কমলা-কালো ডোরা বেঙ্গল টাইগার দম্পতি রাজ-পরীর দুটি ছানার একটি বাংলাদেশের প্রথম ‘হোয়াইট টাইগার’ বা সাদা বাঘ।
Published : 07 Sep 2018, 12:22 AM
কোনো প্রাণী সচরাচর যে রঙের হয় তার চেয়ে ভিন্ন রঙের হলে সেটি প্রাণিবিজ্ঞানের ভাষায় পরিচিত হয় ‘এলবিনো’ হিসেবে। বেঙ্গল টাইগারের ক্ষেত্রে সাদার ওপর কালো ডোরার বাঘও এলবিনো হিসেবেই গণ্য হয়।
প্রাণি বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাংলাদেশের প্রকৃতিতে এখনও কোনো হোয়াইট টাইগারের (এলবিনো) দেখা মেলেনি। এমনকি বাংলাদেশের চিড়িয়াখানা বা সাফারি পার্কেও ছিল না এই ধরনের কোনো বাঘ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রকৃতিতে ও চিড়িয়াখানায় ‘এলবিনো’দের নিয়ে মাতামাতি দীর্ঘদিনের।
সাদা কুমির ‘হোয়াইট ডায়মন্ড’ ও ‘ক্লাউডি’, গোলাপি ডলফিন ‘পিংকি’, সাদা তিমি ‘রিয়েল মবি ডিক’সহ বিশ্বব্যাপী এরকম ব্যতিক্রম ও আলোচিত প্রাণির তালিকায় যোগ হল চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার এই বাঘের ছানাটি।
দেড় মাস বয়সী ছানাটির লিঙ্গ শনাক্ত হয়েছে, এটি বাঘিনী। তবে এখনও কোনো নাম দেওয়া হয়নি ভিন্নতায় অনন্য এই বাঘিনীর।
১৯ জুলাই জন্ম নেওয়া তিনটি বাঘ শাবকের মধ্যে একটি ২০ জুলাই বাঘিনীর পায়ের চাপায় মারা যায়। মারা যাওয়া শাবকটিও ছিল এলবিনো, সেটি ছিল বাঘ।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কিউরেটর ও চিকিৎসক ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মা-বাবার জিনে স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে কিছুটা ভিন্নতার কারণে এ ধরনের প্রাণির জন্ম হয়।
“এরমধ্যে পার্শিয়াল ও ফুল পার্শিয়াল দুই ধরনের ‘এলবিনো’ হয়ে থাকে। আমাদের বাঘের ছানাটি ফুল পার্শিয়াল। এ ধরনের বাঘের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি হয়।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. গাজী সৈয়দ মোহাম্মদ আসমত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাঘ অথবা বাঘিনীর জিনে মেলানিনের মতো রঞ্জক পদার্থ কমে গেলে সাদা রঙের প্রাণির জন্ম হয়।
বাংলাদেশের কোনো চিড়িয়াখানায় এ ধরনের সাদা বাঘ নেই বলে জানান ডা. শুভ।
তিনি বলেন, বেঙ্গল টাইগারের গড় আয়ু ১৭-২০ বছর। এ বাঘটি থেকে এধরনের আরও সাদা বাঘ জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
“বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চিড়িয়াখানায় এভাবেই এ ধরনের বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। আমরাও আশা করি পারব।”
চিড়িয়াখানা পরিচালনা পর্ষদের সচিব মো. রুহুল আমীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুরুষ এলবিনো ছানাটি বেঁচে থাকলে হয়ত বংশবৃদ্ধি সহজ হত। এখন এই সাদা বাঘটি দিয়েই বংশ বিস্তারের জন্য সবরকম উদ্যোগ নেওয়া হবে। সফল হলে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় এ ধরনের আরও বাঘ থাকবে ভবিষ্যতে।”
১৯৫১ সালে ভারতে মহারাজা শ্রী মরতাঁদ সিং প্রকৃতি থেকে সর্বশেষ একটি সাদা বাঘ ধরেন। সেটির নাম দেওয়া হয় ‘মোহন’। সেটির বংশধররাই ভারতের বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় আছে।
বাঘ শাবকদের জন্য প্রথম দুই মাস ‘ঝুকিপূর্ণ’ উল্লেখ করে ডা. শুভ বলেন, ১৯ সেপ্টেম্বর শাবক দুটির বয়স দুই মাস পূর্ণ হবে। ওইদিন সেগুলোকে টিকা দেওয়ার পর ধীরে ধীরে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
রুহুল আমীন বলেন, এ বাঘটির কারণে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার দর্শক আকর্ষণ আরও বাড়বে।
অধ্যাপক আসমত বলেন, “এটি অনন্য ও চমৎকার বিষয়। এর কারণে চিড়িয়াখানার আকর্ষণ বহু গুণ বেড়ে যাবে।”
তিনি বলেন, নিয়মিত বিরতিতে এর শারীরিক পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করলেই কমলা বাঘের তুলনায় এর ভিন্নতা চোখে পড়বে।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটেরিয়ার ক্যাপটিভ ব্রিডিং প্রতিষ্ঠান ‘মাফুয়ানে গেইম রির্সোট’ থেকে বাঘ ও বাঘিনীটি সংগ্রহ করা হয় বলে তখন জানিয়েছিল চিড়িয়াখানায় পশু সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ফ্যালকন ট্রেডার্স।
৩৩ লাখ টাকায় কেনা হয়েছিল বাঘ দুটি।
এ বছরের ১৯ জুলাই বাঘ দম্পতি জন্ম দেয় তিনটি সন্তানের। এরমধ্যে একটি ছানা ২০ জুলাই মারা যায়।
বেঁচে থাকা দুটি ছানার মধ্যে একটি কমলা-কালো ডোরা আর অন্য সাদা-কালো।