একদিনের ব্যবধানে দুইরকম অভিজ্ঞতা। একদিকে প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে ঠাঁই পাওয়ার অবিস্মরণীয় আনন্দ-উচ্ছ্বাস। অন্যদিকে ৮ গোল হজমের দুঃসহ-দুঃস্বপ্নের অভিজ্ঞতা। তাতে ভড়কে যাচ্ছেন না মিতুল মারমা। এগিয়ে যেতে চান সব অভিজ্ঞতাকে সঙ্গী করেই। প্রত্যাশার প্রতিদান দিয়ে রাঙামাটি থেকে উঠে আসা এই তরুণ গোলরক্ষক রাঙাতে চান আগামীর পথচলা।
Published : 28 Aug 2021, 02:27 PM
এর আগে দুইবার জাতীয় দলের ক্যাম্পে থাকলেও চূড়ান্ত দলে সুযোগ মেলেনি। গত মঙ্গলবার সুখবরটি পেয়েছেন জেমি ডের ঘোষণায়। মাত্র ১৭ বছর বয়সী জাতীয় দলে পাওয়া জায়গা কীভাবে পাকা করবেন, সেই ভাবনার মধ্যেই বৃহস্পতিবার মিতুলের দল উত্তর বারিধারা ৮-০ গোলে হারে আবাহনী লিমিটেডের কাছে! প্রথমার্ধে পোস্টের নিচে থেকে মিতুল হজম করেন তিন গোল।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় মিতুল মেলে ধরলেন আগামী নিয়ে নিজের ভাবনা। সেখানে সেরা একদশে থাকার চ্যালেঞ্জ, আরও বিকশিত হওয়া, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের কথাও বললেন প্রত্যয়ী কণ্ঠে।
স্কুল ফুটবল দিয়ে শুরু
২০০৩ সালে জন্ম নেওয়া মিতুল চার ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট। পরিবারের কেউই ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে নেই। কিন্তু প্রাথমিক স্কুলে পড়ার সময় ফুটবলের আঙিনায় একটু একটু করে উঁকি দিতে শুরু করেন। খেলতে যান বঙ্গবন্ধু স্কুল ফুটবল প্রতিযোগিতায়। দেশজুড়ে সাড়া ফেলে দেওয়া এই টুর্নামেন্ট দিয়েই জাতীয় দলের পথে যাত্রা শুরু মিতুলের।
নেপালের বিপক্ষে সিরিজ ও কাতারে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের সবশেষ দলের ক্যাম্পে ছিলেন। মূল দলে জায়গা পাননি। তবে ক্যাম্পে থাকা সময়ে পেয়েছেন কোচ জেমির উৎসাহ, সাবেক গোলরক্ষক কোচ লেস ক্লিভেলির সহচর্য। স্বপ্নময় পথচলায় পাশে থাকা আরও অনেকের কথা মনে পড়ছে মিতুলের।
“খেলার মধ্যে যত ঘাটতি ছিল, সেগুলো ক্লিভেলি সবসময় ধরিয়ে দিতেন, ওগুলো নিয়ে কাজ করতেন। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে আমার কোচ ছিলেন মিনার রহমান স্যার, তার কাছে দীর্ঘ সময় অনুশীলন করেছি। পেশাদার মনোভাব গড়ে উঠেছিল তার হাত ধরেই। ওখানেও ববি মিমস নামে একজন ছিলেন, তার কাছ থেকেও শিখেছি।”
“ক্লিভেলি ছিলেন খুবই পেশাদার মানসিকতার। ইউরোপিয়ান মানসিকতার। পায়ের কাজ, কাভারিং, কোন পরিস্থিতিতে কি সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এগুলো নিয়ে কাজ করতেন। ব্যক্তিগতভাবেও তিনি ফিটনেস নিয়ে গোলরক্ষকদের আলাদাভাবে কাজ করতেন।”
আনন্দের পরই দুঃস্বপ্নের দিন
আগামী অক্টোবরের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবল সামনে রেখে আগামী ২ থেকে ৯ সেপ্টেম্বর কিরগিজস্তানে তিন জাতি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় খেলবে বাংলাদেশ। তিন জানি টুর্নামেন্ট হলেও দল চারটি। প্রতিযোগিতায় অপর দুটি দল হলো কিরগিজস্তান অনূর্ধ্ব-২৩ দল ও ফিলিস্তিন।
৫ সেপ্টেম্বর ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করবে বাংলাদেশ। জেমি ডের দল ৭ সেপ্টেম্বর কিরগিজস্তান ও দুই দিন পর কিরগিজস্তানের অনূর্ধ্ব-২৩ দলের মুখোমুখি হবে। দলে ঠাঁই পাওয়ার খবর পাওয়ার একদিন পরই উত্তর বারিধারা ৮ গোল হজম করেছে। তরুণ মিতুল বিষয়টাকে দেখছেন ফুটবলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে। স্বপ্ন দেখেন সব বাধা পেরিয়ে সবাইকে ছাপিয়ে যাওয়ার।
“ইউরোপের ফুটবলে গোলরক্ষককে সবসময় চাপে থাকতে হয়। আমরাও যখন লিগের ছোট দলের হয়ে খেলি, যে দলগুলো সারাক্ষণই অবনমন এড়ানোর জন্য খেলে, তাদের হয়ে খেলাটা খুব চ্যালেঞ্জিং হয়। ঢাকা আবাহনী, বুসন্ধরা কিংস এদের বিপক্ষে খুব চ্যালেঞ্জিং হয়। সে চ্যালেঞ্জ জয়ের চেষ্টা করছি। দেশের ভেতরে আমিনুল ইসলাম, দেশের বাইরে মানুয়েল নয়ার আমার প্রিয় গোলরক্ষক। আমি সবসময় চাই তাদের মতো হতে। কেবল বাংলাদেশে নয়, দেশের বাইরেও খেলার স্বপ্ন দেখি।”
চ্যালেঞ্জ-অভিজ্ঞতা দুটোই নেওয়ার লক্ষ্য
বেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশের পোস্ট সামলাচ্ছেন আনিসুর রহমান জিকো। দলে আছেন অভিজ্ঞ গোলরক্ষক শহিদুল আলম সোহেল। শক্ত জমিন পাওয়া কতটা কঠিন হবে, তা বুঝতে পারছেন ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের মিতুলও।
“জায়গা পাওয়া অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। সোহেল ভাই দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলের হয়ে খেলছেন। সাম্প্রতিক সময়ে জিকো ভাইয়ের যে পারফরম্যান্সও অনেক প্রশংসনীয়..আমাদের দেশে যে এমন ভালো মানের একজন গোলরক্ষক আছে, এটা আমিও অনুভব করি। তবে চেষ্টা করি চ্যালেঞ্জ নিতে, কিভাবে তাদের চেয়ে আরও ভালো করতে পারি, জেমির চোখে সেরা প্রমাণ করে দলে থাকতে পারি।”
“এটা অভিজ্ঞতা নেওয়ার ট্যুর। হয়ত সুযোগ নাও আসতে পারে। কিন্তু এখানেই আমি খুব কাছ থেকে শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলে কী হয়, কীভাবে হয়, সেগুলো দেখতে পারব। নিজেকে কীভাবে তৈরি করতে হবে, সে দিক নির্দেশনা পাব।”
“এত কম বয়সে সুযোগ পাওয়াটা সৌভাগ্য মনে করি। এটাও বুঝতে পারি, এই বয়সে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং হচ্ছে নিজেকে ধরে রাখা, ক্লাবে, পেশাদার মনোভাব ধরে রাখা…কেননা ফুটবল খেলাটা এক দিনের নয়। আমার মনে হয়, যতদিন ফুটবল খেলব, ততদিন পেশাদার মানসিকতা নিয়েই খেলব। পরিশ্রম করে যাব, যেন সবসময় ভালো পারফরম করতে পারি।”