অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে ভারতের ওড়িশায় আটজনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।
Published : 03 May 2019, 02:56 PM
ঘণ্টায় ১৭৫ থেকে ১৮৫ কিলোমিটার গতিবেগের বাতাসের শক্তি নিয়ে শুক্রবার সকালে ওড়িশার ঊপকূলে আঘাত হানে ‘ফণী’। ঝড়ে শত শত গাছ উপড়ে গেছে। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ায় রাজ্যের বেশির ভাগ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট ভারী বৃষ্টিতে তীর্থ নগরী পুরী ও এর আশপাশের অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে বলে এনডিটিভি জানিয়েছে।
স্থানীয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঝড়ে আটজনের মৃত্যুর খবর দিয়েছেন বলে পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, পুরী জেলায় এক কিশোরসহ তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, তিনজনের মৃত্যু হয়েছে ভুবনেশ্বর ও তার আশপাশের এলাকায়। নৈয়াগড়ে নির্মাণাধীন একটি স্থাপনা থেকে ইট পড়ে এক নারী মারা গেছেন। আর কেন্দ্রপাড়া জেলায় একটি আশ্রয় কেন্দ্রে হার্ট অ্যাটাকে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে।
ঝড়ের আঘাতে উড়ে গেছে পুরী রেল স্টেশনের ছাদ। পুরী ও চিলকা লেকের মধ্যবর্তী নিচু এলাকাসহ অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা দেখা গেছে।
ওড়িশার ভুবনেশ্বর বিমানবন্দরেও ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের কারণে মধ্যরাত থেকে এই বিমানবন্দরে সব বিমান উঠা-নামা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ভারতের এয়ারপোর্ট অথরিটির চেয়ারম্যান গুরুপ্রসাদ মহাপাত্র বলেছেন, ভুবনেশ্বর বিমানবন্দরের টার্মিনাল, সীমানা প্রাচীর ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মেরামত শেষে শনিবার দুপুর ১টার দিকে ওই বিমানবন্দর সচল করার চিন্তা রয়েছে তাদের।
ইন্ডিগোর মতো বেশ কয়েকটি বিমান পরিবহন সংস্থা ঝড়ের কারণে শনিবার ভুবনেশ্বর ও কলকাতা বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট বাতিল করে। এয়ার ইন্ডিয়াও এই দুই বিমানবন্দরের পাশাপাশি রাঁচি, গৌহাটি, তেজপুর ও শিলচর বিমানবন্দর থেকে সব ফ্লাইট বাতিল বা পিছিয়ে দেয়।
ঝড়ের বর্ণনা দিয়ে পুরীর এক বাসিন্দা এনডিটিভিকে বলেন, “হঠাৎ চারপাশ অন্ধকার হয়ে যায় এবং সে সময় আমরা সামনে পাঁচ মিটার দূরের কিছুও দেখতে পারছিলাম না।”
স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে ঘূর্ণিঝড় ফণী তীর্থ নগরী পুরীর ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণপশ্চিমে গোপালপুর আর চাঁদবালির মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে।
ওই সময় বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৭৫ থেকে ১৮৫ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৯৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করার পর ঘূর্ণিঝড়টি এখন পশ্চিমবঙ্গের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই ওড়িশা উপকূল থেকে প্রায় ১১ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়।
রাজস্থানে এক নির্বাচনী সভায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে আশ্বস্ত করে বলেন, “পুরো দেশ এবং কেন্দ্র আপনাদের পাশে আছে।”
এই ঝড়ের ক্ষতি সামলে উঠতে সম্ভাব্য আক্রান্ত রাজ্যগুলোর জন্য এক হাজার কোটি রুপির বেশি অর্থ এরইমধ্যে ছাড় দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঝড়ের কারণে আগামী ৪৮ ঘণ্টা সব ধরনের নির্বাচনী সভা বাতিল করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর ঝাড়খণ্ডে নির্বাচন সভা ছিল রোববার, ঝড়ের কারণে তা পিছিয়ে সোমবার নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার ঝাড়খণ্ডে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ও উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নির্বাচন সভাও বাতিল করা হয়েছে।
ঝড়ের প্রভাবে অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীকাকুলামে ভারী বৃষ্টি হয়েছে, ঝড়ো হাওয়া উপড়ে গেছে অনেক গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি। সেখানে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে বলে এনডিটিভির তথ্য।
ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র কারণে শনিবার নাগাদ ১৪৭টির বেশি ট্রেন চলাচল বাতিল করা হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দিতে বৃহস্পতিবার পুরী থেকে পশ্চিমবঙ্গে হাওড়া ও শালিমারে তিনটি বিশেষ ট্রেন চলাচল করে।
এনডিটিভি বলছে, ঝড়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা ছাড়াও পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ও চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, হুগলি ও ঝাড়গ্রাম জেলা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হবে।
#CycloneFani has hit #Cuttack severely. Lots of trees are uprooted. @DCP_CUTTACK and ODRAF unit as per the guidance of @DGPOdisha is putting all the possible efforts to ensure the roads are cleared asap. #DutyAboveElse pic.twitter.com/eNl1HwENEy
— Odisha Police (@odisha_police) May 3, 2019