টাঙ্গাইলে মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার তিন ভাইসহ ১৪ আসামির বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আদালত।
Published : 06 Sep 2017, 01:52 PM
এমপি রানাকে বিচারিক আদালতে হাজির করার নির্দেশ
এমপি রানাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত টাঙ্গাইল আ. লীগের
আত্মসমর্পণের পর এমপি আমানুর কারাগারে
টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. আবুল মনসুর মিয়া বুধবার এ মামরার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুর জন্য ১৮ অক্টোবর দিন ধার্য করে দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের টাঙ্গাইল জেলা কমিটির সদস্য ফারুক আহমেদকে ২০১৩ সালে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। ওই মামলায় টাঙ্গাইল- ৩ (ঘাটাইল) আসনের এমপি রানাকে প্রধান আসামি করে তার তিন ভাইসহ মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
দীর্ঘ ২২ মাস পালিয়ে থাকার পর গতবছর ১৮ সেপ্টেম্বর সাংসদ রানা টাঙ্গাইলের আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠান বিচারক।
অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ক্ষমতাসীন দলের এই সংসদ সদস্যকে আদালতে হাজির না করায় গত নভেম্বর থেকে এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি আটবার পিছিয়ে যায়।
এই প্রেক্ষাপটে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের আরজিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ গত ২৩ অগাস্ট মামলার ধার্য দিনে এমপি রানাকে বিচারিক আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন।
সে অনুযায়ী রানা ও কারাগারে থাকা অপর তিনজনকে বুধবার সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে টাঙ্গাইলের আদালতে হাজির করা হয়। জামিনে থাকা তিন আসামিও অভিযোগ গঠনের শুনানিতে উপস্থিত হন।
মামলার প্রধান আসামি সাংসদ রানাসহ তাদের ভাইদের বিচারের দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
টাঙ্গাইলের আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, আসামিপক্ষ মামলার পুনঃতদন্ত চেয়ে এবং অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চেয়ে দুটি আবেদন করলে বিচারক তা খারিজ করে দেন।
তবে কারাগারে এমপি রানার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা চেয়ে আরেকটি আবেদন আদালত গ্রহণ করে বলে বাদীপক্ষের আইনজীবী এস আকবর খান জানান।
অভিযোগ গঠনের শুনানিতে বিচারক জানতে চান, আসামিরা দোষী না নির্দোষ। উপস্থিত আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে সুবিচার প্রার্থনা করেন।
পরে বিচারক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর তারিখ ঠিক করে দেন। আদেশের পর দুপুরেই এমপি রানাকে গাজিপুরের কাশিমপুর কারাগারের ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
মামলার বাদী ও নিহত ফারুক আহমেদের স্ত্রী নাহার আহমেদ অভিযোগ গঠন হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেন এবং ন্যায়বিচারের দাবি জানান।
মামলার আসামিদের মধ্যে এমপি রানা, আনিসুল ইসলাম রাজা, মোহাম্মদ আলী ও সমির মিয়া আছেন কারাগারে। এছাড়া সাবেক পৌর কমিশনার মাসুদুর রহমান, ফরিদ হোসেন ও নাসির উদ্দিন নুরু জামিনে আছেন।
রানার তিন ভাই টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা এবং টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জাহিদুর রহমান খান কাঁকন এবং সাংসদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কবির হোসেন, দারোয়ান বাবু ওরফে দাঁত ভাঙ্গা বাবু, যুবলীগের তৎকালীন নেতা আলমগীর হোসেন চাঁন ও ছানোয়ার হোসেন পলাতক।
তবে পরে নাহার সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, ফারুক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। সেজন্যই তাকে হত্যা করা হয় এবং টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী খান পরিবারের চার ভাই ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত।
রানাদের চাচা শামসুর রহমান খান শাহজাহান আওয়ামী লীগের নেতা ও সংসদ সদস্য ছিলেন। তার মৃত্যুর পর ভাতিজারা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন।
মামলার তদন্ত চলাকালে খান পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আনিসুল ইসলাম রাজা এবং মোহাম্মদ আলী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সেখানে রানাদের চার ভাইকে জড়িয়ে বক্তব্য দেন তারা।
হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। সেখানে রানা ও তার তিন ভাইসহ ১৪ জনকে আসামি করা হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থিতা থেকে সরে যেতে রাজি না হওয়ায় সাংসদ রানার সহযোগী কবির হোসেন পিস্তল দিয়ে ফারুক আহমদকে গুলি করেন। পরে সাংসদের নির্দেশে আনিছুল, মোহাম্মদ আলী, আবদুল হক, সমির ও কবীর লাশ নিয়ে ফারুকের বাসার সামনে ফেলে রেখে আসেন।
২০১২ সালের ১৮ নভেম্বর উপনির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সাংসদ নির্বাচিত হন আমানুর রহমান খান রানা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পার তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
রানা এক সময় টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদের চার ভাইকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেছে জেলা আওয়ামী লীগ।