উইকেট-মাঠ ঠিক আছে। কিন্তু চারপাশের প্রায় কিছুই ঠিক নেই। গ্যালারি, মিডিয়া সেন্টার, সাইটস্ক্রিন, হসপিটালিটি বক্স - সবই যেন ধ্বংসস্তূপ। প্রায় দেড় বছর আগের এক ঝড়ে তছনছ হয়ে যাওয়ার চিহ্ন এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম।
Published : 15 Sep 2017, 12:01 PM
১৯তম জাতীয় ক্রিকেট লিগের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে এখানেই মুখোমুখি হয়েছে খুলনা ও রংপুর বিভাগ। উইকেট-আউটফিল্ড ভালো থাকায় খেলা চালাতে সমস্যা নেই। কিন্তু বাকি সবকিছুই শ্রীহীন।
২০১৬ সালের ৫ এপ্রিল প্রকৃতি ছোবল দিয়েছিল খুলনায়। এই স্টেডিয়ামের ভেন্যু ম্যানেজার আব্দুস সাত্তার কচির চোখে ভাসে সেই ভয়াবহতা, “প্রথমে হলো কালবৈশাখী, এরপর সেদিন সন্ধ্যাতেই টর্নোডো। নিমিষেই ওলট-পালট হয়ে গেলো স্টেডিয়ামের সব কিছু।”
একই দশা সবকটি হসপিটালিটি বক্সের। কাঁচ ভাঙা, চেয়ার ভাঙা, মেঝে আর দেয়ালের অবস্থা যাচ্ছেতাই। উল্টো প্রান্তে মিডিয়া সেন্টার, প্রেসবক্স ও মিডিয়া ডাইনিংয়ের অবস্থাও একই।
ট্রাইভিশন সাইটস্ক্রিনের অবস্থা দেখে মনে হলো, পিটিয়ে সেসব গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় লিগের জন্য বাঁশের সেই সনাতন সাইটস্ক্রিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ড্রেসিং রুমের এসি নষ্ট ছিল। জাতীয় লিগের জন্য কয়েকদিন আগে সারানো হয়েছে।
চারপাশে ধ্বংসজজ্ঞের যেসব নমুনা চোখে পড়ল, তার সঙ্গে আরও যোগ করলেন ভেন্যু ম্যানেজার।
“সমস্ত গ্লাস ভেঙেছে। মিডিয়া সেন্টারের এক ট্রাক ভাঙা গ্লাস সিটি কর্পোরেশনের ট্রাকে করে বাইরে ফেলে এসেছি। মিডিয়া সেন্টারের ওপরে ব্রডকাস্টারের যন্ত্রপাতির টিনের স্থাপনা ছিল। সেটা উড়ে এই পাশে এসে পড়েছে।”
এই মাঠে সবশেষ টেস্ট হয়েছিল ২০১৫ সালে, পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলেছিল বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সবশেষ হয়েছে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে। জিম্বাবুয়ে-বাংলাদেশ সিরিজের চারটি টি-টোয়েন্টিই হয়েছিল এখানে। এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে বয়সভিত্তিক নানা প্রতিযোগিতা, সবই হচ্ছে এখানে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নেই বলে নেই সংস্কারের আগ্রহও।
সেই জিম্বাবুয়ে সিরিজের আগেই গ্যালারির অবস্থা ছিল করুণ। এরপর রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে গ্যালারি আরও হতশ্রী। ড্রেসিংরুম লাগোয়া দুপাশের গ্যালারিই শুধু ঠিক আছে। বাকি কোথাও তাকিয়ে দেখার জো নেই।
এক পাশের গ্যালারির চেয়ার ভাঙাচোরা বলে জিম্বাবুয়ে সিরিজের আগেই তুলে ফেলা হয়েছিল। সেটির কঙ্কাল দৃশ্যমান এখনও। বাকি অংশগুলোর অনেকটুকু জুড়ে কোথাও চেয়ার আছে, কোথাও নেই। মাঝেমধ্যেই চেয়ার ভাঙা। শ্যাওলা পড়তে পড়তে গ্যালারি আর সিড়ি কালচে হয়ে গেছে প্রায় সব জায়গাতেই। দেয়ালে দেয়ালে খসে পড়া পলেস্তারা।
“সমস্ত কিছুর ছবি তুলে ও লিখে বিসিবি ও এনএসসিকে পাঠিয়েছি। বিসিবিও এনএসসিকে বলেছে বারবার। এনএসসির প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার চার বার পরিদর্শন করে গেছেন। পরে আবার কালবৈশাখী হওয়ার পর আরেক দফা তালিকা করে নিয়ে গেছে। সচিব মহোদয় এসে স্বচক্ষে দেখে গেছেন। মন্ত্রীমহোদয় এসেছিলেন খুলনায়, আমরা কথা বলেছি। কিন্তু কাজ হয়নি।”
কবে নাগাদ সারতে পারে এসব? অসহায় শোনাল ভেন্যু ম্যানেজারের কণ্ঠ, “দেড় বছর ধরে এসব নিয়েই তো চলছি… এভাবেই হয়ত চলতে হবে!”