বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের ব্ল্যাক বক্স যুক্তরাষ্ট্রকে দেবে না ইরান

তেহরানের ইমাম খোমেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে বিধ্বস্ত ইউক্রেইনীয় উড়োজাহাজের ব্ল্যাক বক্স ফ্লাইট রেকর্ডার দুটি বিমানটির নির্মাতা কোম্পানি বোয়িং বা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করবে না ইরান।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Jan 2020, 05:33 AM
Updated : 9 Jan 2020, 05:33 AM

তেহরান থেকে ইউক্রেইনের রাজধানী কিয়েভের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ১৭৬ জন আরোহী নিয়ে ইউক্রেইন ইন্টারন্যাশনালের ফ্লাইট পিএস৭৫২ বুধবার সকালে বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় আরোহীদের সবার মৃত্যু হয়।

উড়োজাহাজটির যাত্রীদের অধিকাংশই ইরান ও কানাডার নাগরিক ছিল বলে জানা গেছে।

দুর্ঘটনায় পড়া উড়োজাহাজটি মার্কিন বিমান নির্মাতা কোম্পানি বোয়িংয়ের তৈরি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের ছিল।

বিবিসি জানায়, সাধারণত দুর্ঘটনায় পড়া উড়োজাহাজের ব্ল্যাক বক্সের তথ্য বিশ্লেষণে নির্মাতা কোম্পানিগুলো যুক্ত থাকে, আর খুব অল্প দেশেরই ব্ল্যাক বক্সের তথ্য বিশ্লেষণ করার সক্ষমতা আছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

কিন্তু আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন আইন অনুযায়ী এই তদন্তে নেতৃত্ব দেওয়ার অধিকার ইরানের আছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে প্রবল উত্তেজনা চলার সময় এবং ইরাকে দুটি মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘণ্টা দুয়েক পর ইউক্রেইনীয় উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। তবে এই দুটি ঘটনার মধ্যে সম্পর্ক থাকার কোনো প্রমাণ নেই।

এমনিতে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি হওয়া বোয়িংয়ের কোনো দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক তদন্তে মার্কিন ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট সেইফটি বোর্ড একটি ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু মার্কিন সেইফটি বোর্ডকে সংশ্লিষ্ট বিদেশি রাষ্ট্রের আইন মেনে তাদের অনুমতি নিয়ে তদন্তে অংশ নিতে হয়। 

ইরানের মেহর বার্তা সংস্থার প্রকাশিত এক মন্তব্যে ইরানের বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (সিএও) প্রধান আলী আবেদজাদেহ বলেছেন, “নির্মাতা কোম্পানি এবং মার্কিনিদের কাছে ব্ল্যাক বক্স দেবো না আমরা। ইরানের বিমান চলাচল সংস্থাই ঘটনার তদন্ত করবে, তবে ইউক্রেইনীয়রা সঙ্গে থাকতে পারবে।”

উড়োজাহাজের ককপিট ভয়েস রেকর্ডার ও ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (ব্ল্যাক বক্স নামে পরিচিত) কোন দেশ বিশ্লেষণ করবে তা এখনও পরিষ্কার হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।

বোয়িং জানিয়েছে, ‘যে কোনোভাবে দরকার হলে’ তারা সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত আছে।

তদন্তে তাদের একটি ভূমিকা থাকবে, কানাডা এমন প্রত্যাশা করছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তদন্তে কারিগরি সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছেন তিনি।

ইউক্রেইনের তেহরান দূতাবাস প্রথমে উড়োজাহাজটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়াকে ঘটনার জন্য দায়ী করেছিল, কিন্তু পরে এ বিবৃতি প্রত্যাহার করে নেয় তারা। দূতাবাসটি বলেছে, কমিশনের তদন্তের আগে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে করা কোনো মন্তব্য দাপ্তরিক নয়।

ফ্লাইটট্রেডার টোয়েন্টিফোরের তথ্যানুযায়ী, বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার সময় আকাশ পরিষ্কার ছিল। উড়োজাহাজটির ক্রু-রা অভিজ্ঞ ছিল বলে ইউক্রেইন এয়ারলাইন্সের কমকর্তারা জানিয়েছেন।

সরকারি প্রতিবেদন প্রস্তুত হওয়ার আগে ‘এই বিপর্যয়ের বিষয়ে অনুমান বা যাচাইবিহীন তত্ত্বের’ বিষয়ে সতর্ক করেছেন ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলনস্কি।

ইরানের গণমাধ্যম উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের জন্য কারিগরি সমস্যাকে দায়ী করেছে এবং বিমান পরিবহন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বিমান বিধ্বস্তের আগে কোনো জরুরি সঙ্কেত দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে। 

উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের এ ঘটনায় ‘সন্ত্রাসবাদ’ এর কোনো ভূমিকা নেই বলে আবেদজাদেহ জানিয়েছেন।

নিহত ১৭৬ জনের মধ্যে ৮২ জন ইরানি, ৬৩ জন কানাডীয়, ১১ জন ইউক্রেইনীয় যাদের মধ্যে নয় জন ক্রুও আছেন, ১০ জন সুইডিশ, চার জন আফগানি, তিন জন ব্রিটিশ ও তিন জন জার্মান বলে ইউক্রেইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভাদিম প্রিস্টাইকো জানিয়েছেন। নিহতের মধ্যে ১৫ জন শিশু রয়েছে।