সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে।
Published : 04 Jul 2017, 11:41 PM
সুদ কমার খবরে সঞ্চয়পত্র কিনতে ভিড়
সঞ্চয়পত্র: লক্ষ্যের দ্বিগুণ ঋণ ৯ মাসেই
গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ১১ মাসেই প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের মূল বাজেটের লক্ষ্যের চেয়ে আড়াই গুণ এবং সংশোধিত বাজেটের চেয়েও ২ হাজার কোটি টাকা বেশি।
সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমার ঘোষণা আসছে- অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর ব্যাংকগুলোতে ভিড় বেড়েছে ক্রেতাদের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসসহ অন্যান্য ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাসখানেক ধরে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা মঙ্গলবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) ৪৬ হাজার ৯৭০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে।
সুদের হার কমানোর খবরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
বর্তমানে ব্যাংক আমানতের সুদের হার ৪ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে। অন্যদিকে বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পের সুদ হার ১১ থেকে ১২ শতাংশের মতো।
বেশি সুদ পাওয়ার পাশাপাশি পুঁজিবাজারে খুব বেশি আশার খবর না থাকায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সঞ্চয়পত্রই সাধারণ নাগরিকদের কাছে বিনিয়োগের নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
গত ২১ মে ঢাকা চেম্বারের নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল বলেন, সাধারণত ব্যাংক আমানতের সুদের হারের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১ বা ২ শতাংশ বেশি হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এই ব্যবধান ৪ শতাংশের বেশি।
এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে সরকারের ঋণের বোঝা বেড়ে যাবে বলেই সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে জানান তিনি।
তবে কবে থেকে কোন সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কতটা কমানো হবে সে বিষয়ে সেদিন কিছু বলেননি মুহিত।
বিক্রির লাগাম টেনে ধরতে এর আগে ২০১৫ সালের ১০ মে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদ হার গড়ে ২ শতাংশ কমানো হলেও তাতে খুব বেশি কাজ হয়নি।
বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার ২০১৬-১৭ অর্থবছরের পুরো সময়ে (১২ মাসে, জুলাই-জুন) সঞ্চয়পত্র থেকে ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল সরকার। বিক্রি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়।
সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই সরকারকে এই ঋণ বহন করতে হচ্ছে; গুণতে হচ্ছে সুদ। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে সরকারের বাজেট ব্যবস্থাপনা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে বলে হুঁশিয়ার করে আসছিলেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।
রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত বলেন, “বিক্রি যেভাবে বাড়ছে সুদের হার কমানো ছাড়া সরকারের সামনে আর কোনো বিকল্প রাস্তা নেই। তবে আমার বিবেচনায় মহিলাদের জন্য পরিবার ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার না কমানোই সমীচীন হবে।”
বিষয়টি তাই আমাদের পুনর্বিবেচনা করতে হবে। তবে, আমরা চাচ্ছি সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে যে সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে তা যেন সঠিক ব্যক্তিরা পায়। এজন্য আমরা এর একটি পুর্ণাংগ তথ্য-ভান্ডার তৈরি করবো যেখানে ক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের সাথে সঞ্চয়পত্রের তথ্যকে সম্পৃক্ত করা হবে।”
২০১৫-১৬ অর্থবছরের মূল বাজেটে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা। সুদের হার কমানোর পরও বিক্রি না কমায় সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ২৮ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়। অর্থবছর শেষে দেখা যায়, সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ৩৪ হাজার ১৫২ কোটি টাকা ধার হয়েছে।