ইউক্রেনীয় উড়োজাহাজাটিকে ভুলবশত গুলি করে নামানোর কথা স্বীকার করে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে ইরান।
Published : 11 Jan 2020, 09:20 AM
গত বুধবার ভোরে তেহরানের কাছে ১৭৬ আরোহী নিয়ে ওই উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে আসছিল, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতই এর কারণ।
এ ঘটনায় ইউক্রেইন এয়ারলাইন্সের ওই উড়োজাহাজের সব আরোহী নিহত হয়।
ইরাকের দুটি মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পর প্রবল উত্তেজনা চলার সময় প্রাথমিকভাবে অভিযোগটি অস্বীকার করেছিল ইরান। তখন ইরানের কর্মকর্তারা তা ডাঁহা মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়ে বলছিলেন, যান্ত্রিক ত্রুটিতেই দুর্ঘটনায় পড়ে ওই উড়োজাহাজটি।
কিন্তু শনিবার উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ হিসেবে ‘মানবীয় ভুলের’ স্বীকারোক্তি এসেছে ইরানের কাছ থেকে, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এক বিবৃতিতে ইরানের সামরিক বাহিনীর বলে, “বিমানটি রেভোল্যুশনারি গার্ডের স্পর্শকাতর সামরিক স্থাপনার খুব কাছ দিয়ে উড়ছিল এবং মানবীয় ভুলের কারণে এটি বিধ্বস্ত হয়েছে, যার দায় সংশ্লিষ্টদের নিতে হবে।”
৩ জানুয়ারি ইরাকের রাজধানী বাগদাদের স্থানীয় সময় ভোররাতে মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানি জেনারেল কাসেম সোলেমানি নিহত হওয়ার পর ওই অঞ্চলে প্রবল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বুধবার ভোররাতে মার্কিন বাহিনীর অবস্থান করা ইরাকের দুটি সামরিক ঘাঁটিতে ডজনেরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।
এর ঘণ্টা দুয়েক পর তেহারানের ইমাম খোমেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের ছয় মিনিট পর ইউক্রেইনীয় উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়।
উড়োজাহাজটি মার্কিন বিমান নির্মাতা কোম্পানি বোয়িংয়ের তৈরি ছিল। যাত্রীদের অধিকাংশই ছিল ইরান ও কানাডার নাগরিক।
The Islamic Republic of Iran deeply regrets this disastrous mistake.
My thoughts and prayers go to all the mourning families. I offer my sincerest condolences. https://t.co/4dkePxupzm
— Hassan Rouhani (@HassanRouhani) January 11, 2020
বিমান বিধ্বস্তের পর পারিপার্শ্বিক ঘটনা বিশ্লেষণ করে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতকেই দায়ী করেন।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, ইরানের ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিমানটি ভূপাতিত হয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রের তথ্য। তবে এটি ভুলবশত ঘটে থাকতে পারে। কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইরানকে বলেন, “কী হচ্ছে বিশ্ব দেখছে।”
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও কানাডার প্রধানমন্ত্রীর মতো একই কথা বলেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুঙ্খানুপুঙ্খ আন্তর্জাতিক তদন্তের কারণে বাড়তে থাকা চাপের মুখে ও তদন্তে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে উড়োজাহাজটির বিধ্বস্ত হওয়ার লক্ষণ লুকানো সম্ভব নয়, এ সবকিছু বিবেচনা করেই হয়তো ইরান বাড়তে থাকা সমালোচনার বিরুদ্ধে লড়াই না করে আগের অবস্থান থেকে সরে এসে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছে।
পাশাপাশি এ বিধ্বস্তের ঘটনা নিয়ে ইরানের ভেতরেও যে ক্ষোভ ও বিষাদ তৈরি হয়েছে, তাও তাদের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইরানের এ স্বীকারোক্তির প্রতিক্রিয়ায় দেশটির কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা, তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা ও যারা এ ঘটনার জন্য দায়ী তাদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছেন ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি।
ইরানে ইউক্রেইনের বিমানে ‘ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার’ ভিডিও বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের ব্ল্যাক বক্স যুক্তরাষ্ট্রকে দেবে না ইরান ক্ষেপণাস্ত্রে ইউক্রেইন বিমান বিধ্বস্তের খবর ডাহা মিথ্যা: ইরান |
এক টুইটে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, “এই বিপর্যয়কর ভূলের জন্য ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান গভীর দুঃখ প্রকাশ করছে।”
নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করে তিনি এ ঘটনার জন্য দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের অধিকাংশই ইরান ও ইরান-কানাডার দ্বৈত নাগরিক।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জারিফ টুইটারে লিখেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের হঠকারিতার কারণে সৃষ্ট সংকটের সময়ে বিপর্যয়মূলক এ মানবিক ভুলের ঘটনাটি ঘটেছে।”