সরকার নানা বক্তব্য দিয়ে কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করছে বলে অভিযোগ বিএনপির।
Published : 11 Apr 2018, 04:09 PM
বুধবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “কোটা সংস্কারের আন্দোলন সাধারণ ছাত্র-ছা্ত্রীদের আন্দোলন। এখানে উৎসাহ দেওয়া না দেওয়া- এই প্রশ্নগুলো তুলে আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে সরকার নানা কথা বলে।
“মতিয়া চৌধুরী(কৃষি মন্ত্রী) জানলেন কী করে …..এত ছেলে-মেয়ে রাত্রি ১২টার সময়ে হাজার হাজার মেয়েরা বেরিয়ে আসছে হল থেকে। এরা সব রাজাকারের সন্তান? যেখানে সমবেত মানুষ, হাজার হাজার.. লক্ষ লক্ষ মানুষ যেখানে ধ্বনিত হয় আওয়াজ, তারা রাজাকারের সন্তান? রাজাকারের সংখ্যা তাহলে বেশি? মতিয়া চৌধুরীর কথায় কী বোঝা যায় না যে তারা বিভ্রান্ত করার জন্য নানা কথাবার্তা বলছেন।”
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের চতুর্থ দিনে বুধবার সকাল থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের কারণে প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে রাজধানী। বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের খবর পাওয়া গেছে ঢাকার বাইরে থেকেও।
রিজভী বলেন, “কোটা সংস্কারের বিষয়ে আমরা আমাদের ভিশন-২০৩০তে বলা হয়েছে। কাদের কোটা রাখা হবে, কোটা কী পর্যায় আসবে তা দলের মহাসচিব বলেছেন। আমাদের দলের যে বক্তব্য তা সুস্পষ্ট।
সরকার সমর্থক ছাত্রলীগের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, “আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের উপর নিষ্ঠুর ও বর্বর নির্যাতন চালাচ্ছে ছাত্রলীগ। গত দুইদিন ধরে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে হলে ঢুকে তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বেছে বেছে নির্যাতন করেছে। কবি সুফিয়া কামাল হলে আন্দোলনে যোগদানকারী ছাত্রীদের ওপর হামলা চালিয়েছে হল ছাত্রলীগের নেত্রীরা।
“বই-কলম ছুড়ে ফেলে ছাত্রলীগ যে ক্রমান্বয়ে কসাইয়ে পরিণত হয়েছে তার প্রমাণ কবি সুফিয়া কামাল হলে এক ছাত্রীর আহত হওয়ার এই রক্তাক্ত ঘটনা। আওয়ামী লীগের নেতারা ছাত্রলীগকে পানির বদলে রক্তপাত করার পরামর্শ দিচ্ছে বলেই এতো সহিংস রক্তপাত শিক্ষাঙ্গনে। ছাত্রলীগ এমন পৈশাচিক বেপরোয়া হচ্ছে। আমরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের এই তাণ্ডবের ধিক্কার ও নিন্দা জানাচ্ছি।”
‘একতরফা নির্বাচনের আলামত’
আরপিও সংশোধনীর আইনের খসড়ায় সশস্ত্র বাহিনীকে বাদ দেওয়াকে একতরফা নির্বাচনের আলামত বলে মন্তব্য করেন রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, “গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে যে, সশস্ত্রবাহিনী যুক্ত হচ্ছে না- এই বিধান সংযোগ করে আরপিওর আইনের খসড়া করা হয়েছে। ওই খসড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে সংজ্ঞা দিচ্ছেন যেখানে বিজিবি, র্যাব, পুলিশ আছে। কিন্তু সশস্ত্র বাহিনী থাকবে না। তারা যে একতরফা নির্বাচন করবেন, সেই নির্বাচনেরই একটা আভাস ফুটে উঠছে, এর আলামত আমরা দেখতে পারছি।
“বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, সুধীজন-সুধী সমাজ, বুদ্ধিজীবী যারা নির্বাচন কমিশনের সাথে সংলাপ করেছেন তারা আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা বলেছেন। আমরা বলেছি বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন। সেটাকে বন্ধ করার জন্য সরকারের এই উদ্যোগ। আমরা মনে করি এটি হীন উদ্দেশ্য প্রণোদিত, সম্পূর্ণভাবে সংবিধানের পরিপন্থি উদ্যোগ।”
সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, শিশু বিষয়ক সম্পাদক আবদুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করীম শাহিন, সেলিমুজ্জামান সেলিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।