জাদুঘরে ১৯২০ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বারোটি গ্যালারির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিটি গ্যালারিতে ডিসপ্লের পাশাপাশি শ্রবণযন্ত্রের মাধ্যমে তৎকালীন প্রেক্ষাপটের ধারা বর্ণনা দেওয়া হচ্ছে।
Published : 04 Aug 2022, 11:26 PM
গোপালগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
শহরের রেলওয়ে স্টেশনে গত সোমবার ভ্রাম্যমাণ এ জাদুঘর প্রদর্শনের উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।
জাদুঘর প্রদর্শনের দায়িত্বপ্রাপ্ত পল্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে মুজিব জন্মশত বর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে নতুন প্রজম্মের কাছে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানান দিতে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন করে।
“উদ্বোধনের পর থেকেই বিভিন্ন বয়সের মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর দেখতে স্টেশনটিতে ভিড় করছেন। তাদের পদচারণায় স্টেশন মুখরিত হয়ে উঠেছে।”
পল্লব কান্তি বলেন, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত জাদুঘর খোলা থাকে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভিড় থাকছে। আগামী ৫ অগাস্ট পর্যন্ত এখানে এর প্রদর্শনী চলবে। তারপর রেলের পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরটি প্রদর্শন করা হবে।
তিনি জানান, এখানে ১৯২০ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ১২টি গ্যালারির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিটি গ্যালারিতে ডিসপ্লের পাশাপাশি শ্রবণযন্ত্রের মাধ্যমে তৎকালীন প্রেক্ষাপটের ধারা বর্ণনা দেওয়া হচ্ছে। ভিডিও চিত্রের সঙ্গে ধারা বর্ণনা শুনে নতুন প্রজন্ম ইতিহাস জানতে পারছে।”
“জাদুঘরে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর পৈতৃক বাড়ি, সমাধিসৌধ, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণ, বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত প্রতীকী চশমা, মুজিবকোট, পাইপ, মুজিব নগর স্মৃতিসৌধ, জাতীয় শহীদ মিনার, কারাগারের রোজনামচা, বিজয়স্তম্ভ কমলাপুর ও মুজিব শতবর্ষের লোগো প্রদর্শন করা হচ্ছে।”
নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরতেই রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মঞ্জুর উল আলম চৌধুরী এ পরিকল্পনা করেন বলে পল্লব কান্তি জানান।
“প্রান্তিক জনগোষ্ঠির কাছে বিষয়বস্তুটি পৌঁছে দিতেই তিনি এ উদ্যোগ নেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান গোপালগঞ্জ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর যাত্রা শুরু করেছে।”
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বাঘাজুড়ি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা অটল কুমার মজুমদার বলেন, “১৯২০ সালে বঙ্গবন্ধু জন্ম গ্রহণের পর বাবা-মায়ের কাছে ছিলেন প্রিয় খোকা। তারপর তিনি আমাদের কাছে ছিলেন মুজিব ভাই। ১৯৬৯ এর গণ-আন্দোলনের পর তিনি হন বঙ্গবন্ধু। দেশ স্বাধীনের পর তিনি আমাদের জাতির পিতা। এসব প্রেক্ষাপট ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরে তুলে ধরা হয়েছে। এখানে যথার্থভাবেই বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশকে উপস্থাপন করা হয়েছে। রেলে একটি বগির মধ্যে ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর করে বঙ্গবন্ধুকে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটি আমার কাছে ভালো লেগেছে।”
যাদুঘর দেখার অনুভূতি জানাতে গিয়ে প্রকৌশলী কৃষ্ণ সরকার (২৪) বলেন, “যাদুঘরের বাইরের অংশে ভাষা আন্দোলন, ৬৬-এর ৬ দফা, ৬৯-এর গণ-আন্দোলন, ৭০-এর নির্বাচন ও ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষণা, ১৭ এপ্রিল মুজিব নগর সরকার, যুদ্ধকালীন দিন ও ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের চিত্র প্রস্ফুটিত হয়েছে।
“এ ছাড়া যাদুঘরের মধ্যে ১৯২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্ম থেকে শুরু করে ১৯৭৫ সালে মৃত্যু পর্যন্ত তার জীবন কর্ম স্থান পেয়েছে। এখানে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত জিনিসপত্র রাখা হয়েছে। জাদুঘরের ১২টি কর্নারেই ভিডিও, ছবি প্রদশর্নের পাশাপাশি শ্রবণযন্ত্রেরে মাধ্যমে ধারা বর্ণনা শোনা যাচ্ছে। এ থেকে আমরা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে নতুন নতুন অনেক কিছুই জানতে পারছি। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ সৃষ্টি সম্পর্কে জানতে পেরে নিজেদের সমৃদ্ধ করতে পারেছি।”
রেলওয়ে এ ধরনের প্রদর্শনীর আয়োজন করায় তাদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার বাথানডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাথী মিত্র বলে, “পাঠ্য বইতে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে পড়েছি। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরে এসে বঙ্গবন্ধুকে নতুন করে জানতে পেরেছি। তার ত্যাগ, সাহস ও প্রতিবাদের ভাষা আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে বড় হতে চাই। তার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করব।”
জাদুঘর দেখে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ছামিউল মোল্লার কথা ওঠে এসেছে তার অনুভূতির কথা।
ছামিউলের ভাষ্য, “রেল জাদুঘরে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটি আমার কাছে ভালো লেগেছে। হেডফোনে ধারা বর্ণনা শুনে ছবি ও ভিডিও দেখে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অজানা অনেক কিছুই জেনেছি।”