জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক-তৃতীয়াংশের বেশি সরকারি বাসা খালি পড়ে রয়েছে। মান খারাপ ও ভাড়া অধিক দাবি করে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে ভাড়ায় বাসায় বা নিজস্ব বাসায় থাকছেন।
Published : 03 Aug 2021, 02:33 PM
এসব বাসা খালি থাকতে থাকতে অযত্ন-অবহেলায় যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক সংস্কৃতি নষ্ট হচ্ছে বলে অনেকে অভিযোগ তুলেছেন।
শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে এবং সরজমিন পরিদর্শনে এই চিত্র পাওয়া গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধন দপ্তরের প্রিন্সিপ্যাল এক্সপেরিমেন্টাল অফিসার (এস্টেট) আবদুর রব শরীফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট বাসা আছে ৪৭৪টি। এর মধ্যে ফাঁকা রয়েছে ১৬৬টি।”
এই হিসাবে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দযোগ্য ৩৫ শতাংশ বাসা খালি রয়েছে।
আবদুর রব বলেন, “সব ক্যাটাগরির বাসাই কমবেশি খালি রয়েছে। কিছু বাসা এক বছরের কম আর কিছু বাসা এক বছরের বেশি আবার কিছু বাসা তিন থেকে চার বছর ধরে খালি পড়ে আছে।”
এর চেয়ে ভাল বাসায় থাকার ইচ্ছা এবং বাইরের বাসার খরচ কম বলে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-হিসাবরক্ষক বলাইচন্দ্র পাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসায় যেসব শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা থাকেন তাদের মূল বেতনের ৫০ শতাংশ, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের বেতনের ৫৫ শতাংশ এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেতনের ৬৫ শতাংশ বাসা ভাড়ার জন্য কেটে নেওয়া হয়।
বাইরের বাসায় এর প্রায় অর্ধেক খরচে থাকা যায় বলে জানিয়েছেন অনেকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-নিবন্ধক মোহাম্মদ আলী বলেন, “বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক আছেন ৭০১ জন। তাদের মধ্যে শিক্ষা ছুটিতে আছেন প্রায় একশ জন।”
এতে বিশ্ববিদ্যালয়টির আবাসিক চরিত্র নষ্ট হচ্ছে বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, “আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় মানেই হচ্ছে এখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাধ্যতামূলক ক্যাম্পাসে থাকবেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ভাড়া বেশি হওয়ার কারণে এবং বাসার মান খারাপ হওয়ায় তারা বাইরে থাকছেন। অনেকেই নিজস্ব বাসা তৈরি করে থাকছেন।
“ফলে বাসা ফাঁকা পড়ে আছে। আবার উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে আরও বাসা তৈরির কথা রয়েছে। কোনো জবাবদিহি নেই। এগুলো প্রশাসনের দায়িত্বহীন আচরণের কারণে হচ্ছে। কিন্তু তারা পরিকল্পনা ছাড়াই অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত সবার আবাসিক অবস্থান নিশ্চিত করা।”
সবার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারি বাসায় থাকা বাধ্যতামূলক না।
তবে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, নিবন্ধক, হল প্রাধ্যক্ষদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসায় থাকা বাধ্যতামূলক বলে জানান ভারপ্রাপ্ত নিবন্ধক রহিমা কানিজ।
রহিমা কানিজ বলেন, আবার বাধ্যতামূলক হলেও ১৬টি হলের মধ্যে নয়টির প্রাধ্যক্ষদের জন্য বাসা নেই। আর বাকি সাতটি হলের কেউ কেউ তাদের জন্য বরাদ্দকৃত বাসায় থাকেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বড় একটি অংশও আবাসিক বাসায় থাকছেন না।
বাধ্যতামূলক হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য নূরুল আলম (শিক্ষা) সরকারি বাসায় থাকেন না।
তিনি বলেন, “বরাদ্দকৃত বাসায় থাকা অবশ্যই বাধ্যতামূলক। কিন্তু বাসায় থাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাকে কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি। যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাকে থাকার জন্য বলা হয় তাহলে আমি বরাদ্দকৃত বাসায় থাকব।”
তিনি বলেন, “বাসা মেরামতের কিছু বিষয় আছে। মেরামত করে বাসায় উঠতে হয়ত আরও এক থেকে দেড় বছর লেগে যাবে। তখন বাসায় উঠব।”
বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী সমিতির সভাপতি মনির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, “কর্মচারীদের জন্য যেসব বাসা বরাদ্দ তা আসলে থাকার মত না। আমি নিজেও বাইরে থাকি। বাসাগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। একটা পরিবার থাকার মত পরিবেশ সেখানে নেই।”
শিক্ষকরা সরকারি বাসায় থাকেন না কেন সে বিষয়ে রহিমা কানিজ বলেন, “এসব বাসা যখন তৈরি হয় তখন পুরনো মডেলে তৈরি হয়েছিল। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় উন্নত মানের বিল্ডিং তৈরি হয়েছে। আবার অনেকে নিজস্ব বাসা-বাড়ি তৈরি করেছেন। আমরা এখন নতুন মডেলের বাসা তৈরি করছি। আশা করি ভবিষ্যতে সবাই থাকবেন।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলাম বলেন, “আমাদের পুরাতন বাসাগুলোর অবস্থা ভাল না। আবার অনেকেই নিজেদের বাসা তৈরি করেছেন। আমরা সরকারকে জানিয়েছি।
“আমরা এর জন্য একটি কমিটি করেছি। বাসাগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি জেনে পরবর্তী চিন্তা করব।”
কিছু বাসা ফাঁকা থাকা সত্ত্বেও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বাসা তৈরি করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপাচার্য ফারজানা বলেন, “তাদের জন্য অল্প কয়েকটি বাসা নির্মাণের কথা রয়েছে। এগুলো ভাল মানের বাসা হবে। তখন তারা সেখানে ভাড়া দিয়ে থাকবেন।”