কত ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি দেখেছে শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম। দেশের ‘হোম অব ক্রিকেট’ নামে পরিচিত এই ভেন্যু নিজেই এখন দাঁড়িয়ে সেঞ্চুরির সামনে। ত্রিদেশীয় সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি মিরপুরের এই মাঠের শততম ওয়ানডে। তবে এই মাঠ যাদের ঠিকানা, সেই মাশরাফি-সাকিব-তামিমরা থাকবেন দর্শক হয়ে।
Published : 16 Jan 2018, 09:09 PM
শের-ই-বাংলার শততম ওয়ানডেতে বুধবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলবে জিম্বাবুয়ে! নিজেদের প্রিয় ভেন্যুর মাইলফলকে পৌঁছানোর ম্যাচে খেলা হবে না বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের।
গত মার্চে নিজেদের শততম টেস্ট শ্রীলঙ্কার কলম্বোয় খেলেছিল বাংলাদেশ। লঙ্কান ক্রিকেট প্রধান থিলঙ্গা সুমাথিপালা অবাক হয়েছিলেন, মাইলফলক ছোঁয়া ম্যাচটি বাংলাদেশ দেশের মাটিতে না খেলায়। শের-ই-বাংলার শততম ওয়ানডেতে মাশরাফিদের দর্শক হয়ে থাকাটা তারচেয়ে কম অবাক করা নয়।
ক্রিকেট-ফুটবল কর্তাদের লম্বা সময়ের স্নায়ু যুদ্ধের পর শের-ই-বাংলায় স্থায়ী হয় ক্রিকেট। দেশের ক্রীড়ার মূল ভেন্যু বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম পায় ফুটবল। এক সময়ে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ভাগাভাগি করে হতো ফুটবল-ক্রিকেট। স্বাভাবিকভাবেই প্রতি মৌসুমে ফুটবল খেলার সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হত পিচ।
দুই খেলার টানাপোড়েনের মধ্যে ১৯৮৭-৮৮ মৌসুম থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত মিরপুরে হত ফুটবল লিগ। ১৯৮৮ সালের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে প্রতিপক্ষের উগ্র সমর্থক দ্বারা আক্রান্ত হয় মোহামেডান। এরপর থেকে থেকে এখানে খেলতে আপত্তি ছিল দেশের অন্যতম জনপ্রিয় এই দলটির।
২০০১ সালে প্রথমবারের মতো শের-ই-বাংলা ক্রিকেট আয়োজনের ভাবনা মাথায় আসে। সেই সময়ে মাপজোক করে দেখা যায়, মাঠের কেন্দ্র থেকে পার্শ্বের দিকে দূরত্ব ৬০ গজেরও কম। তাই ভেস্তে যায় সেই প্রচেষ্টা।
এরই মাঝে টেস্ট মর্যাদা পেয়ে যাওয়ায় ঢাকায় নিজের একটি স্টেডিয়াম খুব দরকার ছিল ক্রিকেটের। তাই আবার ক্রিকেট কর্তারা নজর ফেরান মিরপুরেই। ২০০৪ সালে সেই সময়ের ৬০ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার গ্যালারি খানিকটা ভেঙে ফেলে পাশের দিকে বড় করা হয় আউটফিল্ড। উপবৃত্তাকার স্টেডিয়াম পায় বৃত্তাকার আকৃতি। মিরপুরে এখন দর্শক ধারণ ক্ষমতা ২৫ হাজার।
২০০৬ সালের ৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে ওয়ানডে দিয়ে শের-ই-বাংলা যাত্রা শুরু করে ক্রিকেট। সেই থেকে মিরপুরের এই মাঠ দেশের মূল ক্রিকেট ভেন্যু।
৮ উইকেটে হারা একপেশে ম্যাচে জিম্বাবুয়ের হয়ে খেলেছিলেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। চোট সমস্যায় না পড়লে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠের শততম ওয়ানডেতে খেলার কথা অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে জানান, ইতিহাসের অংশ হতে উন্মুখ হয়ে আছেন তিনি।
“ঐতিহাসিক কোনো উপলক্ষের অংশ হতে পারাটা দারুণ। আমরা এই মাঠের প্রথম ওয়ানডেতে খেলেছিলাম। ইতিহাসের অংশ হতে পারাটা অসাধারণ।”
“এখানে আমাদের দারুণ কিছু স্মৃতি আছে। এবারের সফরে আরও কিছু অর্জনের দিকে তাকিয়ে আছি আমরা।”
ওয়ানডেতে মিরপুরে অনেক অর্জন বাংলাদেশের। ২০১০ সালে নিউ জিল্যান্ডকে ৪-০ ব্যবধানে হারানো। ২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলা। ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জয়।
সাফল্য আছে অন্য সংস্করণেও। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট জয় বাংলাদেশের ক্রিকেটকে করেছে সমৃদ্ধ। ২০১৬ এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টির ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ।
সাম্প্রতিক সময়ে শের-ই-বাংলায় দুর্দান্ত বাংলাদেশ। এই মাঠে শেষ ২০ ওয়ানডের ১৬টিতেই জিতেছে তারা, হেরেছে মাত্র চারটিতে। মিরপুরে শেষ দুটি টেস্টেই জিতেছে স্বাগতিকরা। টি-টোয়েন্টিতে শেষ চার ম্যাচের তিনটিতে জিতেছে বাংলাদেশ।
শের-ই-বাংলায় নিজেদের মেলে ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেট ছুটছে নতুন উচ্চতায়। সেখানে স্টেডিয়াম নিজে যেন যাচ্ছে উল্টো পথে। সবশেষ টুর্নামেন্ট বিপিএলে সমালোচিত হয়েছে এই মাঠের পিচ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সবশেষ টেস্ট ম্যাচে মিরপুরের আউটফিল্ডকে বাজে বলেছে আইসিসি।
বাংলাদেশ তো বটেই উপমহাদেশের সেরা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা শের-ই-বাংলায়। তুমুল বর্ষণের পরও বৃষ্টি থামার পর খেলা শুরুর জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় না মিরপুরে। তবে মাঠের ঘাস আর আগের মতো সবুজ নয়। বাদামী ঘাসের শের-ই-বাংলা যেন নিজের সেরা সময়ের ছায়া।