জলবায়ু বদলে যাচ্ছে। এবার রেকর্ড পরিমাণ শীত পড়লো মধ্যপ্রাচ্যে। কোথাও কোথাও তুষারপাতও হয়েছে। ওমানের উত্তরাঞ্চলেও মিলেছে তুষারপাতের দেখা।
Published : 14 Mar 2017, 01:11 PM
আরবীয়রা এই ঠাণ্ডায় অভ্যস্ত নয়। জোব্বা-কোর্তা পরে একেবারে যবুথবু অবস্থা। আমরা কিন্তু বেশ উপভোগ করেছি। মনে হয়েছিল- দেশের ফেলে আসা প্রকৃতি যেন আমাদের খোঁজ নিতে এসেছে। শুধু পথের ধারে ভাপা পিঠাটা পেলে একেবারে স্বদেশের ঘ্রাণ পেতাম।
এখানে শীতকালে পথে পথে পিঠা নয়, তবে কাবাব বিক্রি হয়। যাকে আরবীয়রা ‘মিশকাক’ বলে। বারবিকিউ করার ছোট একটা যন্ত্রে কয়লা জ্বেলে দেদারসে চলছে ‘মিশকাক’ ব্যবসা। অলিগলি ফুটপাথে শুধু কাবাবের গন্ধ। সাধারণত কলেজ-ভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্ররা এ ব্যবসা করে থাকে। পুঁজি কম, মুনাফা বেশি। তাই অনেকে সারাদিন চাকরি করে রাতে হয়ে উঠে কাবাব ব্যবসায়ী।
বিশ্বের বৃহত্তম খাদ্য ও হসপিটালিটি বাণিজ্য মেলা মধ্যপ্রাচ্যেই অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বহু বছর ধরে। যা ‘গালফ ফুড ফেয়ার’ নামে পরিচিত। এ বছরও দুবাইয়ের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে পাঁচদিন ব্যাপী হয়ে গেল ‘গালফ ফুড ফেয়ার’।
দর্শনার্থীদের জন্য মেলা সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা অবধি খোলা ছিল। প্রবেশ ফি ছিল ৭ হাজার টাকা। মেলাতে প্রায় নব্বই হাজার দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। দর্শনার্থীর অধিকাংশই ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত। যাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল মার্কেট ট্রেন্ড ও নতুন পণ্য সম্পর্কে জানা এবং ন্যায্য মূল্যে সঠিক পণ্য সোর্সিং করা।
দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য প্রতিটি কোম্পানিই ছিল মরিয়া। কোথাও মাপেট, কোথাও সুন্দরী ললনা, কোথাও সুপারম্যান আর উইম্যানের ছুটোছুটি, কোথাও আবার সাগর থেকে মৎস্যকুমারী এসে হাজির।
আমি সঙ্গীর তত্ত্বীয় তথ্যে খুব একটা মনোযোগ দেইনি। পার্থক্যটা যখন নিজেই টের পাচ্ছি- তখন সেটা কীভাবে হলো- তা না জানলেও চলবে। আপাতত আল্পস পর্বতের হাল্কা পানি খেয়ে ভেতরের তৃষ্ণা নিবারণেই ব্যস্ত রইলাম।
মেলার একাংশে ছিল কিছু দক্ষ শিল্পীর কারুকাজ। তারা বড় বড় কুমড়ো দিয়ে বিভিন্ন প্রাণি ও মানুষের বিভিন্ন আকৃতির মুখাবয়ব বানাচ্ছিল। আরেকদিকে ছিল কেক দিয়ে বিভিন্ন মূর্তি, প্রাকৃতিক পরিবেশ আর প্রাচীন ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলা। মানুষ ভিড় করে সেই শিল্পকর্ম মুগ্ধ নয়নে দেখছিল।
তাছাড়া মেলার প্রতিটি উপকরণ আমরা যে যুগ-যুগ ধরে গ্রাম-বাংলায় দেখে এসেছি তা-ই। হাট-বাজারে আমাদের মনোরঞ্জনের জন্য ছিল বাদর আর সাপের খেলা। গালফ ফুডেও আছে শিল্পীদের মন-ভোলানো খেলা।
কি সব লিখছি কে জানে! পরবাসী হয়ে এই এক ঝামেলা- সবকিছুর মাঝেই যেন খুঁজে পাই চিরচেনা শেকড়ের গন্ধ।
লেখক: হেড অফ মার্কেটিং, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত
এই লেখকের আরও পড়ুন
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected] । সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |