সমালোচক যার সঙ্গে সাদৃশ্য খুঁজে পান তাঁরই পূর্বসূরি স্বদেশি কবি রবার্ট লাওয়েল, এমিলি ডিকিনসন কিংবা জন বেরিম্যানের সঙ্গে। তিনি অবশ্য তাঁর দুই কবিতা-শিক্ষক, প্রখ্যাত কবি লিওনি অ্যাডামস ও স্ট্যানলি কুনিৎজের কাছে ঋণ স্বীকার করেছেন অকপটে, নিজের ব্যতিক্রমী কাব্যভাষা, বোধ ও মানসকাঠামোর গঠনপ্রক্রিয়ায়। লুইজ গ্ল্যুকের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে: Firstborn (১৯৬৮), The Triumph of Achilles (১৯৮৫), The Wild Iris (১৯৯২), Meadowlands (১৯৯৭), Faithful and Virtuous Night (২০১৪) ইত্যাদি। এছাড়া Proofs and Theories: Essays on Poetry (১৯৯৪) নামে তাঁর একটি কবিতাবিষয়ক প্রবন্ধপুস্তকও রয়েছে।
বুনো আইরিসের কবি লুইজ গ্ল্যুকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এখানে তাঁর দুটো কবিতার অনুবাদ উপস্থাপন করা হল।
সকাল নয়টার স্বগতোক্তি
”এটা কোনো সামান্য অর্জন নয়, এই শান্ত সংগীতের
কাছে এসে পৌঁছানো। ষোলো বছর আগে থেকে, প্রথমাবধি
জ্বরে ভোগা তার সঙ্গে আমার এই যৌথ বসবাস। ষোলো বছর ধরে
আমি বসে থেকেছি আর অপেক্ষা করেছি অবস্থার উন্নতির আশায়।
আমার এখন হাসি পায়। কী জানেন, আমি স্বপ্ন দেখতাম ভাটার জলের মতো
মৃত্যুতে মিশে যাবার,অথবা চাইতাম সে আর কারও প্রেমে পড়ুক,
তার নজর সরিয়ে নিক অন্য কারও দিকে। আমার ধারণা সে তা-ই করেছে।
আমার মনে হত কী এক অনুপস্থিতি যেন টের পাচ্ছিলাম আমি,
আর আজ সত্যিই সে তার অস্পৃষ্ট পাউরুটি আর মৃত চোখের মতো
চেয়ে থাকা ডিমপোচখানি ফেলে রেখে চলে গেছে আমাকে ছেড়ে।”
কানাগলি
আমি বলেছি, “শোনো দেবদূত, আমাকে এ থেকে মুক্তি দাও।”
আমি বলেছি, “আমাকে পরিত্যাগ করো, পরিত্রাণ দাও এই জঞ্জাল থেকে,
সিরিয়াল, টমাটো জুস আর ভদকা নিয়ে এই নিত্যদিনের
ধারাবাহিক গঞ্জনা থেকে; তুচ্ছ সব গার্হস্থ্যশোভার মাঝখানে
সুকৌশলে ছড়িয়ে রাখা তোমার প্রেমপত্রসমূহের হাত থেকে।”
তোমার সঙ্গে থাকাটাই ছিল আমার নিজস্ব ধরনের এক প্রত্যাঘাত।
আমি তোমার রক্তশূন্যতার চিকিৎসা করেছি, বাসনপত্র ধুয়েছি
পাক্কা চারমাস— গতানুগতিক সহবাস দুষ্টচক্রের সবটুকু পূর্ণ করেছি।
এখন যদি আমি তোমার হাত, তোমার চুলের স্বপ্ন দেখি,
তবে শোনো প্রিয়, প্রিয় আমার, এটি সেই কানাগলির
জীবন্ত দৃশ্যসমূহের অভাব অনুভব করা মাত্র।
অনেকটা দাবাখেলার মতো। মনের বিরুদ্ধে মন।