মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় প্রাণ ভয়ে এলাকা ছাড়তে শুরু করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সেখানে নিরাপত্তবাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থা জারি করেছে।
Published : 27 Jun 2017, 08:40 PM
পুলিশ ও অন্যান্য সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, সম্প্রতি একজন গ্রামপ্রধানসহ কয়েকজন রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যার পর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় কয়েকটি গ্রামের প্রায় ২০০ রাখাইন বৌদ্ধ এলাকা ছেড়েছেন।
মিয়ানমার সরকার পরিচালিত গ্লোবাল নিউ লাইট পত্রিকায় মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সপ্তাহের শেষ দিকে রাখাইনের উত্তরাঞ্চলের একটি গ্রামে এক ব্যক্তি নামাজ পড়ার সময় ‘মারা’ যান।
আর গত ১৭ জুন মুখোশ পরা ‘অন্তত ১০ জনের একটি দল’ একজন গ্রাম প্রধানকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে।
রাখাইন রাজ্যের পুলিশ প্রধান সেইন লউইন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “গত সপ্তাহের শেষ দিকে হত্যাকাণ্ডগুলো হয় এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করে। মুখোশ পরা একদল লোক স্থানীয় একজন গ্রাম প্রধানকে হত্যা করে। তারপর থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্গে ভুগছে। যে কারণে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছি।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেন, গ্রামবাসীদের এলাকা ছাড়ার খবর পাওয়ার পর রাখাইনের মুখ্যমন্ত্রী নেই পু এবং জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ‘জরুরি ভিত্তিতে’ ওই এলাকা পরিদর্শনে গেছেন।
প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীরা সতর্ক অবস্থায় আছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসএম আরিফুল ইসলামও রয়টার্সকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত বছর অক্টোবরে রোহিঙ্গা ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীরা’ মিয়ানমার সীমান্তপুলিশের তিনটি পোস্টে হামলা চালিয়ে নয় পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করে।
ওই হামলার পর রাখাইন রাজ্যে ব্যাপক সেনাঅভিযানে শতাধিক মানুষ নিহত হয়, পুড়িয়ে দেওয়া হয় এক হাজারের বেশি ঘরবাড়ি। প্রাণ ভয়ে প্রায় ৭৫ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে যায়।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের অভিযোগ, সেনা অভিযানে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে।
যদিও অং সান সুচি সরকার ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
জাতিসংঘের একটি তদন্তদল বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
রয়টার্স জানায়, সীমান্ত পুলিশের উপর হামলার পর নভেম্বরের শেষদিক থেকেই রাখাইন রাজ্যে বিক্ষিপ্ত ভাবে সহিংস ঘটনা ঘটছিল।
গত সপ্তাহে রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের একটি ক্যাম্প সরিয়ে ফেলার সময় পুলিশ তিন ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করে।
সেইন লউইন এবং রাখাইন রাজ্যে দায়িত্বরত কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, রমজান মাসের পর রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নিরাপত্তারক্ষীদের উপর হামলা চালাতে পারে।
সাম্প্রতিক সহিংসতায় কত জন নিহত হয়েছে বা এর পেছনে কাদের হাত আছে সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
কারণ, গত অক্টোবর থেকেই রাখাইন রাজ্যে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
স্থানীয় বাসিন্দা কিয়াও উইন টেলিফোনে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ১১টি রাখাইন আদিবাসী গ্রাম থেকে প্রায় ২০০ মানুষ পালিয়ে গেছে।
“আমরা এখানে থাকার সাহস পাচ্ছি না। মুসলিমরা আমাদের উপর হামলা করবে এমন গুজব ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।”