হালদা নদীতে মা মা্ছ শিকারে নতুন নতুন কৌশল নিচ্ছে চোরাশিকারীরা। এখন তারা ব্যবহার করছে স্থায়ীভাবে বসানো গোপনীয় জাল, যাকে ‘ফিক্সড ইঞ্জিন’ বলা হয়।
Published : 09 Feb 2022, 08:12 PM
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদী দেশে কার্প জাতীয় মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহের কেন্দ্র।
এই নদীতে নিষিদ্ধ ‘ফিক্সড ইঞ্জিন’ পদ্ধতির ব্যবহার মা মাছের জন্য বড় হুমকি বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
‘ফিক্সড ইঞ্জিনে’ একটি বাঁশের একমাথা নদীর পাড়ে আটকে রেখে অন্য প্রান্তে বেহুন্দি জাল বেঁধে নদীতে পাতা হয়। জোয়ার-ভাটার মধ্যবর্তী সময়ে পানি স্থির হলেই কেবল এ জাল দৃশ্যমান হয়। অন্য সময় পানির নিচেই থাকে এই জাল। আর জাল পাতাও হয় রাতে।
বুধবার হালদা নদীর কচুখাইন থেকে হালদা-কর্ণফুলীর মোহনা পর্যন্ত অংশে বেলা ১২টা থেকে অপেক্ষায় ছিল নৌপুলিশের একটি দল। জোয়ার-ভাটার মধ্যবর্তী সময়ে বেলা সোয়া ২টার দিকে তারা একটি জাল দেখতে পায়। এরপর বিকাল পর্যন্ত টানা অভিযান চালিয়ে ২০টি ‘ফিক্সড ইঞ্জিন’ ও তিন হাজার মিটার জাল জব্দ করে।
অন্যদিকে পৃথক অভিযানে মঙ্গলবার রাতে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন হালদা নদীর ছিপাতলীর ইসলামিয়া হাট অংশ হতে ৬০০ মিটার ঘের জাল জব্দ করে।
চট্টগ্রাম নৌ পুলিশের ওসি এবিএম মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নদীর পাড়ে লম্বা বাঁশের এক মাথায় নোঙর ও পাথর দিয়ে আটকানো হয়। অন্য প্রান্তে দুই বাঁশের মাথায় বেহুন্দি জাল আটকানো হয়। এভাবে বিশেষ পদ্ধতিতে বসানো হয় ‘ফিক্সড ইঞ্জিন’। জালের শুরুর দিকটা হা করা হাঙরের মতো, আর শেষ প্রান্তে কটন কাপড়ে তৈরি ব্যাগের মতো। এর মুখে মাছ পড়লে আর বের হওয়ার সুযোগ পায় না।
“মাছ ধরতে কোনো ব্যবস্থা এরকম স্থায়ী উপায়ে বসানো হলে মৎস্য আইনে তা ‘ফিক্সড ইঞ্জিন’ হিসেবে চিহ্নিত হয়। যদিও এর সাথে কোনো যন্ত্র নেই। মৎস্য আইনে মিঠা পানির জলাশয়ে ও নদীতে এই পদ্ধতির ব্যবহার নিষিদ্ধ।”
এসব পাতা জাল আবার সুবিধামতো তুলে নেয় চোরাশিকারীরা। তাই জালের আশেপাশে কেউ থাকে না। বুধবারের অভিযানেও তাই কাউকে পায়নি নৌ পুলিশ।
হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বহু বছর আগে এই পদ্ধতিতে মা মাছ ধরা হত। আইনে নিষিদ্ধ হওয়ার পর মাঝে আর দেখা যায়নি। ইদানিং আবার এর ব্যবহার শুরু হয়েছে হালদায়।
“মা মাছ শিকার বন্ধে যতই অভিযান চলছে ও বাধা আসছে, তত নানা উপায় অবলম্বন করছে শিকারীরা। জানুয়ারির পর থেকে হালদায় মা মাছের আনাগোনা শুরু হতে থাকে। এরকম সময়ে ফিক্সড ইঞ্জিন বসিয়ে মা মাছ শিকার খুবই দুঃখজনক।”
মা মাছ রক্ষায় এ ধরনের অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, “যদি জাল যারা বসাই তাদের ধরা যেত এবং তাদের কয়েকজনকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া যেত তাহলে এই প্রবণতা কমত বলে বিশ্বাস করি।”
হালদার মা মাছ ও জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান নৌ পুলিশের ওসি মিজান।
চট্টগ্রামের রাউজান, হাটাহাজারী ও ফটিকছড়ি উপজেলার মধ্যদিয়ে বয়ে চলা হালদা নদীতে মৌসুমের প্রথম বা দ্বিতীয় ভারি বর্ষণে (এপ্রিলের শেষ বা মের শুরুতে) পাহাড়ি ঢল নামলে এবং অমাবস্যা বা পূর্ণিমার তিথি থাকলে মা মাছ ডিম ছাড়ে। সেসময় নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করে হালদা পাড়ের মৎস্যজীবীরা।