ভারতীয় ভিসার আবেদন নেওয়ার জন্য ঢাকার ধানমন্ডিতে একটি নতুন কেন্দ্র খোলার পাশাপাশি গুলশান কেন্দ্রে একটি বিশেষ কাউন্টার বসানো হচ্ছে, যেখানে সাক্ষাৎকারের তারিখ ছাড়াই চিকিৎসা ভিসার আবেদন করা যাবে।
Published : 22 Dec 2014, 03:34 PM
বাংলাদেশে ভারতীয় হাই কমিশনের স্বীকৃত এজেন্ট স্টেইট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
এতে বলা হয়, আগামী বছরের প্রথম দিন থেকে ধানমন্ডির ২ নম্বর সড়কের ২৪ নম্বর বাড়িতে (ধানমন্ডি সেন্টার) নতুন এ ‘ইন্ডিয়ান ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার’ (আইভিএসি) এর যাত্রা শুরু হবে।
রবি থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত এই কেন্দ্রে ভিসার আবেদন গ্রহণ করা হবে। আর ভিসা দেওয়া হবে বিকেল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত।
এর বাইরে ঢাকার গুলশান ও মতিঝিলে দুটি এবং রাজধানীর বাইরে চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা ও রাজশাহীতে একটি করে ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের মাধ্যমে সব ধরনের ভিসার আবেদন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
এর মধ্যে গুলশানের সেন্টারে একটি বিশেষ কাউন্টার খোলা হচ্ছে যেখানে জরুরি চিকিৎসা ভিসার আবেদন সরাসরি গ্রহণ করা হবে। অর্থাৎ, অন্য ভিসার ক্ষেত্রে অনলাইনে ফরম পূরণ করে পাওয়া নির্ধারিত তারিখে সেন্টারে গিয়ে ফরম জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও যারা চিকিৎসার জন্য ভারতে যেতে চান, তাদের ক্ষেত্রে ওই তারিখের প্রয়োজন হবে না।
ভারতীয় ভিসার আবেদন ফিও ৪০০ টাকা থেকে বাড়ানো হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর পাঁচটি সেন্টারে আবেদন জমা দিতে খরচ হবে ৬০০ টাকা করে। আর সিলেট বা খুলনায় লাগবে ৭০০ টাকা।
ভিসা ফির সঙ্গে ১ জানুয়ারি থেকে বদলে যাচ্ছে আবেদনকারীর ছবি দেওয়ার নিয়ম। এখন থেকে আবেদনকারীকে ছবি স্ক্যান করে অনলাইন ফরমের নির্ধারিত স্থানে আপলোড করতে হবে। তা না হলে কর্তৃপক্ষ ওই আবেদন গ্রহণ করবে না।
স্টেইট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দালাল ও মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের বিষয়েও আবেদনকারীদের সতর্ক করা হয়েছে। ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে কোনো দালালের দেখা পেলে বিষয়টি পুলিশকে জানাতেও অনুরোধ করা হয়েছে।
সেই সঙ্গে ভিসা পাওয়ার জন্য আবেদনকারীদের সঠিক ক্যাটাগরিতে আবেদন করতে এবং আসল ও পূর্ণাঙ্গ নথিপত্র জমা দিতে বলেছে কর্তৃপক্ষ।
ভিসার বিষয়ে আরো তথ্যের জন্য [email protected], [email protected] অথবা [email protected] ঠিকানায় ই-মেইলে যোগাযোগ করা যাবে।
ভিসার আবেদনের সময় সাক্ষাৎকারের তারিখ বা ‘ই-টোকেন’ পেতে হয়রানির অভিযোগ বাড়লেও ভারতের ভিসা সেন্টারগুলোতে আবেদনকারীর ভিড়ও প্রতিদিনই বাড়ছে।
ভারত সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে সর্বোচ্চ সংখ্যক বিদেশি পর্যটক ঘুরতে গেছেন, যাদের সংখ্যা দেশটিতে যাওয়া মোট পর্যটকের ১৪ দশমিক ১৫ শতাংশ।
ভারতীয় দূতাবাসের নিয়ম অনুযায়ী ভিসাপ্রার্থীরা অনলাইনে ফরম পূরণ করলে ওয়েবসাইট থেকে একটি ‘ই-টোকেন’ ও সাক্ষাৎকারের তারিখ পাবেন। নির্ধারিত তারিখে ওই টোকেন ও পূরণ করা ফরমের প্রিন্টেড কপিসহ আবেদনকারীকে সাক্ষাৎকারের জন্য উপস্থিত থাকতে হবে।
নিয়ম মেনে ওয়েবসাইটে গিয়ে ফরম পূরণ করা হলেও সাক্ষাৎকারের তারিখ ও ই-টোকেন পাওয়া যায় না বলে আবেদনকারীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ। ওয়েবসাইটে তারিখ পাওয়া না গেলেও একটি চক্র অর্থের বিনিময়ে ই- টোকেন এর ব্যবস্থা করে দেয় বলে সংবাদপত্রে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। ভারতীয় দূতাবাসের এক শ্রেণির কর্মকর্তাও এর সঙ্গে জড়িত বলে এসব প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
সাক্ষাৎকারের তারিখ পেতে একজন আবেদনকারীকে দশ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে- পাওয়া গেছে এমন অভিযোগও। এই দালালদের অনেকে নিজেদের ট্র্যাভেল এজেন্ট বলে পরিচয় দিলেও তাদের আয়ের একটি বড় অংশ ই-টোকেনের ‘বাণিজ্য’ থেকে আসে বলে গণমাধ্যমের খবর।
একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক জানিয়েছেন, ভারতের ভিসার ই-টোকেন পেতে সম্প্রতি তাকে এ ধরনের এক ট্র্যাভেল অ্যাজেন্টকে তিন হাজার টাকা দিতে হয়েছে।
আরেকজন ব্যবসায়ী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ভারতীয় ভিসার আবেদন করার জন্য তাকে এক সপ্তাহ দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তার ভিসার সাক্ষাৎকারের তারিখ পেতে ‘উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ’ প্রয়োজন হয়।
এর সঙ্গে যে হাই কমিশনের লোকজনও জড়িত- সে আভাস পাওয়া যায় ‘ই-টোকেন বাণিজ্যে’ জড়িত এক ট্র্যাভেল এজেন্টের কথা থেকেও।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ভিসা আবেদনকারীদের কাছ থেকে তারা যে অর্থ নেন তার বখরা সেই কর্মকর্তাদের পকেটেও যায়। বিনিময়ে তারা দ্রুত সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করে দেন, যা ভিসা আবেদনকারীদের জন্য জরুরি।
এই দালালদের বিষয়ে এর আগেও হাই কমিশন থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবেদনকারীদের সতর্ক করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে খোদ জাতীয় সংসদেও।
গত ৯ সেপ্টেম্বর সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেন, “ই-টোকেন নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার অবগত। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ও ঢাকায় দেশটির হাই কমিশনে বিষয়টি বার বার উত্থাপন করা হয়েছে। সমস্যা সমাধানে ভারত সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে আমাদের জানিয়েছে।”