সুদ কমার খবরে সঞ্চয়পত্র কিনতে ভিড়

সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমার ঘোষণা আসছে- অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর ব্যাংকগুলোতে ভিড় বেড়েছে ক্রেতাদের।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2017, 05:34 AM
Updated : 31 May 2017, 05:34 AM

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসসহ অন্যান্য ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক দিনে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেড়ে গেছে। 

তবে বিক্রির হিসাব মাসিক ভিত্তিতে হয় বলে অর্থমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পর কত টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে তা জানাতে পারেননি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-পরিচালক ওয়াহেদ মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর থেকে সুদ কমানোর কোনো নির্দেশনা আমরা এখনও পাইনি। তবে সুদের হার কমানোর খবরে ভিড় বেশ বেড়েছে।”

বর্তমানে ব্যাংক আমানতের সুদের হার ৪ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে। অন্যদিকে বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পের সুদ হার ১১ থেকে ১২ শতাংশের মত।

পাশাপাশি পুঁজিবাজারে খুব বেশি আশার খবর না থাকায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সঞ্চয়পত্রই সাধারণ নাগরিকদের কাছে বিনিয়োগের নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এখন সুদের হার কমিয়ে দেওয়া হলে আগের হারে মুনাফা মিলবে না। এই আশংকা থেকেই গত কয়েক দিনে সঞ্চয়পত্র বিক্রির হিড়িক পড়েছে বলে ব্যাংকাররা জানান।

গত ২১ মে ঢাকা চেম্বারের নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল বলেন, সাধারণত ব্যাংক আমানতের সুদের হারের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১ বা ২ শতাংশ বেশি হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এই ব্যবধান ৪ শতাংশের বেশি।

এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে সরকারের ঋণের বোঝা বেড়ে যাবে বলেই সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে জানান তিনি। 

তবে কবে থেকে কোন সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কতটা কমানো হবে সে বিষয়ে সেদিন কিছু বলেননি মুহিত।

বিক্রির লাগাম টেনে ধরতে এর আগে ২০১৫ সালের ১০ মে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদ হার গড়ে ২ শতাংশ কমানো হলেও তাতে খুব বেশি কাজ হয়নি সে সময়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ভবনের নিচতলায় মতিঝিল অফিসে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় ব্যাংকিং সময় শুরুর আগেই সঞ্চয়পত্রের ক্রেতাদের জটলা দেখা যায়। প্রধান ফটক খোলার সঙ্গে সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের ফরম জমা দেওয়ার ডেস্কে পড়ে যায় লম্বা লাইন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আরও দীর্ঘ হয়।

শিপ্রা রানী দাশ নামে একজন তার বুয়েটে পড়া মেয়ে বিনা রানী দাশের জন্য পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে এসেছিলেন। বিনার নামে আগে দুই লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা ছিল। মঙ্গলবার আরও এক লাখ টাকার কেনা হয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শ্রিপা বলেন, “শুনছি সুদের হার কমানো হবে। তাই মেয়ের নামে আরও সঞ্চয়পত্র কিনলাম। যাতে ওর পড়ালেখার খরচটা মিটে।”

শিপ্রার মত আরও অনেকেই জানালেন, সুদের হার কমানোর আগেই সঞ্চয়পত্র কিনতে এসেছেন তারা।

পাঁচ বছর মেয়াদী এক লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্রে এখন প্রতি মাসে ৯১২ টাকা মুনাফা পাওয়া যায়। ২০১৫ সালের মে মাসে সুদের হার কমানোর আগে পাওয়া যেত ১০৭০ টাকা।

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন এসেছিলেন পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা নিতে।

তিনি বলেন, “অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করি, আমরা যারা এই সঞ্চয়পত্রের মুনাফার টাকা দিয়ে সংসার চালাই, তাদের জন্য সুদ যেন কমানো না হয়।”

বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার বিদায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে যে পরিমাণ অর্থ ধার করার লক্ষ্য ধরেছিল, দশ মাসেই তার প্রায় আড়াইগুণ নিয়ে ফেলেছে।

এ অর্থবছরের ১২ মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল সরকার। কিন্তু জুলাই-এপ্রিল সময়েই ৪২ হাজার ১০০ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে বলে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য।

সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই সরকারকে এই ঋণ বহন করতে হচ্ছে; গুণতে হচ্ছে সুদ। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে সরকারের বাজেট ব্যবস্থাপনা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে বলে হুঁশিয়ার করে আসছিলেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।

রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত বলেন, “বিক্রি যেভাবে বাড়ছে সুদের হার কমানো ছাড়া সরকারের সামনে আর কোনো বিকল্প রাস্তা নেই। তবে আমার বিবেচনায় মহিলাদের জন্য পরিবার ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার না কমানোই সমীচীন হবে।”

গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মূল বাজেটে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা। সুদের হার কমানোর পরও বিক্রি না কমায় সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ২৮ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়। অর্থবছর শেষে দেখা যায়, সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ৩৩ হাজার ৬৮৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা ধার হয়েছে।