এমপি রানাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত টাঙ্গাইল আ. লীগের

টাঙ্গাইলের মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার প্রধান আসামি সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা ও তার তিন ভাইকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Jan 2017, 07:06 AM
Updated : 18 Jan 2017, 06:44 AM

তবে রানার বিষয়ে জেলা কমিটির সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি এখনও ‘জানে না’ বলে দলটির দপ্তর সম্পাদক জানিয়েছেন।

সোমবার টাঙ্গাইল জেলা পরিষদ মিলনায়তনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান ফারুকের সভাপতিত্বে এক সভায় রানা ও তার ভাইদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়।

জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জেলা কমিটির সভায় ওই চারজনের সদস‌্য পদ বাতিলের এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্যে বিষয়টি কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে।

“মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকারীরা কখনোই আওয়ামী লীগে থাকতে পারে না; তাই তাদের দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

ফারুক হত‌্যার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি এমপি রানা কারাগারে থেকেই ঘাটাইলের ছাত্রলীগ নেতা আবু সাঈদ রুবেলকে হত্যার নির্দেশ দেন বলে সম্প্রতি সংবাদপত্রে খবর এসেছে।

“সভায় এ বিষয়গুলো ছাড়াও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে,” বলেন জোয়াহেরুল।

রানা টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের আহের কমিটিতে ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। বর্তমান কমিটিতে তিনি কোনো পদে নেই।

ফারুক হত্যা মামলার আসামি এমপি রানার তিন ভাই হলেন- টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা এবং টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জাহিদুর রহমান খান কাঁকন।

আমানুর রহমান রানা ও তার ভাইয়েরা

ফারুকের স্ত্রীর দাবি, তার স্বামী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। ওই পদটি চাচ্ছিলেন রানার ভাই মুক্তিও। সেজন্যই ২০১৩ সালে ফারুককে হত‌্যা করে টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী খান পরিবার।

রানাদের চাচা শামসুর রহমান খান শাহজাহান আওয়ামী লীগের নেতা ও সংসদ সদস্য ছিলেন। তার মৃত্যুর পর ভাতিজারা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন।

রানা ও তার ভাইদের বহিষ্কারের খবরে জেলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা শহরে আনন্দ মিছিল বের করে।

এ খবরে স্বস্তি প্রকাশ করে নিহত ফারুক আহম্মদের স্ত্রী নাহার আহম্মেদ হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় আওয়ামী লীগের টাঙ্গাইল জেলা কমিটির সদস্য ফারুককে।

তিন দিন পর ফারুকের স্ত্রী টাঙ্গাইল মডেল থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন।

পরে ওই মামলায় টাঙ্গাইল- ৩ (ঘাটাইল) আসনের এমপি রানাকে প্রধান আসামি করে এবং তার তিন ভাইসহ মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

দীর্ঘদিন পালিয়ে থেকে সাংসদ রানা ১৮ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলের আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠান বিচারক।

জেলা ও দায়রা জজ তার জামিন আবেদন নাকচ করে দিলে এই সাংসদ হাই কোর্টে আসেন। সোমবার ওই আবেদনের শুনানি করে বুধবার আদেশের দিন রেখেছে হাই কোর্ট। 

‘কেন্দ্র এখনও কিছু জানে না’

রানাকে বহিষ্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ সোমবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমানুর রহমান রানাকে জেলা কমিটি থেকে বহিষ্কারে তৃণমূলের সিদ্ধান্ত আমরা জানি না; এ সংক্রান্ত কিছু পাইনি।”

আমানার ‍রহমান রানা; কারাগারের পথে

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “রানা ও তার তিন ভাইকে দল থেকে বহিষ্কারে জেলা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে আসতে হবে।

“তা পাওয়ার পর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক বিষয়টি উপস্থাপন হবে। কার্যনির্বাহী সংসদ অনুমোদন করলে সংশ্লিষ্টদের কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হতে পারে। তার জবাব পাওয়ার পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ।”

এর আগে ২০১৪ সালে হজ নিয়ে মন্তব্যের পর মন্ত্রিত্ব ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর পদ হারানো আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিল করে তাকে আওয়ামী লীগ।

দল থেকে লতিফ সিদ্দিকীকে বহিষ্কারের কথা জানিয়ে স্পিকারের কাছে চিঠি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। স্পিকার তা নির্বাচন কমিশনকে জানালে কমিশন শুনানি করেছিল।

শুনানি বন্ধে আদালতে গেলেও তাতে পক্ষে আদেশ না পাওয়ার পর লতিফ সিদ্দিকী নিজেই সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন।