প্রয়াত পিয়াস করিমের জন্য আগামী শুক্রবার দিনব্যাপী শোক ঘোষণা করেছে বিএনপি, ওই দিন নেতা-কর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণের পাশাপাশি দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখবে।
Published : 14 Oct 2014, 09:04 PM
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পিয়াস করিমের মরদেহ নেওয়ার বিরোধীদের সমালোচনা করে বিএনপি বলেছে, এটি একটি ‘ফ্যাসিবাদী আচরণ’।
বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য এই টেলিভিশন আলোচককে অনেকে ‘জামায়াতে ইসলামীর এজেন্ট’ বললেও বিএনপির চোখে তিনি ‘স্বাধীনচেতা, আপসহীন ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী’ মানুষ।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিয়াস করিম সোমবার মারা যান। তিনি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন।
গণজাগরণ আন্দোলন এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার বক্তব্য বিতর্কের সৃষ্টি করে। এজন্য গণজাগরণ আন্দোলনকারীরা তাকে যুদ্ধাপরাধীদের ‘পক্ষের’ ব্যক্তি হিসেবে তার মরদেহ শহীদ মিনারে নেওয়া প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছে।
পিয়াস করিমের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শুক্রবার দিনব্যাপী শোক দিবসের কর্মসূচি জানিয়ে বিএনপির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সেদিন সকাল সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানোর বিষয়টিও রয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পিয়াস করিমের মরদেহ রাখার ব্যবস্থা নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
শহীদ মিনারের তত্ত্বাবধায়ক কর্তৃপক্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দাবি করেছে, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী’ পিয়াস করিমের মরদেহ শহীদ মিনারে রাখার অনুমতি যেন দেওয়া না হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোর আবেগ-অনুভূতি বিবেচনা করবেন তারা।
“বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী ড. পিয়াস করিমের মতো একজন স্বাধীনচেতা, আপসহীন ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী মানুষের লাশ শহীদ মিনারে আনতে প্রতিহতের ঘোষণা কেবল অশোভনীয়ই নয়, বরং শহীদ মিনারের মতো পবিত্র স্থানটিও নিজেদের দখলে নেওয়ার চক্রান্ত।”
প্রয়াত পিয়াস করিম ‘প্রগতিশীল ও বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী’ ছিলেন উল্লেখ করে বিএনপির মুখপাত্র বলেন, তার ক্ষুরধার বক্তব্যে সরকারের মধ্যে ‘অস্থিরতা’ দেখা দিত।
“সকল ভয়ভীতি ও হুমকি উপেক্ষা করে বক্তব্য রাখতেন বলেই ক্ষমতাসীনদের বিরাগভাজন হয়েছিলেন তিনি। এজন্য মৃত্যুর পরও তার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে।”
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত আরেক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পিয়াস করিমের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শুক্রবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে দলের সব কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। নেতা-কর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবে।
পিয়াস করিমের মরদেহ বর্তমানে স্কয়ার হাসপাতালের হিমঘরে রয়েছে। বুধবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখার পর বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম মসজিদে তার জানাজা হবে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বোনেরা এখনও না পৌঁছনোয় বুধবারের কর্মসূচি পিছিয়ে শুক্রবার নেওয়া হয়েছে বলে মঙ্গলবার জানানো হয়।
পিয়াস করিমের মৃত্যুতে বিএনপির জোট শরিক দলগুলোও শোক জানিয়েছেন। শোক বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামীর আমির মকবুল আহমাদ বলেছেন, “তিনি ছিলেন স্পষ্টভাষী ও দেশপ্রেমিক ব্যক্তি। তার ইন্তেকালে জাতি একজন গণতন্ত্রমনা বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদকে হারাল।”