সাপের বিপদে পড়ার খবর পেলে ছুটে যাচ্ছেন একদল তরুণ-তরুণী। বিষধর ও নির্বিষ সাপ উদ্ধার করে ছেড়ে দিচ্ছেন উপযুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে।
Published : 19 Dec 2021, 04:47 PM
‘ডিপ ইকোলোজি অ্যান্ড স্নেক্ রেসকিউ ফাউন্ডেশন’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রাণিকল্যাণ নিয়ে কাজ করছে। পথ প্রাণীদের উদ্ধার, চিকিৎসা, পুনর্বাসনসহ পরিবেশের নানা ইস্যু নিয়ে কাজ রয়েছে তাদের।
২০১৮ সালে যাত্রা শুরু করা সংগঠনটির অধিকাংশ সদস্যই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
এই সংগঠনের সদস্যরা বলছেন, সাপের প্রতি ভালোবাসা থেকে তাদের এ উদ্যোগ। পাশাপাশি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় এবং বিপদে পড়া বিভিন্ন বন্য পশু-পাখি উদ্ধারেও কাজ করছেন তারা।
তিনি বলেন, “আমাদের সংগঠনটি ২০১৩ সাল থেকে ‘বিচ্ছিন্নভাবে’ কাজ করে আসছে। ২০১৮ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর দেখি, এখানকার পরিবেশ-সংস্কৃতি এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের জীবন একাকার হয়ে আছে। প্রথম বর্ষে থাকাকালীনই সময় ক্যাম্পাসের কিছু শিক্ষার্থীকে সঙ্গে নিয়ে সংগঠনের কাজ শুরু করি।”
মানুষের সঙ্গে বন্য প্রাণীর যে ‘সংঘাত’ হচ্ছে তা জনসচেতনতা তৈরির মাধ্যমে কমিয়ে আনাই তাদের লক্ষ্য বলে জানালের মাহফুজ।
বিষধর সাপ উদ্ধারে প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের পাঠানো হয় এবং সংগঠনটির হটলাইনে ফোন করলেই তারা যেকোনো স্থানে সাপ উদ্ধারে যান বলে জানান মাহফুজুর।
এই সংগঠনে স্বেচ্ছাসেবী দলে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী সৈয়দা অনন্যা ফারিয়া।
কাজ করতে গিয়ে অভিজ্ঞতা কেমন এ প্রশ্নের উত্তরে ফারিয়া বলেন, “ইতিবাচক-নেতিবাচক দুরকম সমালোচনাই পেয়েছি। এমনও হয়েছে সাপ রেসকেউ করতে গিয়েছি; আমার পুরুষ সহকর্মীরা অনুমতি পেয়েছে কিন্তু আমাকে দেওয়া হয়নি। তারা আমার ওপর ভরসা করতে পারছিলেন না। কিন্তু সহকর্মীরা আমাকে ছেড়ে চলে যাননি। তারা আশ্বস্ত করেছেন। আমিও হাল ছেড়ে দেইনি। কাজ শুরু করেছি।“
আরেক নারী সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী তামান্না ইসরাত বলেন, “এই পর্যন্ত বেশ কয়েকবার সাপ রেসকিউ করেছি। সাপ উদ্ধারের পাশাপাশি সাপ যে মানুষের বন্ধু এই বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টাও করছে আমাদের সংগঠন। একই সঙ্গে সাপ ও অন্যান্য বন্য প্রাণী উদ্ধারে প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে সংগঠনের পক্ষ থেকে।”
ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক্ রেসকিউ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ১৫ সদস্যের এ সংগঠনটিতে আটজন নারী ও সাতজন পুরুষ রয়েছেন। এর মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। বিপন্ন সাপ ও অন্যান্য প্রাণী উদ্ধারের যে কাজটি তারা করছেন, সেটি ভালো উদ্যোগ। যুব সমাজের মধ্যে এরকম উদ্যোগ থাকা উচিত।
তিনি বলেন, “অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, নির্বিষ সাপগুলো নির্বিচারে মারা পড়ে। সাপ দেখলেই মারতে হবে, এরকম রেওয়াজ চালু আছে বাংলাদেশে। সেখানে তারা মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরির কাজ করছে৷ তাদের কাজ দেখে যদি দেশের অন্যত্রও এরকম উদ্যোগ নেওয়া হলে প্রাণী আর মানুষের মাঝেও সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হবে।"