প্রতিভা আছে। আছে সেই প্রতিভা পরিচর্যার আন্তরিক প্রয়াস। ফিটনেস দারুণ। অনুশীলনে ঘাটতি খুব একটা চোখে পড়ে না। তার 'ওয়ার্ক এথিকস'-এ মুগ্ধ প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। বয়সভিত্তিক থেকে পরের সব পর্যায়ে পারফরম্যান্স ভালো। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এলেই যেন অথৈ সাগরে পড়ে যান নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে তাকে নিয়ে নির্বাচকদের আস্থার জায়গা তাতে নড়বড়ে হয়নি। নির্বাচক হাবিবুল বাশার যেমন নিশ্চিত, শান্ত এতটাই ‘ডায়নামিক’ যে ভরসার ফল মিলবেই।
Published : 05 Oct 2019, 05:30 PM
হাবিবুল বাশার যখন শান্তর ওপর আস্থা রাখার কথা বলছিলেন, বাঁহাতি ব্যাটসম্যান তখন বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে খেলছেন শ্রীলঙ্কায়। শনিবার শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের বিপক্ষে আনঅফিসিয়াল টেস্টে আউট হয়েছেন ৯ রান করে। সিরিজের আগের ম্যাচে করেছিলেন ৪।
লঙ্কানদের বিপক্ষে আগের সিরিজটি অবশ্য দুর্দান্ত কেটেছিল শান্তর। গত অগাস্ট-সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কা ইমার্জিং দলের বিপক্ষে একদিনের ম্যাচের সিরিজে করেছিলেন ৮, ৩৯ ও ৭৭ রান। দুটি চার দিনের ম্যাচের তিন ইনিংসে রান ছিল ১৩৩, ২৫ ও অপরাজিত ৮৮।
শ্রীলঙ্কার দুটি দলের বিপক্ষে এই দুই সিরিজের মাঝে জাতীয় দলের হয়ে দুটি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ত্রিদেশীয় সিরিজে। রান করেছেন ১১ ও ৫।
“টি-টোয়েন্টি দিয়ে শান্তকে বিচার করতে চাই না। টি-টোয়েন্টিতে এবার নেওয়া হয়েছিল, কারণ তখন খুব ভালো খেলছিল (শ্রীলঙ্কা ইমার্জিংয়ের বিপক্ষে)। ভালো টাচে ছিল বলে একটু দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য আসলে ওকে টি-টোয়েন্টি দিয়ে বিবেচনা করতে চাই না।”
কিন্তু যে দুই সংস্করণে তাকে উপযুক্ত মনে করা হয়, সেখানেও এখনও খুব উপযোগিতা দেখাতে পারেননি শান্ত। দুটি টেস্ট ও তিনটি ওয়ানডে খেলে নেই বলার মতো কোনো স্কোর।
রান না পাওয়ার চেয়ে বড় ব্যাপার হলো, ব্যাটিংয়ের ধরনেও আশার আলো খুব একটা দেখাতে পারেননি। বিশেষ করে গত বছর এশিয়া কাপে তিনটি ইনিংসে মনে হয়েছিল, যেন পুকুরের মাছকে সমুদ্রে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে!
অথচ তার পেছনে বিনিয়োগ দীর্ঘ সময়ের। বয়স কেবল ২১ হলেও অনেকদিন থেকেই তাকে গড়ে তোলা হচ্ছে যত্ন করে। রাজশাহীতে স্কুল ক্রিকেটের ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরিতে সাড়া জাগানার পর থেকেই আছেন বিসিবির সিস্টেমে। অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-১৯ দলে নিয়মিত খেলেছেন। তখন থেকেই তাকে মনে করা হয়েছে দেশের ব্যাটিংয়ের ভবিষ্যত। দুটি যুব বিশ্বকাপে খেলেছেন। যুব ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি রানের বিশ্বরেকর্ড এখনও তার।
বয়সভিত্তিক পর্যায়ে খেলার সময়ই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পা রেখেছেন। রেকর্ড যথেষ্টই ভালো। শুরুতে ওয়ানডে ব্যাটিংয়ে সীমাবদ্ধতা থাকলেও পরে বাড়িয়েছেন নিজের শট খেলার পরিধি। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও রান করছেন নিয়মিত।
তবে মেলেনি বলে মিলবেই না, তেমন মনে করেন না হাবিবুল। অনুশীলনে, ঘরোয়া ক্রিকেটসহ বিদেশি দলগুলির বিপক্ষে ম্যাচগুলিতে শান্তকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন এই নির্বাচক। তরুণ এই ব্যাটসম্যানকে খুব ভালো করে জানেন বলেই তাকে নিয়ে এখনও বড় স্বপ্ন দেখছেন সাবেক বাংলাদেশ অধিনায়ক।
“জাতীয় দলে রান করতে পারছে না। পাশাপাশি এটাও সত্যি, খুব বেশি ম্যাচও খেলেনি জাতীয় দলে। শান্তকে নিয়ে আমরা আরও বিনিয়োগ করব। কারণ এই ছেলে প্রচুর রান করেছে। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে শুধু নয়, সব পর্যায়ে রান করে জাতীয় দলে এসেছে। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েও অনেক রান করেছে। প্রিমিয়ার লিগে করেছে, ‘এ’ দলে করেছে, ফার্স্ট ক্লাসে করেছে, ইমার্জিং দলের হয়ে করেছে।”
“ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ফিটনেস, ফিল্ডিং মিলিয়ে ছেলেটা দারুণ ডায়নামিক। আমাদের এখনকার দলে প্রাণশক্তি কম। আফিফ, শান্তর মতো প্রাণশক্তিতে ভরপুর ছেলেদের লাগবে। শান্ত পারবেই, আমার বিশ্বাস আছে।”
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শান্তর শুরুটা যে ভালো হয়নি, এই মন্দেরও একটি ইতিবাচক দিক খুঁজে পাচ্ছেন ৫০ টেস্ট খেলা বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হাবিবুল।
“আমি কিন্তু একটি ইতিবাচক দিক খুঁজে পাচ্ছি। আমাদের বেশির ভাগ ক্রিকেটারই ভালো শুরু করে, পরে ধরে রাখতে পারে না। এই ছেলেটি শুরু ভালো করেনি। এজন্য অনেক খাটছে, নিজেকে পোক্ত করছে। আশা করছি সে পরে ভালো করবে।”