জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের অন্ধকারের পানে ছোটার দিনগুলোতে বলতে গেলে একমাত্র আলোকবর্তিকা ছিলেন টাটেন্ডা টাইবু। তবে কালো রাজনীতির কাছে অসহায় হতে হয়েছে তাকেও। এক পর্যায়ে ২০১২ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়সেই ক্রিকেট ছেড়ে আশ্রয় নেন চার্চের শান্তির ঠিকানায়।
Published : 16 Jan 2018, 07:56 PM
তবে দেশের ক্রিকেটের ডাকেই আবার ফেরেন ২০১৬ সালে। দায়িত্ব নেন প্রধান নির্বাচকের, পাশাপাশি বোর্ডের হাই পারফরম্যান্স ও ডেভেলপমেন্ট বিভাগের। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে গত কিছুদিনে ইতিবাচক পরিবর্তনের ছোঁয়া তার হাত ধরেই। এবার দলের সঙ্গে এসেছেন বাংলাদেশে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বললেন তার পরিকল্পনা ও জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের নানা বাস্তবতা নিয়ে।
জিম্বাবুয়ের সাবেক অধিনায়কের কণ্ঠে উঠে এল বাংলাদেশের সঙ্গে মাঠের ক্রিকেটে এক সময়কার তুমুল লড়াই আর মাঠের বাইরে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কের প্রসঙ্গও।
বাংলাদেশের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক অনেক দিনের। ফিরে কেমন লাগছে?
টাটেন্ডা টাইবু: বাংলাদেশে ফিরে দারুণ লাগছে। দেশে অনেক বন্ধুর সঙ্গে কথা হচ্ছে। ওরা বলছে, ‘টাটেন্ডা, বাংলাদেশ তো তোমার দ্বিতীয় বাড়ি।’ ক্রিকেট খেললে বিশ্বজুড়ে অনেক বন্ধুত্ব গড়া হয়ে যায়। সত্যি বলতে, অন্য সব জায়গার চেয়ে এশিয়াতেই আমার বন্ধু বেশি। তার মধ্যে বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি।
আসলে বন্ধুত্ব ছাপিয়ে এখানে আমার পরিবার গড়ে উঠেছে। যেমন, রিয়াজ মামুন (সাবেক বিসিবি পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন আল মামুন) আমার ভাইয়ের মত। এয়ারপোর্টে নেমেই সবসময় আমি ওকে ফোন দেই।
ক্রিকেট থেকেও দূরে ছিলেন অনেক দিন!
টাইবু: বছর চারেক দূরে ছিলাম। যখন দূরে ছিলাম, তখন পুরোপুরিই দূরে ছিলাম। ক্রিকেটের সঙ্গে সংম্পর্ক ছিলই না বলতে গেলে। ফেরার পর তাই আবার মানিয়ে নিতে বছর খানেক লেগে গেছে। এই সময়ে ক্রিকেট যেভাবে এগিয়েছে তার সঙ্গে এখন অনেকটাই মানিয়ে নিয়েছি।
বাংলাদেশ ভালো থেকে আরও ভালো হয়ে উঠেছে। জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটে উত্থান-পতন এসেছে। এখনও অনেকটাই দোদুল্যমান। আমি চেষ্টা করছি পরিস্থিতি বদলাতে।
ক্রিকেট থেকে দূরে থাকা কতটা সহজ বা কঠিন ছিল?
