নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে রেকর্ড

শেয়ার বাজারে ফের মন্দাভাবে সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকেছেন বিনিয়োগকারীরা, যাতে জানুয়ারিতে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে ঝুঁকিহীন এই বিনিয়োগ।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 March 2017, 04:06 PM
Updated : 5 March 2017, 04:07 PM

এই মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকায়, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি।

ব্যাংক আমানতের সুদের হার কমাকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ার মূল কারণ মনে করেছেন অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পুঁজিবাজারে চাঙ্গাভাব ফিরে আসায় অনেকেই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করায় গত বছরের ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ভাটা পড়েছিল। কিন্তু সেই চাঙ্গাভাব অব্যাহত না থাকায় আবার সবাই সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে সব মিলিয়ে ৫ হাজার ৪২০ কোটি ৫৯ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে।

তার আগের মাস ডিসেম্বরে এই বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা।

অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি বেড়েছে ২ হাজার ২৬৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বা ৭২ শতাংশ।

আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল শোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে তাকে বলা হয় নিট বিক্রি।

 

ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। সেজন্য সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ধারা চলছে কয়েক বছর ধরেই। ২০১৫ সালের এপ্রিলে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদ হার গড়ে ২ শতাংশ কমানো হলেও এর বিক্রি কমেনি।

সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, নভেম্বর মাসে ৪ হাজার ৪০২ কোটি, অক্টোবরে ৪ হাজার ২৬৬ কোটি ৬১ লাখ, সেপ্টেম্বরে ৩ হাজার ৮৫৪ কোটি ৫০ লাখ, অগাস্টে ৪ হাজার ২৯৭ কোটি ২১ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়।

জুলাই ও জুন মাসে বিক্রির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৩ হাজার ৪৯৮ কোটি ৩৭ লাখ ও ৩ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।

সে হিসাবে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সাত মাসের (জুলাই-জানুয়ারি) হিসেবে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৮৯৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭৪ শতাংশ বেশি। আর বাজেটে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৫ শতাংশ বেশি।

সঞ্চয়পত্র বিক্রি নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শেয়ার বাজারের দীর্ঘদিনের মন্দা এবং ব্যাংকে আমানতের সুদের হার কম হওয়ার কারণে এতদিন সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সঞ্চয়পত্র বেশি বিক্রি হচ্ছিল।

“গত বছরের শেষের দিকে পুঁজিবাজারে চাঙ্গাভাব দেখা দেওয়ায় অনেকেই তাদের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে সঞ্চয়পত্র না কিনে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছিল। কিন্তু পুঁজিবাজারের সেই তেজিভাব অব্যাহত না থাকায় ফের সবাই সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকেছে। সে কারণেই জানুয়ারিতে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি এত বেড়েছে।”

সঞ্চয়পত্র বিক্রির এই উল্লম্ফনে উদ্বেগ রয়েছে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের।

গত ২৯ জানুয়ারি সংসদে তিনি বলেন, “সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদ হার আমাদের অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।”