করোনাভাইরাস মহামারীতে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয় হওয়া নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামের বদলির আদেশ হয়েছে।
Published : 29 Jul 2021, 09:04 PM
গত ২০ জুলাই তার বদলির আদেশ হয়েছে বলে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ও সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ জানান।
এদিকে, এই আদেশের খবর প্রকাশ হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্থানীয়দের অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ তার বদলির আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছেন।
সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামের বদলির আদেশ হয়েছেন তিনি করোনা সংকটে যথেষ্ট দক্ষতা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।”
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বদলীর আদেশ হয়েছে। নতুন কর্মস্থলে যোগদান করব। সরকার যেখানেই দায়িত্ব দেবে সেখানেই মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই।”
স্থানীয়দের ভাষ্য, গত বছরের ৭ এপ্রিল করোনা সংক্রমণের জন্য নারায়ণগঞ্জকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হিসেবে চিহ্নিত করেছিল আইইডিসিআর। করোনাকালে নমুনা সংগ্রহ, নমুনা পরীক্ষা-রিপোর্ট, ল্যাব সমূহের সাথে সমন্বয়সাধন, লকডাউন বাস্তবায়ন, রোগীদের সঙ্গে আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন, রোগীদের ভর্তি, বাসায় আইসোলেশন, থাকা রোগীদের সার্বিক সকল দপ্তরের সাথে সমন্বয়ে ঘুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ডা. জাহিদ।
করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে মোবাইল ফোন ও সরাসরি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে আইসোলেশনে থেকেও রোগীদের টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে গেছেন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, বাড়িতে থেকে তার পরামর্শে সুস্থ হয়েছেন কয়েক হাজার রোগী।
জেলার শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকে চিকিৎসক জাহিদুল রাত-দিন সমানতালে মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। তার অসাধারণ সেবায় তিনি মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি করোনা অতিমারীতে দায়িত্ব পালন করে সারাদেশে আলোচিত হয়েছেন।
করোনাকালে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আলোচিত সাজেদা হাসপাতালের পরিচালক তরিকুল ইসলাম বলেন, “কোভিডকালে জাহিদুল ইসলাম পরিবারসহ অসুস্থ হলেও মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া থেকে বিরত রাখতে পারিনি। সাধারণ মানুষকে সেবা দিয়েছেন, এমন সরকারি কর্মকর্তা সাধারণত হয় না।”
নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করোনার শুরু থেকে নারায়ণগঞ্জবাসীকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আলোচিত হয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম। সরকারি কর্মকর্তা হয়েও সাধারণ মানুষের পাশে থেকে যেভাবে সেবা দিয়েছেন তা প্রশংসার দাবিদার।”
তার বদলির আদেশ বাতিল করার জন্য তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান।
এ ব্যাপারে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ্ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বদলির আদেশ সরকারের নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ। কিন্তু যেহেতু আমরা করোনা সংক্রমণে উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে আছি; প্রতিদিন সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে; তাই আমরা সরকারকে জানিয়েছি, তাকে আরও কিছুদিন রাখার জন্য বলেছি। সরকার থেকে জানানো হয়েছে, তিনি আরও কিছুদিন আমাদের সাথে থাকবেন।”
ফেইসবুকে প্রতিক্রিয়া
এসএমএইচ টিটু নামের একজন তার ফেইসবক স্ট্যাটাসে লেখেন, “নারায়ণগঞ্জে অনেক চিকিৎসক আছেন যারা সাত-আট বছর যাবত আছেন। যাদের বদলি হয় না। প্রকৃত দেশপ্রেমিক দুই বছর হতে না হতেই বদলি হয়ে যায়।”
মোখলেছুর রহমান তোতা নামের একজন লিখেছেন, “একজন মানবিক চিকিৎসক যিনি নিজের জীবন বাজি রেখে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নারায়ণগঞ্জবাসীকে সুরক্ষিত রাখার জন্য যে অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন তা অন্য কারোর দ্বারা সম্ভব হতো কিনা জানি না। ------ করোনাযোদ্ধা, মানবতার কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ ডা. জাহিদ ভাইয়ের বদলির বিষয়টি বাতিল করে নারায়ণগঞ্জেই রাখার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।”
এমডি আক্তার নামের একজন লিখেছেন, “অনেক ভালো মনের মানুষ, আমার যখন করোনা পজিটিভ আসলো তখন ফোনে আমাকে অনেক হেল্প করেছেন। দোয়া রইল ডাক্তার জাহিদ ভাইয়ের জন্য।”
এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি ও নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সালাম খোকন লিখেছেন, “নারায়ণগঞ্জের করোনাকালীন সময়ে নিবিড়ভাবে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা ডা. জাহিদকে আকস্মিকভাবে বদলি করা হয়েছে। তবে জেলা প্রশাসক নিশ্চিত করেছেন আপাতত বদলি করা হবে না।”
যুমনা টেলিভিশনের স্টাফ করসপেনডেন্ট নারায়ণগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আমির হুসাইন স্মিথ তার ফেইসবুক ওয়ালে লিখেছেন, “দিন-রাত মানুষের সেবা করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন। প্রথম দিকে লকডাউন বাস্তবায়সহ যাবতীয় কাজ যিনি একাই সামাল দিয়েছেন। সেই ডাক্তার জাহিদুল ইসলামের আকস্মিক বদলি আমাকে তথা নারায়ণগঞ্জের মানুষকে ব্যথিত করেছে।”