টাইবু: সত্যি বলতে, আমার ধরনটা হলো, যখন কিছু করি, আমার মতো সবটুকু উজার করে দেই। যখন আমি খেলেছি, তখন থেকেই। এমন একটা খেলাও নেই, যেখানে আমি শতভাগ দেইনি। এটাই আমার চরিত্র।
চার্চে যখন ছিলাম, আমি ছিলাম ট্রাস্টি। পাশাপাশি অসুস্থদের জন্য প্রার্থনা করতাম। তবে ট্রাস্টি হলে চার্চের সব সম্পদের দেখভাল করতে হয়। সেটি করার জন্য পুরোপুরি নিবেদন দরকার।
এখনও আমি অসুস্থদের জন্য প্রার্থনা করি। তবে ট্রাস্টির কাজ ছেড়ে দিয়েছি। এজন্যই অন্য কিছু করার সময় পেয়েছি। আমাদের চেয়ারম্যানও (জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের চেয়ারম্যান তাভেংওয়া মুকুলানি) একসময় অনুরোধ করে ক্রিকেটে ফিরতে। বছর খানেক ধরে তার অনুরোধ আমি উপেক্ষা করেছি। শেষে আমি রাজি হয়েছি। এখানে ফিরেও আমি শতভাগ দেব। পালিয়ে যাব না। নিশ্চিত করব, যেটাই করি না কেন, সেখানে যেন স্থায়ী প্রভাব রাখতে পারি।
ফেরার অনুরোধ বছর খানেক উপেক্ষা করেছেন বললেন, শেষ পর্যন্ত কি ভেবে ফিরলেন?
টাইবু: প্রথম কারণ যেটি বললাম, এখন আমার হাতে সময় আছে। ট্রাস্টি থাকার সময় সেটা সম্ভব ছিল না। কারণ সেক্ষেত্রে আমি শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম না। শতভাগ দিতে না পারলে আমি কোনো কাজ করি না।
রাজি হওয়ার আরেকটি ছোট কারণ, বর্তমান চেয়ারম্যানের প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ। আমাদের সম্পর্ক অনেক দিনের। তার ব্যক্তিগত অনুরোধ ছিল আমার প্রতি। কারও ব্যক্তিগত অনুরোধ ফেলা ঠিক নয়।
বয়স কেবল ৩৪, এখনও অনয়াসেই খেলতে পারতেন। ২৯ বছর বয়সেই ক্রিকেট ছাড়ার কারণে এখন আক্ষেপ হয় না?
টাইবু: আমি যেখানেই যাই, প্রতি দুইজনের একজন একই কথা বলে, ‘টাটেন্ডা, তুমি এখনও দারুণ ফিট। এখনও খেলতে পারো।’ লোকে এসব বারবার বলছে। তবে আমার নিজের কাছে তো শতভাগ নিশ্চিত হতে হবে যে আমি শতভাগ দিতে পারব। সত্যি বলতে, আবার খেলা নিয়ে আমি গভীরভাবে ভাবিনি। আমাকে যে ভূমিকা দেওয়া হয়েছে, কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছি, এই মুহূর্তে সেখানেই শতভাগ দিচ্ছি। অন্য পথে হাঁটা নিয়ে আমি আসলে ততটা নিশ্চিত নই।
যখন ফিরলেন ক্রিকেটে, নির্বাচক না হয়ে ক্রিকেটার হয়েও তো ফিরতে পারতেন!
টাইবু: ব্যাপারটা হলো, এটা যদি নিজের ভেতর থেকে আসত যে আমি খেলতে চাই, তাহলে আমি সেটা করতে পারতাম। কিন্তু এটা বলছে লোকে। বলছে অন্যরা। আমি নিজে তাগিদ অনুভব করিনি। তাই সেভাবে ভাবিনি এটা নিয়ে।
নতুন ভূমিকায়ও দারুণ কাজ করছেন। টেইলর-জার্ভিসদের ফিরিয়ে এনেছেন আপনিই। কিভাবে সেটি সম্ভব হলো?
