ফিলিপিন্সের দক্ষিণাঞ্চলে গোলযোগপূর্ণ মিন্দানাওয়ে স্বায়ত্তশাসন প্রশ্নে দীর্ঘপ্রতিক্ষীত গণভোটে সোমবার ভোট দিচ্ছে প্রায় ৩০ লাখ ভোটার।
Published : 21 Jan 2019, 06:45 PM
দারিদ্র, দস্যুবৃত্তি ও ইসলামপন্থি জঙ্গিদের কারণে ফিলিপিন্সের মুসলিম অধ্যুষিত এ অঞ্চলে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে সংঘাত চলে এসেছে। প্রাণ হারিয়েছে এক লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ।
সেখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ‘বাংসামোরো’ নামে নতুন অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে স্বায়ত্তশাসন চায়। এর শান্তিপূর্ণ সমাধানের আশাতেই আয়োজন করা হয়েছে এ গণভোট।
এ ভোটকে মিন্দানাওয়ে ইসলামপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং ফিলিপিন্স সেনাবাহিনীর মধ্যকার কয়েক দশকের লড়াইয়ের একটি রাজনৈতিক সমাধান হিসাবেই দেখা হচ্ছে। ভোটের ফলে কয়েকটি এলাকায় বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন আসতে পারে।
ভোটারদের কাছে ‘হ্যাঁ’, ‘না’ ভোটে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পরিকল্পনায় তারা রাজি কি-না সেটিই জানতে চাওয়া হয়েছে। আগামী শুক্রবার নাগাদ ভোটের ফল প্রকাশ করা হবে এবং ‘হ্যাঁ’ ভোট জয়যুক্ত হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
গত এক দশকের বেশি সময় ধরে মিন্দানাও অঞ্চলে স্বাধীনতার দাবিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী দল ‘মোরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্রন্ট’ (এমআইএলএফ) ফিলিপিন্সের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করছে।
ওই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ ফিলিপিন্স সরকার সম্প্রতি এমআইএলএফ এর সঙ্গে একটি শান্তি চুক্তি সাক্ষর করেছে। এ চুক্তির আওতায়ই অনুষ্ঠিত হচ্ছে সোমবারের এ গণভোট।
এমআইএলএফ বলেছে, সরকার ‘বাংসামোরো’ নামের নতুন স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করলে তারা স্বাধীনতার দাবি প্রত্যাহার করে নেবে। মিন্দানাও অঞ্চলের মুসলমান অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে নতুন এই অঞ্চলটি গঠিত হবে। নতুন এ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গড়ে তোলা হবে কি-না গণভোটে জনগণের কাছে তাই-ই জানতে চাওয়া হয়েছে।
বিবিসি জানায়, স্বায়ত্তশাসন পেলে ওই অঞ্চলের ছোট ছোট অধিক চরমপন্থি দলগুলোকে নির্মূল করতে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এমআইএলএফ। কারণ, স্বায়ত্তশাসন পেলে দলটি নতুন অঞ্চলের শাক্তিশালী রাজনৈতিক দলে পরিণত হবে।
‘বাংসামোরো’ নামের নতুন অঞ্চল স্বায়ত্তশাসন পেলে কেন্দ্র সরকার থেকে বেশ কিছু ক্ষমতা স্থানীয় সরকারের কাছে যাবে। এছাড়া, ওই অঞ্চলের জন্য তহবিলের যোগান বড়াবে এবং সেখানকার প্রাকৃতিক সম্পদের উপর স্থানীয় সরকারের অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে।
সোমবারের ভোটের ফল যদি স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে যায় তবে সেখানে ২০২২ সালে স্থানীয় নির্বাচন হবে। ওই অঞ্চলের লোকজন নিজস্ব পার্লামেন্ট ও মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত করবে।
প্রতিবেশী ম্যানিলা সরকার সোমবারের গণভোটের উপর সজাগ দৃষ্টি রেখেছে বলে জানায় বিবিসি।
ফিলিপিন্সের বেশির ভাগ মানুষ ক্যাথলিক খ্রিস্টান হলেও মিন্দানাও মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চল।
এক দশকের বেশি সময় ধরে সেনাবাহিনীর সঙ্গে ইসলামপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদী ও অন্যান্য বিদ্রোহীদের সংঘাতের কারণে মিন্দানাও ফিলিপিন্সের সবচেয়ে দরিদ্র অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। সেখানে ২০১৭ সাল থেকে সামরিক শাসন জারি আছে।