দক্ষিণ কোরিয়াতে আসা ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এই দেশটা সম্পর্কে যে রকম একটা ধারণা ছিল, তাতে হালকা একটা ভয় কাজ করছিল। আর ছিল আজগুবি সব চিন্তা-ভাবনা। দক্ষিণ কোরিয়ার আসার পর আমি কিন্তু বিস্মিত হয়েছি! সত্যি বলতে, কোনো কিছুর সাথেই যেন আমার চিন্তার মিল নেই।
Published : 05 Apr 2017, 12:10 PM
পরিষ্কার, সু-পরিছন্ন এই কোরিয়াতে আমার প্রথম তুষারপাত দেখা। সে এক আশ্চর্যজনক অভিজ্ঞতা আমার জন্য! সব কিছুই যেন মুহূর্তের মধ্যে সাদা-শুভ্র। সব দিকে তাকালেই মনের মধ্যে একটা খুশি খুশি ভাব আর শান্তিময় একটা পরিবেশ। এরকম ঠাণ্ডা পরিবেশ আমি আগে উপলব্ধি করিনি। সেই প্রথম ‘স্নো-ফল’ মানে তুষারপাত দেখার সাথে ছিল আমার জীবনের প্রথম প্রচণ্ড ঠাণ্ডা অনুভব করা।
শীতকালে এখানে খুব বেশি ঠাণ্ডা হয়। আমার অভিজ্ঞতায় আমি মাইনাস ২০ ডিগ্রি পর্যন্ত ঠাণ্ডা পেয়েছি সিউলে। অন্য সব বাঙালিদের কেমন ঠাণ্ডা অনুভব হয় জানি না, কিন্তু আমার কখনোই শীতের সময়টা ভাল লাগে না।
এত ঠাণ্ডার মধ্যেও তুষারপাত দেখাটা ছিল বাকেট লিস্টের একটা। ইচ্ছে-পূরণ যেটাকে বলে। এখন অবশ্য প্রতি বছরই দেখা হয়। যার কারণে এখন অবশ্য দেখতে দেখতে একটুখানি ক্লান্তি চলে এসছে। কেননা, তুষার যখন হয়, তখন দেখতে খুব খুব বেশি ভাল লাগে। কিন্তু তুষারপাত শেষ হওয়ার পর শুরু হয় আসল দুরাবস্থা। রাস্তা-ঘাট হয়ে যায় পিচ্ছিল, স্যাঁতস্যাঁতে, আর খুব বেশি ঠাণ্ডা। এই সময়টা আমার জন্য কখনই উপভোগ্য ছিল না।
সাধারণত চেরি ফুল ফুটতে শুরু করে মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে আর ফেস্টিভাল শেষ হয় এপ্রিলের মাঝামাঝি। সবচেয়ে মজা হচ্ছে, চেরি ফুলটা ফুটবার পর খুব অল্পদিন থাকে সেটা। ৫-৬ দিন যদি বৃষ্টি না হয়, তাহলে থাকে। আর বৃষ্টি হলেই ঝরে যায়।
পুরো কোরিয়া জুড়েই চেরি গাছগুলো বসানো হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। সৌন্দর্য বর্ধনটাই ওদের আসল উদ্দেশ্য। পার্কগুলো তো আছেই, সাথে মূল রাস্তার দুই পাশ ধরে সারি করে লাগানো হয়েছে গাছগুলো। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চেরি গাছ থাকে।
কোরিয়ানরাও খুব উপভোগ করে চেরি ফুলের সৌন্দর্য। সাথে বিদেশিরা তো আছেই। অনেক শহরে বাঙালি কমিউনিটি থেকে চেরি ফেস্টিভালের সময়ে ছোটখাটো অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয়। সবাই একসাথে ফেস্টিভালের জায়গা ঘোরাঘুরি করা, ছবি তোলা, একসাথে একটু খাওয়া-দাওয়া করা। পিকনিক এর মতো মজা!
প্রথম চেরি দেখার অভিজ্ঞতা তো আমার কাছে পিকনিকের মতো। একসাথে আমরা প্রায় ১৪-১৫ জন বাঙালি মিলে খুব উপভোগ করেছিলাম। অনেক ছবি তুলেছিলাম আর সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলাম চেরি ফুল দেখে। জীবনের প্রথম সবকিছুই অনেক বেশি আলাদা লাগে। চেরি ফেস্টিভালটা আমি এখনও খুব উপভোগ করি।
নিজের দেশকে, নিজের দেশের উৎসবগুলোকে যেভাবে আমরা প্রবাসী বাঙালিরা মিস করি, হয়তো কোরিয়া থেকে চলে গেলে, নিজের দেশের মতো নিশ্চয়ই মিস করব না, কিন্তু কিছু কিছু মুহূর্ত, কিছু কিছু অভিজ্ঞতা- অনেক মিস করব। আমি তো অবশ্যই চেরি ফুলটাকে মিস করবই।
আজ এটুকুই থাক। সবার সাথে প্রথম কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করাই ছিল আমার মূল উদ্দেশ্য। আশা করি জীবনে সবার একবার হলেও তুষারপাত আর চেরি ফুল দেখার সৌভাগ্য হোক।
লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি
ইমেইল: [email protected]
ছবি কৃতজ্ঞতা: লেখক ও মাহবুবুল আলম শোয়েব
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |