ক্ষেপণাস্ত্রে ইউক্রেইন বিমান বিধ্বস্তের খবর ডাহা মিথ্যা: ইরান

তেহরানের কাছে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইউক্রেইনের আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের খবর ‘ডাহা মিথ্যা’ বলে দাবি করেছেন ইরান সরকারের এক মুখপাত্র।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Jan 2020, 12:55 PM
Updated : 10 Jan 2020, 01:31 PM

উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়া নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন মুখপাত্র আলি রাবিই। তাছাড়া, ইরানের সিভিল এভিয়েশন প্রধানও শুক্রবার বলেছেন, বিমানটিতে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত লাগেনি এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত।

ইরানের ইমাম খোমেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর ইউক্রেইনের ওই উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে ১৭৬ আরোহীর সবাই নিহত হওয়ার খবর বুধবার জানায় ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন।

কারিগরি সমস্যার কারণে বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানানো হয় ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ-র খবরে।

কিন্তু বৃহস্পতিবার কানাডা ও যুক্তরাজ্য দাবি করে, তেহরানের বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর ভুল করে ছোড়া ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই ইউক্রেইনের যাত্রীবাহী বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে।

এরই প্রতিক্রিয়ায় ইরানের প্রেস টিভিতে ইরানি মুখপাত্র আলি রাবিই এক বিবৃতিতে ‘ওই দাবি ভুয়া এবং ডাহা মিথ্যা’ বলে মন্তব্য করেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবং তাদের দোসররা মনস্তাত্বিক যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এরপর শুক্রবার ইরানের সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (সিএওআই) এর প্রধান আলি আবেদজাদেহ বলেন, তার মতে, ক্ষেপণাস্ত্র বিমান বিধ্বস্তের কারণ নয়।

“আমাদের কাছে যে বিষয়টি পরিষ্কার তাতে আমরা নিশ্চিত করেই বলতে পারি বিমানটিতে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত লাগেনি। গতরাতে আমি যেমনটি বলেছি, বিমানটি এক বা দেড় মিনিটেরও বেশি সময় আগুন ধরা অবস্থায় আকাশে ছিল এবং বিমানটির অবস্থান বলে দিচ্ছে পাইলট ফেরার চেষ্টায় ছিল,” সাংবাদিকদের বলেন আবেদজাদেহ।

অন্যদিকে, ইরানের এক কর্মকর্তা শুক্রবার বিবিসি কে বলেছেন, বিমানটি উড্ডয়নের আগেই যে সেটিতে যান্ত্রিক সমস্যা ছিল তা প্রমাণ করার মত তথ্যপ্রমাণ আছে। তারপরও বিমানটি উড়েছে এবং ইউক্রেইনের এয়ারলাইন্স কর্মকর্তারাও সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাননি।

ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত সম্পর্কে যা বলা হচ্ছে:
 
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, তিনি বিভিন্ন সূত্র থেকে গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছেন। তাতেই বিমানটিতে আভাস মিলেছে যে, বিমানটি ইরানের ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ভূপাতিত হয়েছে।তবে এটি হয়ত ইচ্ছাকৃতভাবে নয় বরং ভুলবশত ঘটে থাকতে পারে।
 
ট্রুডো বলেন, ঘটনাটি আসলে কি ঘটেছে তা খতিয়ে দেখার জন্য একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত প্রয়োজন। কানাডীয়দের এ ব্যাপারে প্রশ্ন আছে এবং উত্তর জানারও তাদের যৌক্তিকতা আছে।
 
তবে এখনই এ ব্যাপারে কোনো উপসংহার টানা কিংবা কাউকে দোষ দেওয়ার সময় নয় বলে জানান ট্রুডো। এর প্রমাণের ব্যাপারেও তিনি বিস্তারিত কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান।
 
ইউক্রেইনের ওই ফ্লাইটটি ইউক্রেইনের রাজধানী কিয়েভ হয়ে কানাডার টরেন্টোতে যাওয়ার কথা ছিল।সেটি বিধ্বস্ত হওয়া নিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও কানাডার প্রধানমন্ত্রীর মতো একই কথা বলেছেন। যুক্তরাজ্য বিষয়টি নিয়ে কানাডার সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে বলে জানিয়েছে তিনি।
 
কানাডায় যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোমিনিক র‌্যাব বলেছেন, “ইউআইএ ফ্লাইট ৭৫২ ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে এমন তথ্য পেয়ে এবং টান টান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ব্রিটিশ নাগরিকদেরকে ইরান ভ্রমণ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”
 
নিউজউইক পেণ্টাগন এবং উর্ধ্বতন মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা এবং ইরাকি গোয়েন্দাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, তাদের ধারণা পিএস৭৫২ ফ্লাইট রাশিয়া নির্মিত টর ক্ষেপণাস্ত্রে বিধ্বস্ত হয়েছে।
 
ইউক্রেইন শুক্রবার বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র বিমান বিধ্বস্ত নিয়ে ‘গুরুত্বপূর্ণ ডাটা’ প্রেসিডেন্ট ভ্লদিমির জেলেনস্কিকে দিয়েছে। শুক্রবার এ নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে জেলেনস্কি কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন এক সরকারি মুখপাত্র।
 
আকাশে ফ্লাইট পিএস৭৫২ এর একটি ভিডিও প্রকাশ করে নিউ ইয়র্ক টাইমস বলেছে, তারা ওই ভিডিও যাচাই করে দেখেছে এবং ওই উড়োজাহাজে ইরানেরই ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছিল বলে মনে হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, বিমানবন্দরের কাছে পারান্দ শহরের ওপরে একটি বিমানে কিছু একটা আঘাত করার পর ছোট বিস্ফোরণ ঘটে। তবে সঙ্গে সঙ্গে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়নি।