বাগেরহাটে খানজাহান আলীর মাজারে দুটি কুমিরের একটির এক চোখ ‘আঘাতের কারণে’ নষ্ট হয়ে গেছে; ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্যটিও। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এসেছে খাদেম ও স্থানীয়দের পক্ষ থেকে।
Published : 08 Jul 2021, 12:58 PM
পুরুষ কুমিরটিকে দীঘি থেকে তুলে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সুন্দরবনের করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির।
তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের কাছে কুমিরের অসুস্থতার খবর পেয়ে এখানে আসেন তিনি। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় কুমিরটিকে পানি থেকে ওপরে তোলা হয়।
“কুমিরটির ডান চোখ বেশ কিছুদিন আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। বাম চোখটিও খুলতে পারছে না। এই চোখটি ভাল আছে কিনা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে তা যে ক্ষতিগ্রস্ত যে হয়েছে তা তার চলাফেরা ও আচরণে বোঝা যাচ্ছে।”
ইতোমধ্যেই চিকিৎসা শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কুমিরটিকে ডাঙ্গায় রেখে কয়েক দিন পর্যবেক্ষণ করা হবে। তাছাড়া সুচিকিৎসার জন্য যা যা করা দরকার তাও সব করবেন তারা।
অসুস্থতার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, “অসুস্থতা স্বাভাবিকভাবে হয়নি। কুমির যদি কাউকে আক্রমণ করে তাহলে চোখে আঙুল দিলে সে দুর্বল হয়ে আক্রমণকারীকে ছেড়ে দেয়। এ ধরনের হস্তক্ষেপে কুমিরটি আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে থাকতে পারে। দীঘিতে পেতে রাখা জালে জড়িয়ে বা মানুষের আঘাতে কুমিরের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ধারণা করছি।”
পুকুরে মাজারের খাদেমরা জাল পেতে রাখেন মাছ ধরার জন্য। তবে জাল পেতে রাখার কারণে কুমিরের ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করেছেন মাজারের প্রধান খাদেম শের আলী ফকির।
তিনি বলেন, “একটি পক্ষ কুমির একপাড়ে আটকে রেখে দর্শনার্থীদের দেখিয়ে টাকা আয় করে। তাদের মাধ্যমে এই ক্ষতি হয়েছে। কুমির যারা আটকে রাখে এবং যারা আঘাত করে, প্রশাসনের কাছে আমি তাদের বিচার দাবি করছি।”
তিনি কোনো পক্ষের নাম বলেননি। দীঘিপারের বাসিন্দা বিনা বেগম নামে এক নারীও কোনো পক্ষের নাম উল্লেখ না করে পাল্টা অভিযোগ করেছেন।
তিনি বলেন, “প্রভাবশালী খাদেমরা অবৈধভাবে জাল পেতে মাছ শিকার করেন। তাতেই কুমিরটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোনো ঘাটে কেউ কুমির আটকে রাখে না।”
কুমিরটি সুস্থ হওয়ার পর অসুস্থতার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাগেরহাটের ডিসি মোহাম্মদ আজিজুর রহমান।
তিনি বলেন, মাজারের দীঘিতে বর্তমানে দুটি কুমির রয়েছে। সপ্তাহ দুই আগে একটি পুরুষ কুমির অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থতার খবর পেয়ে প্রাণিসম্পদ বিভাগকে কুমিরের চিকিৎসা দিতে বলা হয়। তারা কুমিরটিকে দীঘি থেকে তুলে চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেছে। কুমিরটি আগে সুস্থ হোক। অসুস্থতার কারণ জানার পরে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বাগেরহাট প্রাণি সম্পদ বিভাগের জেলা কর্মকর্তা ডা. লুৎফর রহমান জানান, অসুস্থ পুরুষ কুমিরটি ছাড়া আরেকটি মেয়ে কুমির আছে বাগেরহাটে খানজাহান আলীর মাজারের দীঘিতে।
এ দীঘির বিখ্যাত দুই কুমিরের মধ্যে ধলা পাহাড় ২০১৩ সালে এবং কালা পাহাড় তারও বছর দশেক আগে মারা যায়। তারা খানজাহান আলীর সময়ে দীঘিতে ছাড়া কুমিরের শেষ বংশধর বলে স্থানীয়দের বিশ্বাস।
কালা আর ধলা পহাড়ের মৃত্যুর পর ২০০৪ সালে ভারতের মাদ্রাজের ক্রোকোডাইল ব্যাংক থেকে এনে মোট পাঁচটি কুমির এই দীঘিতে ছাড়া হয়। তাদের মধ্যে দুটি কুমির এখন জীবিত রয়েছে।