জন্ম যাদের আজন্ম পাপ - তারা আজ আদায় করে নিয়েছে স্বীকৃতি। এশিয়ার সবচেয়ে বড় যৌনপল্লীর একটি সোনাগাছিতে বেড়ে ওঠা শিশুরা আলোকিত হয়েছেন সংগীতের আলোয়। তারা গঠন করেছে ‘দুর্বার ইউথস’ নামের একটি ব্যান্ডদল। দশ সদস্যের ব্যান্ডটির প্রথম অ্যালবাম ‘নিঝুম রাতের তারা’ দুর্গা পূজায় প্রকাশিত হয়েছে।
Published : 25 Sep 2014, 05:57 PM
সাতটি আধুনিক বাংলা গানের এই সংকলন নিয়ে যারপরনাই উচ্ছসিত ‘দুর্বার ইউথস’-এর সদস্যরা। ব্যান্ডটির অন্যতম সদস্য রতন বলেন, “এই ব্যান্ডের অধিকাংশ সদস্যই যৌনকর্মীর সন্তান। আবার কেউ কেউ আছে, যাদের যৌনবৃত্তির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই, কিন্তু তারা সোনাগাছিরই বাসিন্দা। সমাজে আমাদের আলাদা করে দেখা হয় বলে আমরা খুব বেশি প্রচারের আলো পাই না। আর তাই নিজেদের প্রতিভা দেখানোর সুযোগ পেয়ে আমরা দারুণ আনন্দিত।”
রতন নিজেও একজন যৌনকর্মীর সন্তান। ছোটবেলা থেকেই গান গাওয়ায় পারদর্শীতা থাকলেও কখনও আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ পাননি। তিনি আরও বলেন, “আমরা এর আগেও গানের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি। কিন্তু সবাই যখনই আমাদের পরিচয় জানতে পারে, তখনই মূলধারা থেকে আমাদের আলাদা করে ফেলা হয়।”
যৌনকর্মীদের সন্তানদের নিয়ে অ্যালবাম প্রকাশের এই উদ্যোগ নেয় পশ্চিমবঙ্গের ফোক ব্যান্ড কায়া। এ ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা করে প্রদেশটিতে যৌনকর্মীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ‘দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতি’।
‘দুর্বার ইউথস’-এর আরেক সদস্য মিতা বলেন, “বাড়িতে আমার বাবা আমাকে গান গাইতে দিতেন না। আমার মা নেই। পরে ১৬ বছর বয়সে আমি কাজের খোঁজে চলে আসি সোনাগাছিতে। তখন দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতি আমাকে উদ্ধার করে। আমাকে যৌনকর্মী হওয়া থেকে নিবৃত্ত করে। তখন থেকে আমি কাজ করছি তাদের সঙ্গেই। অন্য মেয়েদের উৎসাহিত করছি এ পথে না আসার জন্য। পাশাপাশি যেটা করতে আমি সবচেয়ে ভালবাসি, সেই গান আর নাচ চালিয়ে যাচ্ছি পুরোদমে।”
কায়া ব্যান্ডের গীতিকার এবং বেইজিস্ট অরিন্দম জানালেন ব্যান্ডটির অ্যালবাম প্রকাশের শুরুর দিককার কথা।
“আমরা যখন এই শিশুদের ব্যাপারে জানতে পারলাম, তখন আমরা দেখলাম কি অসাধারণ প্রতিভাধর তারা! কিন্তু এতদিন তারা কেবল জনপ্রিয় ধারার গানগুলিই বারবার করে গাইতো। আমরা তাদেরকে বললাম, তোমরা নিজেদের গান গাইছো না কেন? এরপর তাদের জন্য গান তৈরি করে দিলাম আমরা, আর তারা কণ্ঠ দিল সেটাতে।”
অরিন্দমদের কাছেই এখন গিটারের তালিম নিচ্ছেন রতন। তিনি জানালেন, প্রতিবছরই এমনিভাবে একটি করে অ্যালবাম প্রকাশের ইচ্ছা আছে তাদের।
“সামনের বছরই হিন্দি আর বাংলা গানের একটি মিশ্র অ্যালবাম প্রকাশের কথা চিন্তা করছি আমরা। ইচ্ছা আছে, এভাবে দুর্গা পূজার আগ দিয়ে প্রতি বছর একটি করে অ্যালবাম বের করার।”
অ্যালবামটির দাম রাখা হয়েছে ১২৫ রুপি। রতন জানিয়েছেন অ্যালবাম বিক্রির অর্থ ব্যায় করা হবে যৌনকর্মীদের শিশুদের কল্যাণে।