ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ৩০০ ওয়ানডে খেলার স্বাদ। দারুণ এই অর্জনের দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে পারলেন না ক্রিস গেইল। পারল না তার দলও। বরং বিরাট কোহলির আরেকটি সেঞ্চুরির পর ভুবনেশ্বর কুমারের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ম্যাচ জিতে নিল ভারত।
Published : 12 Aug 2019, 11:02 AM
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫৯ রানে হারিয়েছে ভারত। এগিয়ে গেছে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে। সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ভেস্তে গিয়েছিল বৃষ্টিতে।
ত্রিনিদাদে রোববার ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৭৯ রান তুলেছিল ভারত। ৪২তম ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে কোহলি করেছেন ১২০ রান। মিডল অর্ডারে ৭১ রানের কার্যকর ইনিংস খেলেছেন দলে ফেরা শ্রেয়াস আইয়ার।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসের ত্রয়োদশ ওভারে নামা বৃষ্টিতে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪৬ ওভারে ২৭০। একটা সময় সম্ভাবনা জাগালেও পুরোনো বলে ভুবনেশ্বরের ছোবলে শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেনি ক্যারিবিয়ানরা। গুটিয়ে গেছে ২১০ রানে।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা ভারতের শুরুটা ভালো ছিল না। ম্যাচের প্রথম ওভারেই শিখর ধাওয়ান ফিরে যান শেলডন কটরেলের বলে।
দ্বিতীয় উইকেটে রোহিত শর্মাকে নিয়ে ৭৪ রানের জুটি গড়েন কোহলি। তবে সেটি মূলত কোহলির সৌজন্যেই। জুটিতে ৫০ রানই ছিল তার, রোহিতের ছিল ১৮।
রোহিত শুরু থেকে ধুঁকেছেন ছন্দ খুঁজে পেতে। শেষ পর্যন্ত রোস্টন চেইসের অফ স্পিনে আউট হয়ে গেছেন ৩৪ বলে ১৮ রান করে।
চারে নেমে রিশাভ পান্ত বিদায় নিয়েছেন ২০ রান করে। ভারত ম্যাচের সেরা জুটি পেয়েছে এরপরই। কোহলিকে দারুণ সঙ্গ দেন শ্রেয়াস। চতুর্থ উইকেটে ১১৬ বলে ১২৫ রানের জুটি গড়েন দুজন।
৫৭ বলে ফিফটি ছুঁয়েছেন কোহলি, ১১২ বলে সেঞ্চুরি। শচিন টেন্ডুলকারের ৪৯ ওয়ানডে সেঞ্চুরির রেকর্ডের দিকে এগিয়েছেন আরেক ধাপ। ১২৫ বলে ১২০ রান করে তার বিদায়েই ভেঙেছে এই জুটি।
ভারতের মিডল অর্ডারে জায়গা পাকা করার লড়াইয়ে শ্রেয়াস জানিয়ে রেখেছেন নিজের দাবি। ক্যারিয়ারের প্রথম ৫ ওয়ানডেতে ২ ফিফটি ও প্রায় একশ স্ট্রাইক রেটে রান করার পরও জায়গা হারিয়েছিলেন এই প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান। দেড় বছর পর দলে ফিরে প্রথম সুযোগই কাজে লাগালেন। স্ট্রাইক বদলেছেন দারুণ দক্ষতায়, সুযোগ মতো আদায় করে নিয়েছেন বাউন্ডারি। ৭১ রানের ইনিংস খেলেছেন ৬৮ বলে।
তবে এই জুটির পর শেষ দিকে সেভাবে ঝড় তুলতে পারেনি ভারত। শেষ ১০ ওভারে এসেছে কেবল ৬৭ রান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের লক্ষ্য তার পরও ছিল কঠিন। জিততে হলে গড়তে হতো এই মাঠে রান তাড়ার রেকর্ড।
গেইল টাইমিং ঠিকমতো খুঁজে না পেলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুরুটা খারাপ ছিল না। এভিন লুইস বাড়িয়েছেন রান।
নিজের ৩০০তম ম্যাচে আরেকটি মাইলফলকের দেখা পান গেইল। ব্রায়ান লারাকে ছাড়িয়ে করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে রানের রেকর্ড। তবে মনে রাখার মতো কিছু করতে পারেননি ব্যাট হাতে। ভুবনেশ্বরের বলে আউট হয়ে যান ২৪ বলে ১১ রান করে।
এরপর শেই হোপ ও শিমরন হেটমায়ার খুব সুবিধে করতে পারেননি। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টেনেছেন লুইস। চতুর্থ উইকেটে ৫৬ রানের জুটিতে সঙ্গ দেন নিকোলাস পুরান।
৮০ বলে ৬৫ রান করে লুইস আউট হয়ে যান কুলদীপ যাদবের স্পিনে। এরপর পুরান ও চেইস ধরে রেখেছিলেন ক্যারিবিয়ানদের আশা। এক পর্যায়ে ৭১ বলে প্রয়োজন ছিল ৯১ রান, উইকেট ছিল তখনও ৬টি। কিন্তু সেই আশা শেষ করে দেন ভুবনেশ্বর।
এক ওভারেই ভুবনেশ্বর ফিরিয়ে দেন ৪২ রান করা পুরান ও ১৮ রান করা চেইসকে। নিজের পরের ওভারে বোল্ড করে দেন কেমার রোচকে। মাঝে বিপজ্জনক কার্লোস ব্র্যাথওয়েটকে বিদায় করে দেন রবীন্দ্র জাদেজা।
৪ উইকেটে ১৭৯ রান থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান হয়ে যায় ৮ উইকেটে ১৮২। ম্যাচ কার্যত শেষ ওখানেই। দশে নেমে ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৭ রান করেছেন কটরেল। কিন্তু ভারত জিতেছে অনায়াসেই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ৫০ ওভোরে ২৭৯/৭ (ধাওয়ান ২, রোহিদ ১৮, কোহলি ১২০, পান্ত ২০, শ্রেয়াস ৭১, কেদার ১৬, জাদেজা ১৬*, ভুবনেশ্বর ১, শামি ৩*; কটরেল ১০-০-৪৯-১, রোচ ৭-০-৫৪-০, হোল্ডার ৯-০-৫৩-১, টমাস ৪-০-৩২-০, চেইস ১০-১-৩৭-১, ব্র্যাথওয়েট ১০-০-৫৩-৩)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: (লক্ষ্য ৪৬ ওভারে ২৭০) ৪২ ওভারে ২১০ (গেইল ১১, লুইস ৬৫, হোপ ৫, হেটমায়ার ১৮, পুরান ৪২, চেইস ১৮, হোল্ডার ১৩*, ব্র্যাথওয়েট ০, রোচ ০, কটরেল ১৭, টমাস ০; ভুবনেশ্বর ৮-০-৩১-৪, শামি ৮-০-৩৯-২, খলিল ৭-০-৩২-১, কুলদীপ ১০-০-৫৯-২, কেদার ৫-০-২৫-০, জাদেজা ৪-০-১৫-১)।
ফল: ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে ভারত ৫৯ রানে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে ভারত ১-০তে এগিয়ে
ম্যান অব দা ম্যাচ: বিরাট কোহলি