রাজনৈতিক সঙ্কটে টালমাটাল সুদানে এক সামরিক অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হামদকসহ সরকারের অধিকাংশ মন্ত্রী এবং সরকার সমর্থক রাজনৈতিক নেতাদের বন্দি করার খবর এসেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে।
Published : 25 Oct 2021, 09:44 AM
রয়টার্স জানিয়েছে, সোমবার প্রথম প্রহর থেকে পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটির রাজধানী খার্তুমে সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান নিতে দেখা গেছে, জনসাধারণের চলাচলে আরোপ করা হয়েছে কড়াকড়ি।
এর মধ্যেও শহরের বিভিন্ন এলাকায় সুদানের জাতীয় পতাকা নিয়ে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।
দুবাইভিত্তিক আল আরাবিয়া টেলিভিশন জানিয়েছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে খার্তুম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ করে দিয়ে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল স্থগিত রাখা হয়েছে। খার্তুমে ইন্টারনেটও বন্ধ রাখা হয়েছে বলে খবর দিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।
সুদানের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে সামরিক বাহিনীর তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি এখনও আসেনি। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন স্বাভাবিক সময়ের মতই তাদের সম্প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, সেখানেও এ বিষয়ে কোনো খবর নেই।
রয়টার্স লিখেছে, সেপ্টেম্বরের ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে সামরিক বাহিনী ও বেসামরিক সরকারের মধ্যে যে তিক্ততা ও টানাপড়েন শুরু হয়েছিল, সোমবারের ঘটনাপ্রবাহ তারই পরিণতি।
আল জাজিরা জানিয়েছে, সুদানের তথ্যমন্ত্রী হামজা বালোউল, ক্ষমতাসীন সভরেইন কাউন্সিলের মুখপাত্র মোহাম্মদ আল ফিকে সুলাইমান, শিল্পমন্ত্রী ইব্রাহিম আল-শেখ, খার্তুমের গভর্নর আইমান খালিদ রয়েছেন আটক হওয়া নেতাদের মধ্যে।
এর মধ্যেই সামরিক বাহিনীর একটি দল রাজধানী খার্তুমে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে অভিযান চালিয়ে তাকে গৃহবন্দি করে বলে খবর দেয় আল হাদাথ টিভি। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের বরাত দিয়ে স্কাই অ্যারাবিয়াও একই খবর দেয়।
তথ্য মন্ত্রণালয় পরে জানায়, গৃহবন্দি অবস্থা থেকেই এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হামদক সুদানের জনগণকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
তার পরপরই আরেক বার্তায় সুদানের তথ্য মন্ত্রণালয় জানায়, আপসে রাজি না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হামদককে ‘অজ্ঞাত স্থানে’ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সুদানের পেশাজীবীদের সমিতিও সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে নাগরিকদের রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়েছে এবং সোমবার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত জেফ্রি ফেল্টম্যান বলেছেন, সুদানে অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাত করে সামরিক অভ্যুত্থানের খবরে তার দেশ উদ্বিগ্ন।
সুদানের দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরকে ২০১৯ সালে সরিয়ে দেওয়ার পর সামরিক বাহিনী ও বেসামরিক গোষ্ঠীগুলোর নড়বড়ে এক ক্ষমতা ভাগাভাগির চুক্তির মধ্য দিয়ে গত দুই বছর ধরে পরিচালিত হয়ে আসছিল পূর্ব আফ্রিকার দেশটি।
সেপ্টেম্বরে বশিরের অনুগত সেনাদের ব্যর্থ এক অভ্যুত্থান চেষ্টার পর থেকে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বেসামরিক নিয়ন্ত্রিত জোট ফোর্সেস অব ফিডম অ্যান্ড চেইঞ্জের (এফএফসি) সংস্কার এবং মন্ত্রিসভায় রদবদলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অন্যদিকে বেসামরিক নেতারা এ দাবিগুলোকে দেখে আসছিলেন সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের ‘ক্ষমতা দখলের উচ্চাকাঙ্ক্ষা’ হিসেবে।
শুক্রবার এক বক্তৃতায় দেশটির বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হামদক চলমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে একটি রোডম্যাপ দিয়েছিলেন এবং সমাধানে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে তা দেশের ভবিষ্যৎকে ভয়াবহ অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেবে বলে হুঁশিয়ার করেছিলেন।
এর মধ্যেই এফএফসি জোটে থাকা সামরিক বাহিনীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত একটি অংশ গত শনিবার বিক্ষোভের ডাক দেয়। তাতে সাড়া দিয়ে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী রাজধানী খার্তুমে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের সামনে জড়ো হয়ে ‘ভুখা সরকারের’ অপসারণের দাবিতে স্লোগান দেয় এবং সশস্ত্র বাহিনী ও সুদানের যৌথ সামরিক-বেসামরিক সার্বভৌম পরিষদের প্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ অল-বুরহানকে ‘অভ্যুত্থানের মাধ্যমে’ ক্ষমতা নেওয়ার আহ্বান জানায়।
কয়েক ডজন বাসে চেপে খার্তুমের কেন্দ্রস্থলে আসা এ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সেদিন বেসামরিক নেতৃত্বের সমর্থকদের সংঘর্ষও হয়।