শরীয়তপুরে এক বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের সময় রোগীর মৃত্যুর পর উন্নত চিকিৎসার দেওয়ার নামে লাশ সদর হাসপাতালে পাঠানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
Published : 14 Mar 2020, 09:24 PM
চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ এনে নড়িয়া উপজেলার ঘড়িষার বাজারের আধুনিক হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভাংচুরও চালানো হয়েছে।
এ ঘটনায় নিহত আকলিমা বেগম শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার উত্তর সালধ গ্রামের ইয়ার বক্স বেপারীর স্ত্রী।
আর এই বেসরকারি হাসাপাতালের মালিকদের একজন যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খান।
ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার আগে যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ছিলেন জানিয়ে নড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাচানুজ্জামান খোকন বলেন, তিনি বর্তমানে নড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
আনোয়ার হোসেন খান তার হাসপাতালের এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠায় কৌশল অবলম্বন করে চিকিৎসক রোগীর লাশ সদর হাসপাতাল পাঠিয়েছেন।
এই ইউপি চেয়ারম্যান আরো বলেন, “রোগী মারা যাওয়ার পর এ বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করার প্রয়োজন নেই।”
এ প্রতিষ্ঠানটির অপর পরিচালক সেকান্দার হাওলাদার বলেন, রোগী মারা যাওয়ার পরে আমি এসে ডা. মিজানকে জিজ্ঞাসা করলাম কীভাবে রোগী মারা গেলেন?
“ডাক্তার আমাকে বলেছেন-‘আমি রোগীকে অ্যানেস্থিশিয়া দিয়ে অজ্ঞান করার পর তিনি আর রিগেইন করেননি। রোগী মারা গেছে।
“এরপর আমরা ডিঙ্গামানিকের চেয়ারম্যান এর সহযোগিতায় রোগীর পরিবারকে তিন লাখ টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছি। টাকা দিয়ে দেব।”
নিহতের স্বজনদের এ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শনিবার সকাল ১১টায় পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে।
এ নিয়ে নিহতের পরিবারের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
নিহত আকলিমার ছেলে রাব্বি বলেন, “ডা. মিজানের অবহেলা ও অদক্ষতার কারণে আমার মা মারা গেছেন। আমরা এর বিচার চাইলে ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার খান তিন লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলে তার লাশ দাফন করান।
“আমরা এখন অসহায়।”
এ বিষয়ে নড়িয়া থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, আমাদেরকে না জানিয়ে লাশ দাফন করে ফেলেছে।
“পুলিশ সুপারের মাধ্যমে বিষয়টি জেনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি লাশ দাফন করে ফেলেছে।”
ঘটনার বিবরণ দিয়ে নিহতের ভাই আনোয়ার হোসেন বেপারী জানান, আকলিমা বেগম অনেক দিন থেকে নাকের পলিপাস ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। গত শুক্রবার আকলিমাকে ঘড়িষার আধুনিক হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় স্বজনরা।
“সেখানে ডা. মিজানুর রহমান রোগীকে দেখে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা দেন। পরীক্ষার রিপোর্টের ভিত্তিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় নাকের পলিপাস অপারেশনের কথা বলে আকলিমাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান।
“রাত ৯টায় অপারেশন থিয়েটার থেকে আকলিমার মৃতদেহ বের করে ঢাকা অথবা শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন চিকিৎসক।”
এ সময় স্বজনরা শরীরে হাত দিয়ে অনুভব করেন আকলিমা মারা গেছেন। এক পর্যায়ে বিক্ষুদ্ধ জনতা হাসপাতালে ভাংচুরও করে বলে জানান তিনি।
এ হাসপাতালের পরিচালক আনোয়ার হোসেন খান ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে সেখানে এসে রোগীর স্বজনদের বিচারের আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। রোগীকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক আকলিমাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন বলে জানান তিনি।
নিহত আকলিমার মেয়ে আশা মনি বলেন, “নাকে পলিপাস সমস্যার কথা বলে আমার মাকে অপারেশনের জন্য অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়। তিন ঘণ্টা পর তাকে লাশ বানিয়ে ফেরত দেয়।
“এ সময় ডাক্তার মাকে জীবিত দাবি করে ঢাকা অথবা শরীয়তপুর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন।”
এ ব্যাপারে ডা. মিজানুর রহমানকে বারবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।