খাগড়াছড়ির নতুন আর্কষণ ‘বাদুড় গুহা’র স্থানীয় নাম ‘তকবাক হাকর’।
Published : 10 Feb 2020, 12:55 PM
পাহাড়, নদী, উপত্যকা, ঝরনা আর ঝিরি নিয়ে পাহাড়ি জনপদ খাগড়াছড়ি। দেশের এই পাহাড়ি অঞ্চল পর্যটকদের কাছে বরাবরই দারুণ আর্কষনীয়। পাহাড়ের পর পাহাড়ে সাজানো চিরসবুজ অরণ্য, দেশের যেকোনো অঞ্চল থেকে এই জনপথকে আলাদা করেছে। চির রহস্যভূমির এই জনপদ যেমন পর্যটকদের কাছে আর্কষণীয় তেমনি এটি স্থানীয়দের কাছে ‘ভূস্বর্গ’। পাহাড়ের ডানায় অনিন্দ্য সুন্দরের খোঁজে এই জেলা পর্যটকদের আর্কষণ বেড়েছে।
পর্যটকদের জন্য নতুন আর্কষণ হতে পারে বাদুড় গুহা। স্থানীয় ভাষায় এটি ‘তকবাক হাকর’ নামে পরিচিত। যার অর্থ বাদুড় গুহা।
সবুজে মোড়ানো পথ ধরে যেতে হবে প্রায় ১০ কিমি। খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের আট মাইল এলাকা থেকে ভেতরে যেতে চোখে পড়বে সবুজ ল্যান্ডস্কেপ। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’র চেনা অচেনা গ্রাম। পুরো পথ জুড়ে নীরবতা। রাস্তা থাকলেও স্থানীয়দের যাতায়াত খুব একটা চোখে পড়বে না।
পাহাড়ি পথ পেরিয়ে কাঁচা মাটির সরু রাস্তা। এরপর টিলা আর পাহাড় ডিঙিয়ে এগুতে হয় মোটরসাইকেলে।
ঋতুতে শীতকাল হলেও এই পাহাড়ি পথে ঘাম ঝরাতে হবে পর্যটকদের। উঁচু পাহাড় বেয়ে নামতে হবে অন্তত ৫শ' ফুট। গভীর খাদে রয়েছে টারশিয়ান যুগের কালো পাথর। তার পাশে বয়ে গেছে ঝিরি। পাথরের গা বেয়ে নামছে পানি। স্তব্ধতা ভেঙে পাথর থেকে বেয়ে পড়ছে পানির ফোঁটা।
পাহাড় ভেদ করে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি এই গুহা দেখে হতবাক হবেন যে কেউ। প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ ফুট উঁচু গুহা। দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬৫ ফুট। প্রস্থ গড়ে ৪ থেকে ৫ ফুট। পুরো গুহার রাজ্যজুড়ে অন্ধকার। আলোর ভরসা মশাল।
মশাল নিয়ে গুহার ভেতরে যেতেই চমকে দেবে গুহার ভেতরে শীতল পরিবেশ। কিছুদূর যেতেই গুহা আরও সংকীর্ণ হয়ে ওঠে। তবে চোখ আটকে যাবে গুহার ওপরের অংশ দেখে।
নিপুণ শিল্পীর মতো পাহাড়ের ওপরের খাঁজ কাটা। গুহায় যেতে যেতে মনে হবে এ কোন অচেনা পৃথিবী! গুহাজুড়ে বাদুড়ের আস্তানা। পুরো গুহা ঘুরে আসতে বেশ সময় লাগবে।
শীতে পানির স্রোত কম হলেও বর্ষায় এটি ভরা থাকে। ঝরনার পাশে দড়ি বা গাছের লতা বেয়ে প্রায় ১শ ফুট নিচে নামতে হবে।
এখানে ঘুরতে আসা পর্যটক নয়ন দাশ, বিজন বড়ুয়া ও অজিত বড়ুয়া বলেন, “বাদুড় গুহার সন্ধান পেয়েছি স্থানীয় ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর মাধ্যমে। গুহার প্রাকৃতিক গঠন ও রোমাঞ্চ ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না।”
গুহায় যাতায়াতে নিরাপত্তার ব্যবস্থাও রয়েছে। স্থানীয় গাইডরা পর্যটকদের গুহায় ঘুরিয়ে নিয়ে আসে।
প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এই বাদুড় গুহা পরিদর্শন করেন দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ উল্ল্যাহ।
তিনি বলেন, “গুহাটি দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। যেকোনো পর্যটক এখানে আসলে রোমাঞ্চের ছোঁয়া পাবে। পর্যটকদের কাছে এটি নতুন আর্কষণ হতে পারে।”
ছবি: লেখক।
বাদুর গুহা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করতে পারেন লেখকের সঙ্গে ০১৫৫৬-৭১০০৪৩/০১৮১৫-৮৫৬৪৯৭।