মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের একটি চা বাগান ৪৪ বছর ধরে ধারণ করে আছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নজির।
Published : 04 Jul 2019, 05:58 PM
আলাদা বিশ্বাস নিয়ে পুরো জীবন পার করে তিন ধর্মের মানুষ শেষ যাত্রায় মিলিত হচ্ছেন কমলগঞ্জের পাত্রখলা চা বাগানে।
সেখানে একই জায়গায় রয়েছে সনাতন ধর্মালম্বীদের শ্মশান, মুসলমানদের কবরস্থান এবং খ্রিস্টানদের সমাধি।
পাত্রখলা চা বাগানে বিভিন্ন ধর্মের প্রায় ১৬ হাজার মানুষের বসবাস। তাদের কারও মৃত্যু হলে শেষ ঠিকানা হয় ওই সমাধিস্থল।
সামাধিস্থলে সীমানা দেয়াল নির্মাণ, রাস্তা তৈরিসহ রক্ষণাবেক্ষণ কাজে সরকারি সহায়তার দাবি রয়েছে স্থানীয়দের।
চা বাগানের ম্যানেজার শফিকুর রহমান মুন্না জানান, ১৮৭৫ সালে এ বাগান প্রতিষ্ঠার সময় ৫ একর জমি তিন ধর্মের মানুষের সমাধির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এ সমাধিস্থল নিয়ে কখনও কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি। বাগানে ঈদ, পূজা, বড় দিনও উদযাপিত হয় সৌর্হাদ্যপূর্ণ পরিবেশে।”
স্থানীয় সার্বজনীন মন্দিরের পুরোহিত রাজেশ শর্ম্মা বলেন, এক দিনে তিন ধর্মের লোক মারা গেলেও যে যার রীতি অনুসারে শেষকৃত্য করেন, পরস্পরকে সহযোগিতাও করেন। এ নিয়ে কোনো ঝামেলা কখনও হয়নি।
“আমাদের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত আন্তরিক। চা বাগানে যখন আমাদের হিন্দুদের কোনো ধর্মীয় উৎসব হয়, তখন আমাদের মুসলমান ভাইরা, খ্রিস্টান ভাইরা, উনাদের আমরা নিমন্ত্রণ করি, উনারা আসেন। মুসলমান সমাজ আর খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের যখন উৎসব হয়, তখন উনারাও নিমন্ত্রণ দেন, আমরা যাই।”
পুরোহিত রাজেশ বলেন, চা বাগান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তাদের পূর্বপুরুষরা এভাবে সম্প্রীতি আর সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন, তারাও তাই করছেন।
পাত্রখলা চা বাগানের এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রতিকে একটি ‘দৃষ্টান্ত’ হিসেবে বর্ণনা করে খ্রিস্টান ধর্ম যাজক জোসেফ বিশ্বাস বলেন, “আমাদের তিন ধর্মের মধ্যে মানুষ তো একই, রক্ত একই… আমরা হয়ত ভিন্ন ভিন্ন সমাজ, এটা নিয়ে আমাদের কোনো ইয়ে নাই।”
স্থানীয় মসজিদের ইমাম আব্দুল আজিজ জানান, পাত্রখলা বাগানে পাঁচ হাজার মুসলমান, আট হাজার হিন্দু আর আড়াই হাজার খ্রিস্টানের বসবাস।
“দীর্ঘদিন ধরে আমরা এখানে বসবাস করছি, আমাদের মধ্যে কোনো হিংসা বিদ্বেষ নাই। ভাই ভাই হিসেবে আমরা বসবাস করছি। বর্তমানে যে জঙ্গিবাদ, মন্দির- গির্জায় হামলা, এটা ইসলাম কখনোই সমর্থন করে না। যারা এ ধরনের কাজ করে, ইসলামে তাদের স্থান নাই। কোরআনে বলা হয়েছে, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি চলবে না।
সবাইকে ধর্মীয় ভেদাভেদ থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুর রহমান বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম আমরা একটা অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে লালন করে। তারই প্রমাণ পাবেন আজ যদি কেউ কমলগঞ্জে আসেন। দেখবেন, একই জায়গার মধ্যে পাশাপাশি কবরস্থান, সমাধিস্থান আর শ্মশানঘাট। এটাই প্রমাণ করে, বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ।”