৩৭ বছর বয়সে শুরু হতে যাচ্ছে ক্যারিয়ারের নতুন অধ্যায়। ৭ বছরের বিরতির পর ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতে পারলেও তা হবে অনেক বড় ব্যাপার। কিন্তু শান্থাকুমারন শ্রীশান্ত তৃপ্ত নন এতেই। ভারতীয় এই পেসার দেখছেন প্রায় অবিশ্বাস্য এক স্বপ্ন। ২০২৩ বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে খেলতে চান তিনি, এমনকি জিততে চান বিশ্বকাপের শিরোপাও!
Published : 27 Dec 2020, 09:50 AM
স্বীকৃত ক্রিকেটে শ্রীশান্থ সবশেষ খেলেছেন ২০১৩ সালের মে মাসে, আইপিএলে। স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে আজীবন নিষেধাজ্ঞা পান এরপর। তবে পরে তা কমিয়ে আনা হয় ৭ বছরে। গত সেপ্টেম্বরে শেষ হয়েছে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ। মাঠে ফেরার জন্য গত জুন থেকেই শুরু হয়েছে তার প্রস্তুতি।
এই মাসেই কেরালার একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট দিয়ে তার ফেরার কথা ছিল। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতিতে সেটা আর হয়ে ওঠেনি। তবে ক্যারিয়ারের নতুন শুরুর পথে বড় এক ধাপ এগিয়েছেন সৈয়দ মুশতাক আলি ট্রফির কেরালা দলে জায়গা পেয়ে। আগামী মাসে শুরু হবে ভারতের এই ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট। কেরালার ২৬ জনের প্রাথমিক দলের হয়ে ক্যাম্প শুরু করেছেন শ্রীশান্থ।
তার পরের চ্যালেঞ্জ কেরালার চূড়ান্ত দলে জায়গা করে নেওয়া। তবে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে শ্রীশান্থ জানালেন, এই টুর্নামেন্টই শুধু নয়, সামনে ঘরোয়া সব আসরে তিনি খেলতে চান।
“ এই টুর্নামেন্টে আমাদের প্রথম ম্যাচ হবে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে, ভারতের হয়ে আমার সবশেষ ম্যাচও এই মাঠেই (২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনাল)। জীবনের তাই একটি চক্র পূরণ হবে। কেরালা কখনোই মুশতাক আলি ট্রফি জেতেনি। কিন্তু এবার আমাদের দল দারুণ। আমি খুবই রোমাঞ্চিত। টিনু ইয়োহানান (কোচ) ও সাঞ্জু স্যামসন (অধিনায়ক) বলেছেন, ফেরা উপলক্ষ্যে তারা আমাকে ট্রফি উপহার দিতে চান।”
ফিট থাকার জন্য যথেষ্টই ঘাম ঝরাচ্ছেন শ্রীশান্থ। নিষিদ্ধ থাকার সময় তাকে বিভিন্ন বিনোদনমূলক টিভি শো ও চলচ্চিত্রে দেখা গেছে। চরিত্রের প্রয়োজনে ওজন বাড়াতে হয়েছিল। ক্রিকেটে ফেরার জন্য ট্রেনিং করে ১০৬ কেজি থেকে ওজন কমিয়ে এনেছেন ৮২ কেজিতে। নিজেকে এখন তিনি তৈরি বলেই মনে করছেন।
“ যখন খেলতে পারছিলাম না, পরিবার চালাতে অনেক কিছু করতে হয়েছে আমাকে। ঝলক দিখলা যা-তে অংশ নিয়েছি ৬ সপ্তাহ ধরে, বিগ বসে রানার-আপ হয়েছি, ফিয়ার ফ্যাক্টর করেছি। বলিউডের দুটি সিনেমায় অভিনয় করেছি। চরিত্রের প্রয়োজন অনুযায়ী শরীর বানাতে হয়েছিল। আমি সুযোগগুলো নিয়েছি, শিখেছি, আয়ও করেছি।”
“ খেলাধুলায় ভিন্ন ধরনের শরীর ও ট্রেনিং প্রয়োজন হয়। শীর্ষ স্ট্রেংথ ও কন্ডিশনিং কোচ রামজি শ্রীনিবাসনের সঙ্গে কাজ করেছি আমি। বোলিং কোচ টি শেখর আমার বোলিংয়ের নতুন ভিডিও দেখে বলেছেন, তার কাছে মনে হচ্ছে ২০০৭ বিশ্বকাপের আমাকে দেখছেন।”
শুধু ফিটনেস নয়, বোলিংয়ের গতি ও স্কিলও এখনও দারুণ বলে দাবি করলেন ২৭ টেস্ট ও ৫৩ ওয়ানডে খেলা পেসার।
“ এখন ১৩৫ থেকে ১৪৫ কিলোমিটার গতর মধ্যে বোলিং করছি। প্রয়োজন হলেই ১৪০ কিলোমিটার ছাড়াতে পারি। ভোর তিনটায় ঘুম থেকে উঠেও আউটসুইঙ্গার, ইনসুইঙ্গার, ইয়র্কার করতে পারি। আমার রান-আপ আগের চেয়ে ছোট হবে, তবে নিশানা আরও ভালো হবে।”
সবকিছু মিলিয়েই ভারতের ২০১১ বিশ্বকাপ জয়ী তারকা এখন ২০২৩ বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখার সাহস পাচ্ছেন। প্রেরণা মানছেন তিনি ক্রিকেটের ও অন্যান্য খেলার অনেক তারকাকে।
“ এটা সত্যি যে, এই বয়সে খেলাধুলায় কিছু অর্জনের বাকি থাকে না। কিন্তু তার পরও, লিয়েন্ডার পেজ ৪২ বছর বয়সে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন, রজার ফেদেরার দেখিয়ে চলেছেন। ক্রিকেটে মিসবাহ-উল-হক, ব্র্যাড হগ, শচিন টেন্ডুলকার, রাহুল দাবিড়রা দেখিয়েছেন, এই বয়সে ভালো করা সম্ভব।”
“ ফাস্ট বোলারের জন্য কাজটি সহজ নয়। তবে ফাস্ট বোলার হিসেবে যদি ইতিহাস গড়তে হয়, আমি তা-ই করব। আমার মূল লক্ষ্য ২০২৩ বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নেওয়া ও বিশ্বকাপ জয় করা।”