স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ‘কর্তাব্যক্তি’ চিকিৎসকদের সংগঠনের নেতাদের নিয়ে ‘অযাচিত মন্তব্য’ করেছেন অভিযোগ করে তার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)।
Published : 21 Oct 2020, 12:13 AM
মঙ্গলবার চিকিৎসকদের দুই সংগঠনের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, যখনই আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করার কথা বলা হয় তখনই এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে মূল বিষয়টি আড়ালের চেষ্টা করা হয়।
বাংলাদেশে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে থাকা নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ক্ষোভ রয়েছে।
স্বাস্থ্য খাতের বড় পদগুলোতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের রাখা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসক কর্মকর্তাদের উপেক্ষা করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে রোববার অভিযোগ করেছেন চিকিৎসক নেতারা।
তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, “অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে স্বাস্থ্য ক্যাডারসহ অন্য ক্যাডারে প্রশাসন ক্যাডারের পার্শ্ব অন্তর্ভুক্তি, চিকিৎসকদের পদমর্যাদা, চাকুরিবিধি অনুযায়ী পদোন্নতি, মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি, পদোন্নতির ক্ষেত্রে যোগ্যতা-জ্যেষ্ঠতা-দক্ষতার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের আনুগত্যের কথা বলা হয় তখনই ঢালাওভাবে চিকিৎসক নেতাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা মূল বিষয়গুলো আড়াল করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত হন।”
তবে এর বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন বিএমএ ও স্বাচিপ নেতারা: “আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার এটি একটি কৌশল মাত্র। চিকিৎসকদের মানমর্যাদা ও অধিকার ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো কাজ কিংবা সরকারের পদায়ন নীতিমালা কিংবা ক্যাডার বৈষম্য সৃষ্টিকারী যে কোনো কর্মকাণ্ডের অথবা স্বাধীনতা বিরোধীদের পুনর্বাসনে যে কোনো আদেশ-নির্দেশের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান অতীতে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।”
বিবৃতিতে বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী, স্বাচিপের সভাপতি ডা. এম ইকবাল আর্সলান ও মহাসচিব ডা. এম এ আজিজ স্বাক্ষর করেছেন।
তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘কর্তাব্যক্তি’ কে এবং তিনি কী ‘অযাচিত মন্তব্য’ করেছেন সে বিষয়ে বিবৃতিতে কিছু বলা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমএর মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী মঙ্গলবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান একটি গণমাধ্যমে বলেছেন, স্বাস্থ্যে প্রশাসন ক্যাডারে কর্মকর্তাদের পদায়ন নিয়ে চিকিৎসক নেতারা বাড়াবাড়ি করছেন।”
প্রশাসন ক্যাডারের ‘আগ্রাসনের’ প্রতিবাদ করায় স্বাস্থ্য সচিব একথা বলেছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা কি করব না করব তা উনার কাছ থেকে আমাদের শিখতে হবে? সংগঠনের নেতা হিসেবে যেটা আমাদের দায়িত্ব সেটাই আমরা করব। সে অনুযায়ী আমরা কাজ করছি, এটা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়। আমরা আমাদের পেশার মান-মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য যতটুকু করা দরকার তাই করব।”
রোববার ঢাকার একটি হোটেলে সোসাইটি অব সার্জনস অব বাংলাদেশ আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে বিএমএ ও স্বাচিপ নেতারা স্বাস্থ্য খাতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের থাকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এর সমাধান না হলে ভবিষ্যতে আন্দোলনে নামার হুমকি দেন তারা।
বিষয়টি নিয়ে সোমবার বিএমএ ভবনে দেশের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করেন চিকিৎসকদের ওই দুই সংগঠনের নেতারা।