রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘দহন’ সিনেমার প্রদর্শনী বন্ধের দাবিতে আন্দোলনরতদের উপর হামলায় অন্তত সাত জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজন সাংবাদিকও রয়েছেন।
Published : 01 Dec 2018, 08:25 PM
শনিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম অডিটরিয়ামের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
আহতদের মধ্যে রয়েছন সাংবাদিক আলী ইউনুস হৃদয়, প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক মহব্বত হোসেন মিলন, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এ এম শাকিল হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মিঠুন চন্দ্র মহন্ত, ছাত্র ফেডারেশনের প্রচার সম্পাদক ইসরাফিল আলম, কর্মী রাশেদ রিমন ও আশরাফুল আলম আহত হন।
মারধরের শিকার আন্দোলনকারীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের ‘নির্দেশে’ ছাত্রলীগ এ হামলা চালিয়েছে। তবে প্রক্টর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আন্দোলনকারী ইসলামিক স্টাডিস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইসরাফিল আলম বলেন, দুপুর ২টা থেকে প্রদর্শনী বন্ধের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে আন্দোলন করছিল প্রগতিশীল ছাত্রজোট নেতা-কর্মীরা।
“বিকাল ৩টার দিকে প্রক্টর এসে তাদের আন্দোলন বন্ধ করতে বলেন। এরপরও আন্দোলন বন্ধ না করলে প্রক্টরের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর নেতৃত্বে আমাদের উপর হামলা চালায় সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।”
তিনি বলেন, প্রক্টরের গায়ে হাত তোলার অভিযোগ তুলে আন্দোলনকারীদের মারধর শুরু করে সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান খান নাহিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সাবিরুল জামিল সুস্ময়, মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফেরদৌস মাহমুদ শ্রাবণ, বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম রেজাসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী।
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এ এম শাকিল হোসেন বলেন, “আন্দোলন চলাকালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের নামে প্রোপাগান্ডা চালায় যে, আমরা প্রক্টরের গায়ে হাত তুলেছি। কিন্তু আমরা তা করিনি। বরং শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করেছি। তারপরও হঠাৎ তারা আমাদের ওপর হামলা চালায়।”
শাকিল আরও বলেন, এ সময় ছাত্র ইউনিয়নের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মিঠুন চন্দ্র মহন্তকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এলোপাথাড়ি মারধর করে। গুরুতর আহত অবস্থায় মিঠুনকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।
চিকিৎসকের বরাত দিয়ে শাকিল জানান, মিঠুনের একটি হাত মচকে গেছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারধরের চিহ্ন রয়েছে।
শাকিলকে বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম রেজা মারধর করেছেন বলে দাবি শাকিলের।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, “আমরা ওখানে গিয়ে দেখি একটা ঝামেলা হয়েছে। এসময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগেরও বাকবিতণ্ডা হয়। শুনছি একজন সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার ঘটনাও নাকি ঘটেছে। যদি সত্যি এ ঘটনা ঘটে থাকে, আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর লুৎফর রহমান বলেন, “আমি ওখানে গিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করি। সবাই জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সংগঠন প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করলে কোনো সমস্যা ছিল না। আমি বলেছি, যদি শিক্ষার্থীবান্ধব না হয় আমরা বন্ধ করে দেব।
“আন্দোলনকারীরাও বলেছে, তারা আজকের পর কোনো কর্মসূচি পালন করবে না। এ সময় দুয়েকজন বিষয়টি অতিরঞ্জিত করে অডিটরিয়ামের গেট বন্ধ করে দিলে ঝামেলা বাঁধে।”
হামলায় নির্দেশ দেওয়ার বিষয়ে প্রক্টর বলেন, “এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। ওখানে পুলিশ প্রশাসন, প্রক্টর বডি উপস্থিত ছিল। তাছাড়া আমি কেনো নির্দেশ দিতে যাব?”
প্রদর্শনীর নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, “এখানে পুলিশ প্রশাসন, গোয়েন্দারা আছেন। তারা আমাদের সাহায্য করছেন। আমরা চেষ্টা করব বহিরাগত দর্শকের যাতে কোনো সমস্যা না হয়।”