টাইবু: আমার নেওয়া কিছু উদ্যোগের মধ্যে এটা অন্যতম। টেইলর আমার নেতৃত্বে খেলেছে, জার্ভিসও। মাঠে একসঙ্গে খেললে একটি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ জন্ম নেয়। আমি যখন ওদের সঙ্গে কথা বলি, ওদের চোখে সেই শ্রদ্ধা দেখেছি। কারণ যে বন্ধনটা ছিল বা আছে, সেটিই প্রথমে মাথায় আসে। খারাপ সময়ে আমরা একসঙ্গে লড়াই করেছি, ভালো সময় একসঙ্গে উপভোগ করেছি। আমার সঙ্গে কথা বলার পর তাই ওদের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ ছিল।
ওরা জানে যে আমি যখন সম্পৃক্ত হয়েছি, এমনভাবে কাজ করব যেটা আমি ওদের সঙ্গে খেলার সময় করেছি। ওরা জানে, আমি শতভাগ চেষ্টা করব সবকিছু মসৃণভাবে পরিচালনা করার। ক্রিকেট পরিচালনার ক্ষেত্রে সবসময়ই ক্রিকেটার ও কর্মকর্তা বা ক্রিকেটার ও বোর্ডের মাঝে ঝামেলার সুযোগ থাকে। কিন্তু ওরা জানে, আমি যখন কর্মকর্তা, তখন আমি সবকিছু ভালোভাবে করার চেষ্টা করব। এসব কারণে ওরা দেশের হয়ে ফেরার সিদ্ধান্ত নিতে আত্মবিশ্বাসী হয়েছে।
জিম্বাবুয়ে জাতীয় একাডেমিও গড়েছেন ফেরার পর!
টাইবু: নির্বাচক হওয়ার পর আমি সম্ভাব্য সব ক্রিকেটারের তালিকা নিলাম, যাদের জাতীয় দলে নিতে পারি। তাকিয়ে দেখলাম, তালিকা খুব ছোট। আমি তাই চিন্তা করেছি, কিভাবে আরও ক্রিকেটার পেতে পারি। শুধু ক্রিকেটার নয়, সঠিক মানসিকতার ক্রিকেটার। আমার মানসিকতা যেমন ছিল।
আমি তাই ভাবলাম, যদি একটি একাডেমি গড়ি, আমি চেষ্টা করব ওদের আমার মতো করে গড়ে তুলতে। চাইব জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটে আরও টাটেন্ডা টাইবু তুলে আনতে। এমন নয় যে, আমার সামর্থ্য অসাধারণ ছিল। তবে আমার হৃদয় ছিল বিশাল। হৃদয় দিয়ে ক্রিকেট খেলেছি। আমি সেটাই ভেবেছি যে, এমন ক্রিকেটার যদি বের করতে পারি যারা হৃদয় দিয়ে খেলবে, তাদের বেশিরভাগই জাতীয় দলে জায়গা করে নেবে। তখন আমাদের দল শক্ত হবে।
আমাদের একাডেমি হারিয়ে গিয়েছিল। আমি ফিরিয়ে এনেছি। একাডেমির ছেলেদের ৬ মাসের জন্য ইংল্যান্ডে নিয়ে যাচ্ছি। ওদের দেখভাল করছি। ৬ মাসে ওরা অন্তত ৫০টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছে। ম্যাচ খেললে অনেক অভিজ্ঞতা হয়, জানে কিভাবে পেশাদার হয়ে উঠতে হয়, ব্যালান্স করতে শেখে, কঠোর পরিশ্রম করতে ও স্মার্টলি পরিশ্রম করতে শেখে।
আমি ১৮ থেকে ২২ বছর বয়সী ছেলেদের টার্গেট করছি একাডেমির জন্য। ফলাফল হয়ত এখনই দৃশ্যমান হবে না। তবে ৪-৫ বছর পরে এই ছেলেরা যখন আরও পরিণত হবে, তখন জিম্বাবুয়ে দলের চেহারা বদলে যাবে।
জিম্বাবুয়েতে তো মাঠের অভাব নেই। তার পরও তারা পিছিয়ে পড়ছে কেন?
