ইরানে ইউক্রেইনের বিমানে ‘ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার’ ভিডিও

তেহরানের বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর ভুল করে ছোড়া ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই ইউক্রেইনের যাত্রীবাহী বিমানটি ১৭৬ আরোহী নিয়ে বিধ্বস্ত হয়েছে বলে দাবি করেছে কানাডা ও যুক্তরাজ্য।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Jan 2020, 05:03 AM
Updated : 10 Jan 2020, 06:08 AM

আকাশে ফ্লাইট পিএস৭৫২ এর একটি ভিডিও প্রকাশ করে নিউ ইয়র্ক টাইমস বলেছে, তারা ওই ভিডিও যাচাই করে দেখেছে এবং ওই উড়োজাহাজে ইরানেরই ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছিল বলে মনে হয়েছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, বিমানবন্দরের কাছে পারান্দ শহরের ওপরে একটি বিমানে কিছু একটা আঘাত করার পর ছোট বিস্ফোরণ ঘটে। তবে সঙ্গে সঙ্গে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়নি।

কিছু সময় ওড়ার পর উড়োজাহাজটিকে বিমানবন্দরের দিকে ফিরতে দেখা যায়। সে সময়ই বিমানটি সংকেত পাঠানো বন্ধ করে দেয় বলে মনে করা হচ্ছে।

আগুন নিয়েই বিমানটি তেহরানের বিমানবন্দরের উপরে কিছু সময় ওড়ে এবং তারপর বিধ্বস্ত হয়।

ফুটেজের সঙ্গে পাওয়া শব্দ এবং ফ্লাইট সংক্রান্ত তথ্য ও উপগ্রহের ছবি মিলিয়ে ভিডিওর বিমানটিকেই ফ্লাইট পিএস৭৫২ বলছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। 

মহাশূন্য প্রযুক্তি বিষয়ক কোম্পানি মাক্সার টেকনোলজি বৃহস্পতিবার উপগ্রহের ওই ছবি সংগ্রহ করে মার্কিন এ সংবাদ মাধ্যমকে সরবরাহ করেছে।

ভিডিওতে বিমানে ‘ক্ষেপণাস্ত্র’ আঘাতের ১০ সেকেন্ড পর সংঘর্ষের শব্দ পাওয়া যায়; বিমানটি ক্যামেরার দুই মাইলের বেশি উপরে থাকায় শব্দ পৌঁছাতে এ সময়টুকু লেগেছে বলে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এ দূরত্বের সঙ্গে বিমান যাতায়াতের পথ নির্দেশক ওয়েবসাইট ফ্লাইট রাডারের দেয়া ফ্লাইট পিএস৭৫২ এর মিল পাওয়ার কথাও জানিয়েছে তারা।

ভিডিও ও উপগ্রহের ছবিতে বিমানটির কাছাকাছি থাকা বিভিন্ন ভবনের উচ্চতা ও নকশাও তেহরানের বিমানবন্দরের আশপাশের সঙ্গে মিলে যায়, বলছে মার্কিন এ সংবাদ মাধ্যম।

বুধবার ইউক্রেইনের ওই বিমান বিধ্বস্তে নিহতদের মধ্যে ইরান, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা ছিলেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

বৃহস্পতিবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ‘বেশ কয়েকটি সূত্র থেকে পাওয়া খবরের’ বরাতে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের ভুল করে করা আঘাতেই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে দাবি করেছেন।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও তার সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন। তিনি ইরানে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার বিস্তৃত আন্তর্জাতিক তদন্তও চেয়েছেন।

মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, উপগ্রহের ছবিতে ইরানের দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার সংকেতের কিছু সময় পরই বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার সংকেত মেলে।

 

পেন্টাগন ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা এবং ইরাকি কর্মকর্তাদের ধারণা, রাশিয়া নির্মিত টর ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই ইউক্রেইনের বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, বিমানটিতে কী ঘটেছিল, তা নিয়ে তিনি সন্দিহান।

বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মার্কিন হামলায় কুদস বাহিনীর কমান্ডার কাসেম সোলেমানির নিহতের প্রতিক্রিয়ায় ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর ওপর তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কাছাকাছি সময়েই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।

মার্কিন গণমাধ্যমগুলোর ধারণা, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা আঘাত হানতে পারে শঙ্কায় ইরানের বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা সক্রিয় ছিল।

ওই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনাই ইউক্রেইনের যাত্রীবাহী বিমানটিকে ভুল করে সনাক্ত করে আঘাত হেনেছে বলেও অনুমান তাদের।

ইরান তাদের ক্ষেপণাস্ত্রে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে- এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে ‘মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ’ চালানোর দায়ও দিয়েছে তারা।

দুর্ঘটনা তদন্তে বোয়িং, কানাডা ও ইউক্রেইনসহ যেসব দেশের যাত্রীরা বিধ্বস্ত বিমানটিতে ছিল তাদের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে তেহরান।

“পশ্চিমের দিকে রওনা দেওয়া বিমানটি বিমানবন্দর ছাড়ার কিছু সময় পর কোনো একটি সমস্যা নিয়ে ফের বিমানবন্দরের দিকে আসতে থাকে, সেসময়ই সেটি বিধ্বস্ত হয়,” বলেছেন ইরানের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের প্রধান আবেদজাদে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে সেখানে আগুন জ্বলতে দেখেছে বলেও জানান তিনি। খোমেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পথে ফিরতে থাকা বিমানটি কোনো বিপদ সংকেতও দেয়নি, বলেছেন তিনি।

“ইউক্রেইনের বিমানটিতে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে- এটি বৈজ্ঞানিকভাবেই অসম্ভব। এ ধরনের গুজব অযৌক্তিক,” ভাষ্য আবেদজাদের।

ইউক্রেইনের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের সেক্রেটারি ওলেকসি দানিলভ এক ফেইসবুক পোস্টে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত ছাড়াও আরও তিনটি সম্ভাব্য কারণে ফ্লাইট পিএস৭৫২ বিধ্বস্ত হতে পারে বলে ধারণার কথা জানিয়েছেন।

এগুলো হল- আকাশে কোনো ড্রোন বা উড়ন্ত কিছুর সঙ্গে সংঘর্ষ, যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে ইঞ্জিন বিস্ফোরণ বা ত্রুটি কিংবা বিমানটির ভেতরে সন্ত্রাসী হামলার কারণে বিস্ফোরণ।

দুর্ঘটনা তদন্তে ইরানকে সহায়তা করার কথা আগেই বলেছিলেন ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভ্লদিমির জেলেনস্কি।

নিহতদের স্মরণে বৃহস্পতিবার একদিনের শোকও পালন করেছে দেশটি।