শেষ বলে প্রয়োজন ১ রান। কেন রিচার্ডসন ডেলিভারি দিলেন অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে। তাড়া করার চেষ্টা করলেন না দাসুন শানাকা। আম্পায়ার দিলেন ওয়াইড, ১ বল বাকি থাকতেই জিতে গেল শ্রীলঙ্কা। এমন নিস্তরঙ্গ শেষ দেখে বোঝার উপায় নেই, কতটা পাগলাটে ছিল স্বাগতিকদের ইনিংসের শেষ ৩ ওভার। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কতটা অবিশ্বাস্য জয়ে তারা এড়িয়েছে হোয়াইটওয়াশ।
Published : 11 Jun 2022, 11:11 PM
প্রথম দুই ম্যাচে ইনিংসের মাঝপথে দিক হারিয়ে হেরে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। এবার রান তাড়ায়ও সেই পথে ছিল দলটি। তবে ২৫ বলে ৬৯ রানের বিস্ফোরক জুটিতে তা হতে দেননি শানাকা ও করুনারত্নে। তাদের ব্যাটেই শেষ ৩ ওভারে ৫৯ রানের কঠিন সমীকরণ মিলিয়ে ফেলে শ্রীলঙ্কা।
পাল্লেকেলেতে শনিবার তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে ৪ উইকেটে জিতেছে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। অস্ট্রেলিয়ার ১৭৬ রান ছাড়িয়ে গেছে ১ বল বাকি থাকতে।
এক পর্যায়ে শানাকার রান ছিল ১২ বলে ৬। সেখান থেকে শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক ২৫ বলে চার ছক্কা ও পাঁচ চারে অপরাজিত থাকেন ৫৪ রানে। শেষ ১৩ বলে করেন ৪৮ রান!
পাল্লেকেলে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে অ্যারন ফিঞ্চ ও ডেভিড ওয়ার্নারের ব্যাটে ভালো শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। তবে দুই ওপেনারের কেউ বড় করতে পারেননি ইনিংস। ফিঞ্চকে বোল্ড করে ৪৩ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন মাহিশ থিকসানা।
দুই ছক্কায় ঝড়ের আভাস দেওয়া গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে দশম ওভারের শেষ বলে থামান ভানিন্দু হাসারাঙ্গা। পরের ওভারের প্রথম বলে ওয়ার্নারকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন থিকশানা। পরের বলেই রান আউট হয়ে যান জশ ইংলিস!
পরপর তিন বলে ৩ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে যায় স্টিভেন স্মিথ ও মার্কাস স্টয়নিসের ব্যাটে। জুটিতে অগ্রণী ছিলেন স্টয়নিস। ২৩ বলে এক ছক্কা ও তিন চারে তিনি করেন ৩৮ রান।
ম্যাথু ওয়েডের সঙ্গে শেষ ৪ ওভারে ৪৩ রান যোগ করেন স্মিথ। দুটি করে ছক্কা ও চারে ২৭ বলে ৩৭ রান করে অপরাজিত থাকেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।
৪ ওভারে ২৫ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন থিকসানা।
রান তাড়ায় ঝড়ের আভাস দিয়েই বিদায় নেন দানুশকা গুনাথিলাকা। তাকে ফিরিয়ে শুরুর জুটি ভাঙেন সিরিজ জুড়ে দুর্দান্ত বোলিং করা জশ হেইজেলউড। প্রথম ২ ওভারে তিনি দেন কেবল ২ রান।
দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন চারিথ আসালাঙ্কা ও পাথুম নিসানকা। সিরিজে প্রথমবারের মতো বোলিংয়ে এসে দ্বিতীয় বলেই তাদের জুটি ভাঙেন স্টয়নিস। ১৯ বলে ২৬ রান করেন আসালাঙ্কা। ২৭ রানে থামেন নিসানকা।
একটি করে ছক্কা ও চার মেরে বিদায় নেন ভানুকা রাজাপাকসে। নিজের তৃতীয় ওভারে এসে হাসারাঙ্গাকে বোল্ড করে দেন হেইজেলউড। ম্যাচ তখন প্রায় অস্ট্রেলিয়ার মুঠোয়।
ষোড়শ ওভারে ১০৮ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল শ্রীলঙ্কা। এরপরই শানাকা ও করুনারত্নের ওই মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া জুটি। হেইজেলউডকে দুই ছক্কার পর দুই চার মেরে ডানা মেলেন শানাকা। ওভার থেকে আসে ২২ রান। তারপরও ৪ ওভারে এই পেসারের খরচ কেবল ২৫ রান।
জাই রিচার্ডসনের ওভারে শানাকার ছক্কা ও চারের মাঝে একটি বাউন্ডারি মারেন করুনারত্নে। ওভার থেকে আসে ১৮ রান। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৯ রান।
বোলিংয়ে এসে কেন রিচার্ডসন দেন টানা দুটি ওয়াইড। শানাকা যখন স্ট্রাইক ফিরে পান তখন ৪ বলে প্রয়োজন ১৫ রান। টানা দুই চারের পর বোলারের মাথার উপর দিয়ে বিশাল ছক্কা মেরে দুই দলের রান সমতায় নিয়ে আসেন শানাকা। এরপর কেন রিচার্ডসনের সেই ওয়াইডে উল্লাসে ফেটে পড়ে গ্যালারি। আর্থিক সমস্যায় নাজেহাল দেশটির মানুষের মুখে তখন চওড়া হাসি।
বিস্ফোরক ইনিংসের জন্য ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন শানাকা। অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক ফিঞ্চ জেতেন সিরিজ সেরার পুরস্কার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ২০ ওভারে ১৭৬/৫ (ওয়ার্নার ৩৯, ফিঞ্চ ২৯, ম্যাক্সওয়েল ১৬, স্মিথ ৩৭*, ইংলিস ০, স্টয়নিস ৩৮, ওয়েড ১৩*; করুনারত্নে ৩-০-১৯-০, চামিরা ৪-০-৪৬-০, থিকসানা ৪-০-২৫-২, শানাকা ১-০-১০-০, হাসারাঙ্গা ৪-০-৩৩-১, জয়াবিক্রমা ৪-০-৪৩-১)
শ্রীলঙ্কা: ১৯.৫ ওভারে ১৭৭/৬ (গুনাথিলাকা ১৫, নিসানকা ২৭, আসালাঙ্কা ২৬, রাজাপাকসে ১৭, মেন্ডিস ৬, শানাকা ৫৪*, হাসারাঙ্গা ৮, করুনারত্নে ১৪* ; জাই রিচার্ডসন ৪-০-৪৬-১, হেইজেলউড ৪-১-২৫-২, কেন রিচার্ডসন ২.৫-০-৪৪-০, অ্যাগার ৪-০-২৩-১, ম্যাক্সওয়েল ৩-০-২৬-০, স্টয়নিস ২-০-৮-২)
ফল: শ্রীলঙ্কা ৪ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ২-১ ব্যবধানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: দাসুন শানাকা
ম্যান অব দা সিরিজ: অ্যারন ফিঞ্চ