লোডশেডিং নেই বলে ভূতেরাও মানুষকে ভয় দেখাতে পারে না। তারা বিরক্ত হয়ে গেছে। সারাদিন ঝিম মেরে থাকা ছাড়া তাদের কোন কাজ নেই।
Published : 11 Aug 2022, 04:44 PM
অনেকদিন ধরে শহরে তেমন বিদ্যুৎ যায় না বললেই চলে। তাই তেমন করে অন্ধকার নামে না। ভূতেরাও মানুষকে ভয় দেখাতে পারে না। তারা বিরক্ত হয়ে গেছে। সারাদিন ঝিম মেরে থাকা ছাড়া তাদের কোন কাজ নেই।
একদিন ভূতের সরদার সভা ডাকলো। বলল, ভাইয়েরা-বোনেরা, আমার বন্ধুরা, আমরা অনেকদিন মানুষদেরকে ভয় দেখাতে পারিনি। তারা আমাদের বিশ্বাস করে না। তারা বলে ভূত বলে কিছু নেই। শুধু কিছু লোক আমাদের বিশ্বাস করে, কিন্তু তাদের নিয়ে হাসাহাসি করে সবাই। ফলে ভূতে বিশ্বাস করে, ভূতকে ভয় পায় এমন মানুষের সংখ্যা প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে। আমরা তার সংখ্যা বাড়াবো, আমরা তাদের ভয় দেখাবো।
সামনের সারিতে বসা জ্যেষ্ঠ ভূতেরা পেছনের দিকে তাকালো, পেছন থেকে সেই ভূতটি একটু ইতস্তত হয়ে উত্তর দিল, আমার নাম ঘোচাংফুং।
সভার মাঝখান থেকে একজন শিক্ষিত ভূত সামান্য কেশে উঠলো। বললো, কীভাবে তা সম্ভব, এমনিতেই তো শহরে বিদ্যুৎ যায় না, তার ওপর ওদের কাছে এখন মোমবাতি আছে, জেনারেটর আছে, আইপিএস আছে!
এমন প্রশ্নে সভায় আরও নীরবতা নেমে এলো। ভূতদের মধ্যে কানাঘুষা শুরু হলো।সরদার সবাইকে চুপ থাকার নির্দেশ দিয়ে ঘাড় উঁচু করে সামনের দিকে তাকালো। বললো, কে করলো প্রশ্নটা! তার নাম জানতে পারি?
সামনের সারিতে বসা জ্যেষ্ঠ ভূতেরা পেছনের দিকে তাকালো, সেই ভূতটি একটু ইতস্তত হয়ে উত্তর দিল, আমার নাম ঘোচাংফুং।
সরদার চোখেমুখে বিজ্ঞের ভাব নিয়ে বললো, সারা বিশ্বে জ্বালানি সঙ্কট। এখন তো লোডশেডিং শুরু হয়ে গিয়েছে। তুমি যা বলছিলে যে মানুষের কাছে মোমবাতি আছে, জেনারেটর আছে, আইপিএস আছে। এটা খুব সহজ জিনিস। আমরা মোমবাতিগুলো নিভিয়ে দেবো তাহলে; মানুষ আরও ভয় পাবে। আর জেনারেটরের সুইচগুলো অফ করে দেবো; যে চেক করতে আসবে তাকে আমরা ভয় দেখাবো। তাহলে তো আরও মজা। আর আইপিএস এর ক্ষেত্রেও একই কাজ করব।
এমন সমাধান পেয়ে ভূতেরা সবাই উল্লাস শুরু করলো। হট্টগোলের মধ্যে সরদার চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়ে বলল, সবাই বলেন- মানুষের ভয়, ভূতের জয়! মানুষের ভয়, ভূতের জয়!
কয়েক দিন পরের কথা। ভূতেরা তাদের পরিকল্পনা মতো কাজ শুরু করল। মানুষের বাসায় যেসব ভূতেরা ভয় দেখিয়েছিল তার মধ্যে একটা বাসায় রাইয়ান নামে একটা ছেলে ছিল। সে পড়ে ক্লাস টু’তে । কিন্তু সে খুব সাহসী ও বুদ্ধিমান ছিল।
এক রাতে রাইয়ানের বাবা বসে বসে টেলিভিশন দেখছিলেন। টেলিভিশনে লোডশেডিং এর কথা বলছিল। সেখানে সাংবাদিক বলছিলেন, পুরো বাংলাদেশ জুড়ে ভৌতিক লোডশেডিং হচ্ছে। এমনকি জেনারেটর, আইপিএস কিছুই কাজ দিচ্ছে না; মোমবাতিও নিভে যাচ্ছে। এমনকি যেসব জেনারেটর একদিন আগে কেনা হয়েছিল সেগুলোও কাজ দিচ্ছে না। আপনি কি বলতে পারবেন ভৌতিক কাণ্ডগুলো কেন হচ্ছে?
রাইয়ানের বাবা জেনারেটরের রুমে যাওয়ার আগেই জেনারেটর কাজ করা শুরু করল। বাবা বলল, ইঞ্জিনের কোন সমস্যা হয়েছে বোধ হয়, অনেক পুরাতন জেনারেটর তো!
