দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর মিছিলে এক দিনে যোগ হল ২৬১ জন, যা দৈনিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা কমে যাওয়ার সঙ্গে রোগী শনাক্তের সংখ্যা কমে গেছে অনেক।
Published : 07 Aug 2021, 06:39 PM
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় যে ২৬১ কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যুর খবর দিয়েছে, তাদের নিয়ে দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ২২ হাজার ৪১১।
গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যুর পর গত বৃহস্পতিবার দিনে রেকর্ড সংখ্যক ২৬৪ জনের মৃত্যুর খবর এসেছিল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ২৪ ঘণ্টায় ৮ হাজার ১৩৬ জন রোগী শনাক্তের খবর দিয়েছে। তাদের নিয়ে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৩ লাখ ৪৩ হাজার ৩৯৬।
একদিন আগেও ১২ হাজার ৬০৬ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। তার আগের কয়েক দিনেও সংখ্যাটি ১০ হাজারের উপরেই ঘোরাফেরা করছিল।
তবে শুক্রবার যেখানে ৪৮ হাজার নমুনা পরীক্ষার খবর এসেছিল, শনিবার তা নেমে এসেছে ৩১ হাজার ৭১৪ এ।
তবে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার কমে শনিবার দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৬৫ শতাংশে। এই হার আগের দিন ছিল ২৬ দশমিক ২৫।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপটে তার আগে কয়েকদিন ধরে আগে দৈনিক সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশের বেশি ছিল।
সরকারি হিসাবে এই সময়ে সেরে উঠেছেন ১৬ হাজার ৩৮৩ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত সুস্থের সংখ্যা দাঁড়াল ১১ লাখ ৮৮ হাজার ৮২০।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এই মুহূর্তে সক্রিয় কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ১ লাথ ৩২ হাজার জন।
লাখের উপর রোগী নিয়ে হাসপাতালগুলো বেসামাল অবস্থায় রয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক শনিবারই সাংবাদিকদের বলেছেন, এখন রোগীর সংখ্যা কমানোর বিকল্প নেই।
সংক্রমণের গতি আটকাতে এদিনই ইউনিয়ন পর্যায়েও গণটিকাদান শুরু করেছে সরকার। বিশেষ এই কর্মসূচিতে ছয় দিনে ৩২ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে দেশে নমুনা পরীক্ষা ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ বেড়েছে, তবে রোগী শনাক্তের হার ২ দশমিক ৩২ শতাংশ কমেছে।
বাংলাদেশে এক সপ্তাহে মৃত্যুর সংখ্যা ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ বাড়লেও সুস্থতার হারও ২৩ শতাংশ বেড়েছে।
বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪২ লাখ ৮০ হাজার ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ২০ কোটি ২০ লাখের বেশি রোগী।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছরের ৮ মার্চ। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারে গত জুন থেকে রোগীর সংখ্যা হু হু করে বেড়ে ১৩ লাখ পেরিয়ে যায় গত ৪ অগাস্ট। এর মধ্যে ২৮ জুলাই দেশে দিনে রেকর্ড সংখ্যক ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।
গত এক দিনে শুধু ঢাকা বিভাগেই ৩ হাজার ৯৭৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যা মোট সংক্রমণের প্রায় অর্ধেক।
এই সময়ে যে ২৬১ জন মারা গেছে, তাদের ১০১ জনই ঢাকা বিভাগের। চট্টগ্রাম বিভাগে ৬২ জন এবং খুলনা বিভাগে ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত এক দিনে ঢাকা জেলায় দেশের সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬৬৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিভাগের ফরিদপুরে ২১৪ জন, গোপালগঞ্জে ১১৪ জন, কিশোরগঞ্জে ১২৮ জন, মানিকগঞ্জে ১২৩ জন, নারায়ণগঞ্জে ১৩২ জন এবং শরীয়তপুরে ২১৩ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৯২৮ জন, কক্সবাজারে ১১৬ জন, নোয়াখালীতে ১৬৪ জন, লক্ষ্মীপুরে ১১৬ জন, চাঁদপুরে ২৬০ জন, কুমিল্লায় ৫৬৩ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৬৬ জন আক্রান্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।
অন্য বিভাগগুলোর বিভিন্ন জেলার মধ্যে যশোরে ১১৫ জন, ময়মনসিংহে ১৩৭ জন, ভোলায় ১০৮ জন এবং সিলেটে ১৮২ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
ঢাকা বিভাগে গত এক দিনে যে ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ৫১ জনই ছিলেন ঢাকা জেলার। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া ৬২ জন জনের মধ্যে ২৪ জন কুমিল্লার, ১১ জন চাঁদপুরের এবং ৯ জন চট্টগ্রাম জেলার বাসিন্দা ছিলেন।
এছাড়া খুলনা বিভাগে ৪৫ জন, রাজশাহী বিভাগে ৮ জন, বরিশাল বিভাগে ১২ জন, সিলেট বিভাগে ৭ জন, রংপুর বিভাগে ১০ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে গত এক দিনে।
মৃত ২৬১ জনের মধ্যে ১৪৫ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ৬৪ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ২৮ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১৫ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং ৮ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল।
মৃতদের মধ্যে ১৫২ জন ছিল পুরুষ, ১০৯ জন নারী। ১৮৫ জন সরকারি হাসপাতালে, ৭২ জন বেসরকারি হাসপাতালে, ৩ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় এবং ১ জনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়।