মেঘালয় পর্বতমালা আর প্রাচীন লাউড় রাজ্যের শোভা দেখতে হলে যেতে হবে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ট্যাকেরঘাট।
Published : 03 Apr 2017, 05:45 PM
ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে তাহিরপুর থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম। ফাগুন মাস হলেও হঠাৎ বৃষ্টিতে জানা হয়ে গেলে পাহাড়ি অঞ্চলে বর্ষা শুরু হয়ে গেছে। প্রতি বছরের মতো এ যাত্রাতেও টাঙ্গুয়ার হাওড় ও আশপাশের অঞ্চল ঘোরাফেরা আমাদের।
যাত্রার শুরুর পর থেকেই পুরো জলপথের প্রাকৃতিক শোভা প্রাণ কেড়ে নেয়। হাওড়ের স্বচ্ছ নীলজলের সঙ্গে চারিদিকে হিজল-করচ শোভা ভারি সুন্দর। সারাদিন হাওড় চষে রাতে চলে আসি সীমান্তবর্তী এলাকা ট্যাকেরঘাট।
রাতে ট্যাকেরঘাটে বন্ধু তৌফিকের কয়লার ডিপোতে রাত্রিযাপন করলাম। চাঁদভরা সে রাতে চাঁদের সঙ্গে আমাদের মিতালি। পাহাড় আর হাওড় পাড়ে আমরা। রাতভর গান চলে, চলে খানাপিনা। যখন ঘুমাতে যাই তখন মসজিদে আজান হচ্ছে।
সেদিন আমাদের দেরি করে ঘুম থেকে ওঠার উপায় ছিলনা। দশটার মধ্যে খানাদানা তৈরি। চলে আসে মোটরবাইক, আমাদের বাহন। তারপর আবার যাত্রা শুরু। এবার গন্তব্য লাউড়ের হ্রদ।
আমরা প্রাচীন লাউড় রাজ্যের একটা অংশে রয়েছি এখন। লাউড়ের হ্রদ হয়ে চলে যাব লাকমাছড়া। লাউড়ের হ্রদ সমতলে, আর কয়েকশ ফুট ওপরে লাউড়ের টিলা। মেঘালয় পর্বতমালা ঘেঁষা লাউড়ের হ্রদ একবার দেখলে হাজার বার দেখতে ইচ্ছে করবে। এখানে এলে মনে হয় জীবন বোধ হয় কোনো না কোনোভাবে সৃজনশীলতার পরীক্ষা দিয়ে চলেছে। সেজন্য চোখে শোভা পায় সুন্দরের ছটা।
আসলে আমাদের কারও চোখ সরেনি, তবু সয়ে আসতে হয়। নয়নজুড়ানো লাউড়ের হ্রদ ঘুরে চলে আসি টিলার পাদদেশে, তারপর ওপরে ওঠা।
পুরো টিলাটাই যেন একটা পাথর। আবার বিশাল বিশাল সব গোলাকার পাথর পড়ে আছে পুরো এলাকা জুড়ে। এখান থেকে দৃষ্টি চলে যায় দূর থেকে বহুদূর। মেঘালয় পর্বতমালার একেবারে কাছাকাছি আমরা, এতটা কাছে যেন মনে হয় হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে।
ফটোসেশন শেষে আমরা টিলার ওপর থেকে নিচে নামা শুরু করি। নামতে নামতে ভ্রমণসঙ্গী রাজীব, রাসেল, বাবর আর তৌফিক ভাই টিলার ওপর মুক্তিযুদ্ধে শহীদের গল্প করেন। এভাবেই এক সময় আমরা লাকমাছড়া চলে আসি। আসলে লাকমাছড়া আমাদের মূল পরিকল্পনায় ছিল না। আমাদের বাইক চালক রাতে বলে রেখেছিলেন এর সৌন্দর্যগাঁথা। চড়াই নয় সহজপথ, না গিয়ে উপায় কী! ভেবেছিলাম দুরের পথ হবে। তবে এতটা কাছে বুঝতে পারিনি।
এখানে মেঘালয় পর্বতমালা থেকে প্রবাহিত ঝরানাধারার পানি নেমে ছড়া হয়ে নাম হয়েছে লাকমাছড়া।
লাকমাছড়া ঢোকার পর বিস্ময়ের যে ঘোরের শুরু তা কাটতেই চাইছিল না। এবার আরও বিস্ময় নিয়ে দেখি সঙ্গী-সাথী সবাই যার যার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ছে লাকমাছড়ার জলে, আমিও বাদ যাব কেনো। দেরি না করে ঝাঁপিয়ে পরশ নেই লাকমাছড়ার সু-শীতল জলের!
টাঙ্গুয়ার হাওড় ঘুরে ট্যাকেরঘাট। এখানে রাত কাটানোর জন্য কিছু গেস্ট হাউজ আছে। চাইলে দলবেঁধে নৌকাতেও রাত কাটানো যায়। পরের দিন লাউড়ের হ্রদ, টিলা ও লাকমাছড়া দর্শন করতে পারেন। তারপর আবার ট্যাকেরঘাটে রাত্রিযাপন। তারপর দিন বারিকটিলা ও জাদুকাটা নদী হয়ে ঘরে ফেরা।
সঙ্গে বাড়তি পাওনা হবে এখানকার বিশাল সব খনিজ কয়লার ডিপো এবং নতুন গড়ে ওঠা শহীদ মিনারটি!
ছবি: লেখক।