আগ্রাবাদের জাম্বুরি মাঠে স্থাপনা নির্মাণের কাজ আগে থেকেই চলছে, কাজীর দেউড়ির আউটার স্টেডিয়ামেও শুরু হয়েছে সুইমিং পুলের নির্মাণ কাজ।
Published : 20 Apr 2017, 09:07 AM
পলোগ্রাউন্ড, লালদিঘী ময়দান, হালিশহরের চট্টগ্রাম আবাহনী মাঠে বছরের নানা সময়ে চলতে থাকে বিভিন্ন মেলা ও সভা-সমাবেশ।
চট্টগ্রাম কলেজ সংলগ্ন প্যারেড মাঠ খেলাধুলায় সরগরম থাকলেও পরিচর্যার অভাবে সেখানেও ক্রীড়া চর্চার পরিবেশ সঙ্কুচিত হয়ে আসছে।
চট্টগ্রামের প্রবীণ ক্রীড়া সংগঠক অধ্যক্ষ শায়েস্তা খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে মাঠে আকরাম খান, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, নুরুল আবেদীন নোবেল, আশীষ ভদ্রের মতো খেলোয়াড় উঠে এসেছে, সেই আউটার স্টেডিয়ামে খেলার সুযোগ সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে। পাড়ার ছেলেরা এখন কোনো মাঠে গিয়ে যে খেলবে ওই অবস্থা নেই, খেলোয়াড় তৈরি হবে কী করে?”
১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের করা মহাপরিকল্পনায় শিশু-কিশোরদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশকে মাথায় রেখে পুরো নগরীর ১০ শতাংশ জায়গা উন্মুক্ত রাখার বিধান রাখা হয়েছিল।
মাঠ সঙ্কটই জাতীয় ক্রীড়াঙ্গনে চট্টগ্রামের পিছিয়ে পড়ার কারণ মনে করছেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আশীষ ভদ্র।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চট্টগ্রাম অনেক পিছিয়ে পড়েছে জাতীয় ক্রীড়াঙ্গনে। খেলাধুলার আয়োজনও আগের মতো হয় না।
“সার্কিট হাউজের সামনে একসময় খোলা মাঠ ছিল, এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের সামনে মাঠ ছিল, পাঁচতারা হোটেল রেডিসনের পেছনেও একটি মাঠ ছিল। সেগুলো এখন আর নেই।”
মাঠ সংরক্ষণ ও নতুন মাঠ তৈরি না করলে জাতীয় ক্রীড়াক্ষেত্রে চট্টগ্রামের নাম একসময় মুছে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
১৯৯১ সালে জাম্বুরি মাঠের পশ্চিমাংশ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন গণপূর্ত থেকে লিজ নিয়ে শিশু পার্ক নির্মাণ করলে আগ্রাবাদ এলাকার কিশোরদের খেলাধূলার বড় জায়গাটিও বেহাত হয়ে যায়।
এরপর জাম্বুরি মাঠের অবশিষ্টাংশে গত এক যুগ ধরে স্থানীয়রা শাকসবজির চাষ করায় সেখানে কিশোর ও তরুণদের খেলাধুলার তেমন সুযোগ ছিল না।
বুধবার গিয়ে দেখা যায়, সরকারি কার্য ভবন-২ এর বিপরীতে মাঠটির চারপাশে সীমানা প্রাচীর দিয়ে বিনোদন পার্কের নির্মাণ কাজ শুরু করেছে গণপূর্ত বিভাগ।
অন্যদিকে নগরীর আরেকটি বৃহত্তম মাঠ পলোগ্রাউন্ডে গত ১৯ মার্চ থেকে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলা চলছে। এর আগে সেখানে হয়েছে চিটাগং উইমেন চেম্বারের বাণিজ্য মেলা।
নগরীর আউটার স্টেডিয়ামেও নানা মেলার আয়োজন থাকে বছরের নানা সময়। এরমধ্যে আছে কুটির শিল্পমেলা, বস্ত্রমেলা, বৃক্ষমেলা, বিজয়মেলাসহ নানা আয়োজন।
মাঠটি সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসা চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ মঙ্গলবার এক কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষেও জড়িয়ে পড়ে।
তবে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সিরাজউদ্দিন মো. আলমগীর বলছেন, খেলাধুলার স্বার্থেই সুইমিং পুল হচ্ছে।
আউটার স্টেডিয়ামে ক্রিকেট খেলতে আসা নগরীর মুসলিম হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী বিন ইয়ামিন অর্নি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাঠ টিনের বেড়া দেখে আমাদের খুব খারাপ লাগছে।
হাজী মো. মহসিন কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ফয়সাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুই নাম্বার গেটে থাকি, ওখানে কোন মাঠ নেই। সুযোগ পেলে এখানে চলে আসতাম।”
এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের সামনের অংশে যেটা জিমনেশিয়াম মাঠ নামে পরিচিত সেখানে একসময় প্রতিদিন বিকেলে কিশোর-তরুণের খেলাধুলা চোখে পড়ত। বছর দুয়েক আগে সে জায়গায়ও টেনিস কোর্ট তৈরি হয়েছে।
লালদিঘী মাঠে বিভিন্ন ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দলগুলোর নিয়মিত সমাবেশের কারণে খেলাধুলার খুব একটা সুযোগ থাকে না এ মাঠে।
ক্রীড়া সংগঠক অধ্যক্ষ শায়েস্তা খান বলেন, মাঠ সঙ্কটের কারণে শিশুদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
“জাম্বুরি মাঠে বিনোদন পার্ক নির্মাণ হচ্ছে, চট্টগ্রাম কলেজের মাঠও (প্যারেড মাঠ) খেলার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এমন একটি অবস্থা তৈরি হয়েছে যে আমরা মাঠ শব্দটা ক্রমান্বয়ে ভুলতে বসেছি।”