কথাগুলো শুনে রাইয়ানের বাবার একটু হাসি পেল। উনি ভাবছিলেন, কথাগুলো সত্যি নাকি মিথ্যা। এগুলো ভাবতে ভাবতে রাইয়ানের মা তার বাবাকে খেতে ডাকলেন। খাওয়ার টেবিলে বসে রাইয়ানের ফুপাকে তার বাবা জিজ্ঞেস করলেন, কি আফজাল ভাই, শুনেছেন নাকি পুরো বাংলাদেশে ভৌতিকভাবে লোডশেডিং হচ্ছে?
আফজাল সাহেব উত্তরে বললেন, হ্যাঁ, শুনেছি। এক চ্যানেলে দেখলাম। মনে হলো এমনি এমনি সব ভুয়া তথ্য দিচ্ছে। আরেক চ্যানেলেও দেখলাম। সেখানেও একই কথা বলছে। একই কথা বানিয়ে বানিয়ে বলবে, এতো হয় না।
লোডশেডিং এর খবরটা নিয়ে আলোচনা করতে করতেই সবার খাওয়া শেষ হয়ে গেল। এর মধ্যে গেলো বিদ্যুৎ চলে। রাইয়ানের বাবা বলে উঠলেন, কী হলো! আমাদের এখানেও ভৌতিক লোডশেডিং শুরু হয়ে গেল নাকি?
রাইয়ানের মা বললেন, আমাদের এখানে তো জেনারেটর আছে।
রাইয়ানের বাসার জেনারেটরটা ঠিক দুই মিনিট চলল, তারপর বন্ধ হয়ে গেল। রাইয়ানের বাবা বললেন, জেনারেটরটা নষ্ট হয়ে গেল নাকি?
কী হয়েছে আমি গিয়ে দেখছি, রাইয়ানের ফুপা বললেন। একটু পরই হন্তদন্ত হয়ে ফিরে এসে বললেন, ভূত! ভূত! ওখানে ভূত আছে।
রাইয়ানের বাবা বললেন, আপনি বোধহয় কিছু ভুল দেখেছেন।
রাইয়ানের বাবা জেনারেটরের রুমে যাওয়ার আগেই জেনারেটর কাজ করা শুরু করল। বাবা বলল, ইঞ্জিনের কোন সমস্যা হয়েছে বোধ হয়, অনেক পুরাতন জেনারেটর তো!
সবাই রাইয়ানের ফুপাকে নিয়ে হাসাহাসি শুরু করলো।
ভূতেরা বললো, আচ্ছা। আর কখনও এমন করবো না। কিন্তু দেশে এত বেশি লোডশেডিং হচ্ছে, আমরা মানুষকে ভয় দেখানোর লোভ আর সামলাতে পারলাম না।
ঠিক একইভাবে দুই-তিন দিন লোডশেডিং হলো। তখন রাইয়ান একটু সন্দেহ করল যে, তার বাড়িতে ভূত এসে এগুলো করছে নাকি! পরের দিন যেই লোডশেডিং হলো, সেই রাতে রাইয়ান নিজে গিয়ে দেখতে চাইলো জেনারেটরটা কেন এরকম করছে। কেউ তাকে পাঠাতে চাইলো না; কিন্তু সে জোর করে একটা মোমবাতি নিয়ে চলে গেল জেনারেটরের রুমে।
রুমে প্রবেশ করেই সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন ভূত বলে উঠলো, হাউমাউ খাও, মানুষের গন্ধ পাও।
রাইয়ান বলল, কে তোমরা, সাহস থাকলে সামনে এসো।
রাইয়ানের উজ্জ্বল মোমবাতির আলোয় ভূতেরা ভয় পেতে শুরু করলো। কেননা তারা আগুন এবং তীব্র আলো অনেক ভয় পায়। ভূতেরা বলল, আমরা তো অদৃশ্য; আমরা দৃশ্যমান হতে পারব না। রাইয়ান বলল, তোমরা কেন এখানে এসেছ? তোমাদের মতলব কী?
ভূতেরা বলল, এতো বলা যাবে না। রাইয়ান বলল, আমি কিন্তু তোমাদের গায়ে আগুন দিয়ে দেবো। ভূতেরা বলল, দোহাই আমাদের গায়ে আগুন দিও না। তুমি যা বলবে আমরা তাই করবো। তখন রাইয়ান বলল, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর। যদি অন্য কোথাও যাও, তাহলে তোমাদের গায়ে আগুন দিয়ে দেব।
বসবার ঘরে সবাই বসে ছিল। ভূতদের সবাইকে নিয়ে বসবার ঘরে গেল রাইয়ান। এখন বলো, তোমরা সবাই এখানে কেন এসেছো? ভূতেরা সব কিছু খুলে বলল।
সব শুনে রাইয়ান বলল, তোমরা এখন আর কোন মানুষকে ভয় দেখাতে পারবে না। দেখালে তোমাদের গায়ে আগুন দিয়ে দেবো। ভূতেরা বললো, আচ্ছা। আর কখনও এমন করবো না। কিন্তু দেশে এত বেশি লোডশেডিং হচ্ছে যে আমরা মানুষকে ভয় দেখানোর লোভ আর সামলাতে পারলাম না।
তারপর থেকে ভূতেরা মানুষকে ভয় দেখানো বন্ধ করল।
কিডজ পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা [email protected] সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!