ভারতের আবহাওয়া অফিস বলছে, স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে এই ঘূর্ণিঝড় তীর্থ নগরী পুরীর ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণপশ্চিমে গোপালপুর আর চাঁদবালির মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে।
ওই সময় বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৭৫ থেকে ১৮৫ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৯৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে তুলনামূলক শান্ত অংশকে বলা হয় ‘চোখ’। প্রায় ৩০০ কিলোমিটার ব্যাসের ঘূর্ণিঝড় ফণীর চোখ পুরোপুরি উপকূলে উঠে আসতে সময় লাগে পুরো দুই ঘণ্টা।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ওড়িশা, অন্ধ্র ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে চলছে প্রবল বৃষ্টি। সেই সঙ্গে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে উপকূলের নিচু এলাকা।
ওড়িশা ও পুরীতে ফণীর ঘূর্ণিবাতাসের তাণ্ডবের ছবি ও ভিডিও আসতে শুরু করেছে সোশাল মিডিয়ায়। তবে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র স্পষ্ট হতে আরও সময় লাগবে।
অতি প্রবল এই ঘূর্ণিঝড় এগিয়ে আসায় দুদিন আগে থেকেই ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে শুরু করে ভারত ও বাংলাদেশ সরকার। ওড়িশা উপকূল থেকে দশ লাখের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয় নিরাপদ আশ্রয়ে।
বাংলাদেশ সরকারও শুক্রবার সকাল থেকে উপকূলীয় ১৯ জেলার ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
উপকূল অতিক্রম করে স্থলভাগে চলে আসায় ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকবে এ ঘূর্ণিঝড়। পশ্চিমবঙ্গ হয়ে শনিবার মধ্যরাত নাগাদ খুলনা অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার হতে পারে বলে মনে করছেন বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বাংলাদেশের মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা এবং সংলগ্ন দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং নিকটবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
আর কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে আগের মতই ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
শামসুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশে মহাবিপদ সংকেত দেওয়ার সময় এখনও হয়নি। ঘূর্ণিঝড়ের মতিগতি পর্যবেক্ষণ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে সামনে অমাবস্যা থাকায় ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রম করার সময় উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরাঞ্চল স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের স্থলভাগ পার হওয়ার সময় চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলায় হতে পারে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল থাকায় উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরা ট্রলার ও নৌকাকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।