টাইবু: একাডেমি শুরু করার এটিও কিন্তু অন্যতম কারণ। কারণ কোনো অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে ওপরে ওঠার কোনো হাই পারফরম্যান্স পথ-পরিকল্পনা নেই। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে ওরা ভালোই করে। কিন্তু এরপর জাতীয় দলে আসার সঠিক পথ পায় না। ভাগ্যবান কয়েকজন প্রাদেশিক দল থেকে ডাক পায়। মাত্র চারটি প্রাদেশিক দল আছে। এছাড়া আর কোনো পথ নেই।
গত দুই বা তিনটি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলা দল থেকে কজন জাতীয় দলে এসেছে? সেটিই বলে দিচ্ছে, উপযুক্ত পথ নেই। এজন্যই একাডেমি চালু করেছি। সেখান থেকে আরও ছড়িয়ে দিতে হবে।
মাঠ অনেক আছে। কিন্তু সেগুলোর অনেক কটাই নষ্ট হচ্ছে। ক্লাব ক্রিকেট আগে যেমন ছিল, তেমন নেই। বাংলাদেশ থেকে এই একটি জায়গায় আমরা এগিয়ে, আমাদের মাঠ বেশি। বাংলাদেশে যত ক্রিকেট হয়, সব ভালো ভাবে হওয়ার মত মাঠ নেই। আমাদের মাঠের অভাব নেই। কিন্তু আমাদের যথেষ্ট ক্রিকেটার নেই। ফুটবল থেকে ক্রিকেটে আগ্রহী করা কঠিন। বাংলাদেশে সবাই ক্রিকেট খেলে। ক্রিকেট নিয়ে যে কারও সঙ্গে কথা বলা যায়। সবাই জানে। এয়ারপোর্টে নামা মাত্র সবাই চারপাশ থেকে বলছিল, “টাটেন্ডা টাইবু, টাটেন্ডা টাইবু।” আমি ভাবছিলাম, চার বছর ক্রিকেট থেকে পুরোপুরি দূরে থাকার পরও সবাই এতটা চেনে!
আমাদের দেশে যেটা সম্ভব নয়। এজন্যই হাই পারফরম্যান্সের দিকে নজর দিচ্ছি।
ক্যারিয়ারের শুরুতে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের সঙ্গে খেলেছেন। অসাধারণ ক্রিকেটার ছিলেন, পরে কোচ হিসেবেও সফল। তার কাছ থেকে কতটা শিখেছেন?
টাইবু: অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের নেতৃত্বে ও তার সঙ্গে খেলা ছিল আমার জন্য বড় সম্মান। দুজনই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান বলে একসঙ্গে অনেক অনুশীলন করেছি। সময় কাটিয়েছি। অনেক কিছু শিখেছি তার কাছ থেকে। সেসবের অনেকগুলোই এখন আমি এখনকার ক্রিকেটারদের শেখাচ্ছি।
আমি সবসময় অনুভব করেছি, ক্রিকেট ক্যারিয়ারে আমি যা শিখেছি, তা অন্যদের সেভাবে শেখাতে পারিনি সেসময়। নিজের কাজেই লাগিয়েছি। আমার মনে হয়েছে, অন্যদেরও শেখানো উচিত। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দেওয়া উচিত।
জাতীয় দলের হয়ে বাংলাদেশে খেলেছেন। খেলে গেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে। অনেক বন্ধুর কথা বললেন। কিন্তু মাঠের ক্রিকেটে বাংলাদেশে আপনার প্রিয় স্মৃতি কোনটি?
