সিরাজগঞ্জ জেলায় প্রায় পাঁচশ বছরের পুরানো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির। জেলার উল্লপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল ইউনিয়নে এই মন্দিরের অবস্থান।
Published : 26 Sep 2014, 06:56 PM
তিনতলা বিশিষ্ট এই মন্দিরের চারপাশের দেয়ালে পোড়ামাটির অলঙ্করণে ভরপুর, বাইরে থেকে দেখতে অনেকটাই কান্তজির মন্দিরের মতো। স্থানীয়ভাবে দোলমঞ্চ নামে পরিচিত এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নবরত্ন মন্দির। পূজার ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন অনিন্দ্য সুন্দর এই প্রত্নস্থল থেকে।
বাংলাদেশে প্রাচীন যেসব হিন্দু মন্দির দেখতে পাওয়া যায় সেগুলোর অন্যতম একটি এই হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির। নির্মাণশৈলীর দিক থেকে উঁচু একটি বেদীর উপর নবরত্ন পরিকল্পনায় নির্মিত মন্দিরের প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্যে ১৫.৪ মিটার এবং প্রস্থে ১৩.২৫ মিটার। ক্রমহ্রাসমান তিনতলা বিশিষ্ট তিলতলা বিশিষ্ট এই স্থাপনার উপরের রত্ন বা চূড়াগুলো প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। মূল মন্দিরের বারান্দায় সাতটি এবং ভেতরের দিকে পাঁচটি প্রবেশপথ আছে। দ্বিতীয় তলায় কোনও বারান্দা নেই।
হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির তিনতলা বিশিষ্ট। মূল মন্দিরের আয়তনে ১৫ বর্গমিটারেরও বেশি। একসময়ে মন্দিরে নয়টি চূড়া ছিলো বলে নবরত্ন মন্দির হিসেবে পরিচিতি পায়। পুরো মন্দিরের বাইরের দিক পোড়া মাটির অলঙ্করণে ঢাকা। এসব অলঙ্করণে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নানান দেবদেবীর মূর্তি, লতা-পাতা ইত্যাদি।
এ মিন্দরের নির্মাণ নিয়ে নানান গল্প প্রচলিত আছে এ অঞ্চলে। কথিত আছে, দিনাজপুরের রাজা প্রাণনাথের কাছের মানুষ ছিলেন জমিদার রামনাথ ভাদুরী। প্রাণনাথ দিনাজপুরে ঐতিহাসিক কান্তজি মন্দির নির্মাণে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে সংকটে পড়েন। ফলে বছরের রাজস্ব পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়ে পড়েন। সে সময় তাকে সাহায্যে এগিয়ে আসেন বন্ধু রামনাথ ভাদুরী। নিজ কোষাগারের টাকা দিয়ে রাজা প্রাণনাথের বকেয়া শোধ করে দেন তিনি। তবে এই অর্থ ফেরতের শর্ত হিসেবে দিনাজপুরের কান্তজি মন্দিরের রূপে হাটিকুমরুলে একটি মন্দির নির্মাণের অনুরোধ জানান।
আবার অনেকের মতে রাখাল জমিদার হিসেবে পরিচিত রামনাথ ভাদুরী তার জমিদারীর সঞ্চিত অর্থ দিয়েই এ মন্দির নির্মাণ করেছিলেন।
হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দিরের আশপাশে আরও তিনটি ছোট মন্দির রয়েছে। নবরত্ন মন্দিরের উত্তর পাশে আছে শিব-পার্বতী মন্দির। পাশে দোচালা আকৃতির চণ্ডি মন্দির এবং দক্ষিণ পাশের পুকুরের পশ্চিম পাড়ে আছে শিব মন্দির। সবগুলো মন্দিরেরই বর্তমানে দেখভাল করছে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।
প্রয়োজনীয় তথ্য
ঢাকার কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে টিআর ট্রাভেলস ও এসআর ট্রাভেলসের এসি বাস যায় ভাড়া ৫শ' থেকে সাড়ে পাঁচশ টাকা।
এছাড়া একই জায়গা থেকে টিআর ট্রাভেলস, এসআর ট্রাভেলস, শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শাহ সুলতান পরিবহন, বিআরটিসির বাস চলে বগুড়ার পথে। ভাড়া ৩শ' থেকে সাড়ে তিনশ টাকা।
হাটিকুমরুলে রাত যাপনের কোন ব্যবস্থা নেই। সারাদিন ঘুরেফিরে রাতে এসে থাকা যাবে সিরাজগঞ্জ শহরে।