টাইবু: কিছু ক্রিকেটার থাকে, যাদের সঙ্গে খেলাটা আমরা উপভোগ করি। তার মানে এই নয় যে তাদের বিপক্ষে খেলা সহজ। উপভোগ করি তারা যেভাবে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়। আমার কাছে রফিক ছিল দারুণ চ্যালেঞ্জিং, যেটা আমি উপভোগ করতাম। আমার চরিত্রের ধরণটা এমন ছিল যে সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষকেই চ্যালেঞ্জ করতাম। সেসময় রফিক ছিল সবচেয়ে কঠিন বোলার। তার সঙ্গে লড়াই উপভোগ করতাম।
কালকে হাবিবুল বাশারের সঙ্গে এসব নিয়েই কথা বলছিলাম। বলছিলাম যে রফিক, আশরাফুল, খালেদ মাসুদ, সেই সময়ের ক্রিকেটারদের সঙ্গে আমরা কিছু সময় কাটাতে পারি কিনা।
সে সময় মুর্তজা (মাশরাফি) ছিল তরুণ। কিন্তু এটা ফুটে উঠত যে, ছেলেটি লড়াকু। আজ যে সে এত সফল অধিনায়ক হয়ে উঠেছে, আমি একটুও অবাক হইনি। কারণ সেই বয়সেও তার ভেতরে আগুনটা ছিল। চ্যালেঞ্জ জানাতে ভয় পেত না।
এই চ্যালেঞ্জগুলো, এই স্মৃতিগুলো আমার দারুণ প্রিয়। ক্রিকেটে সেঞ্চুরি বা দারুণ কোনো পারফরম্যান্সই সব কিছু নয়। আমার কাছে প্রিয় সেই ছোট ছোট মুহূর্তগুলো যেটি ছিল দারুণ চ্যালেঞ্জিং। সেই চ্যালেঞ্জ জয়ের পর যখন প্রতিপক্ষ করমর্দন করে, পিঠ চাপড়ে দেয়, তখনই পারস্পরিক শ্রদ্ধা বাড়ে। এভাবেই বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।
আপনার একমাত্র টেস্ট সেঞ্চুরিও বাংলাদেশে, ২০০৫ সালে খেলেছিলেন ১৫৩ রানের অসাধারণ ইনিংস। সেই স্মৃতি কতটা দোলা দেয় ?
টাইবু: আমার সর্বোচ্চ টেস্ট ইনিংস সেটিই। যে অবস্থায় ছিল তখন দল, সেই কারণে বেশি মনে রাখার মত। ৬০ রানে ৪ উইকেট বা এরকম অবস্থা ছিল দলের (৩৭ রানে ৪ উইকেট)। সেখান থেকে ব্রেন্ডন টেইলরের সঙ্গে বড় জুটি গড়ে ওঠে, যেটি ম্যাচের চিত্র পাল্টে দেয়। অবশ্যই মনে পড়ে।
একটা কথা বলার আছে, শুনেছি সেই মাঠে (বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম) এখন আর ক্রিকেট হয় না। এখন ফুটবল মাঠ। আমার প্রিয় মাঠগুলোর একটি ছিল। কী আর করা, কখনও সময় পেলে ফুটবল খেলা দেখতে যেতে হবে!
শেষটায় আবার চার্চে ফেরা যাক। চার্চের জীবনের সঙ্গে ক্রিকেট জীবনের তুলনা করতে বললে…
টাইবু: তখন আমি ক্রিকেট দেখতাম না। ক্রিকেট এমনিতেই খুব বেশি দেখি না আমি। টুকটাক খবর রাখি। আমি আসলে আমার মাথা পরিষ্কার রাখতে চাই। নতুন ভাবনা নিয়ে আসার, নতুন পথ বের করার চেষ্টা করি।
আর চার্চে কাজ করাটা আসলে ভিন্ন এক জগত। অসুস্থদের জন্য প্রার্থনা করা, হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া ব্যাপার। একাগ্রতার ব্যাপার। বেশির ভাগ সময়ই এমন রোগী আসে, যাদের নিয়ে ডাক্তাররা হাল ছেড়ে দিয়েছেন। মেডিক্যালি ডাক্তাররা আর কিছু করতে পারছেন না। কিন্তু স্রষ্টা তখনও কিছু করতে পারেন চাইলে। এমন অসুস্থ কেউ যখন আসে, যাদের আশা প্রায় শেষ, তাদের হয়ে প্রার্থনা করার পর তারা যখন সুস্থ হয়ে ওঠে, সেই ভালো লাগা বলে বোঝানোর নয়। আমার ক্ষেত্রে যেটা চারবার হয়েছে।
আমি ক্রিকেট ভালোবাসতাম, এখনও বাসি। কিন্তু যদি দুটি ভালো লাগার তুলনা করতে বলেন, চার্চের ওটা হলো জীবন বদলে দেওয়া অভিজ্ঞতা। এখন ভাবলেও এত ভালো লাগে! আমি সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি করতে পারি, কিন্তু একজন অসুস্থ মানুষের জন্য প্রার্থনা করার পর তিনি সুস্থ হলে সেই ভালো লাগার তুলনীয় কিছু নেই।